• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

বাসযোগ্য ঝিনাইদহ গড়তে চান ডিসি মজিবর রহমান

  • দেলোয়ার কবীর, ঝিনাইদহ
  • প্রকাশিত ১৮ এপ্রিল ২০২১

ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান অগ্রাধিকারভিত্তিতে জেলার নদী ও খাল দখলমুক্তকরণ, আত্মহত্যার হার কমানো, আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়ন, বিনোদন ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে সমৃদ্ধকরণ এবং অন্যান্য সামাজিক বিষয়ে নজর দিচ্ছেন। এতে একসময়ের অপরাধপ্রবণ ও আত্মহত্যার ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত জেলা ঝিনাইদহকে সুন্দর, জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ ও বাসযোগ্য একটি আধুনিক এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা যায়। নবাগত এ জেলা প্রশাসক এজন্য সব মহলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেছেন। বাংলাদেশের খবর-র ঝিনাইদহ প্রতিনিধিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি জানান, ঐতিহ্যগতভাবে মরমীকবি পাগলাকানাই, ফকির লালনশাহ, বিপ্লবী বাঘাযতিন, গণিতবিদ কেপি বসু, কবি গোলাম মোস্তফা, ধান-পানের সমাহার আর ঝিনুকের জেলা বলে খ্যাত ঝিনাইদহের মানুষ অত্যন্ত সৎ, মেধাবী, সাহসী আর আবেগী। মাতৃভাষার জন্য বাহান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের রনাঙ্গণে ঝিনাইদহের মানুষের ত্যাগ আর অবদানের জন্য জেলাবাসী গর্ব করতে পারেন। দেশে এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্তরে জেলার মানুষের সরব উপস্থিতি ও কর্মকাণ্ড বিশ্ববাসীকে নাড়া দেয়, উদ্বুদ্ধ করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে। কিন্তু কতিপয় স্বার্থান্বেষী মানুষের লোভ-লালসার কারণে অনেক অর্জনই কলঙ্কিত হয়।

জেলা সদর, শৈলকুপা, কালিগঞ্জ ও সীমান্তবর্তী মহেশপুর উপজেলার কিছু মানুষের কারণে অধিকাংশ নদী ও খাল ভরাট হয়ে গেছে। নদীর নাব্য কমে যাওয়ায় একদিকে যেমন নৌচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে, নদীর মতো প্রাকৃতিক জলাধারে মাছচাষ সম্প্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্রসারণ হচ্ছে না, হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য আর নদীগুলো মরাখালে পরিণত হয়েছে। অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে পরিচালিত অভিযান গতবছর বৈশ্বিক শত্রু করোনাভাইরাসের কারণে স্থগিত হলেও আবার তা নতুন করে শুরু হয়েছে। এসব লোভী মানুষের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া বাদেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এ ব্যাপারে জেলার সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে । পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পনি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় নির্বাহী প্রকৌশলী এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকেও এ ব্যাপারে অবহিত করানো হচ্ছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।

জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো হলেও এখনো জেলার বিভিন্ন উপজেলায়, বিশেষ করে শৈলকুপার দিকে নজর দেওয়া দরকার। কারণে, অকারণে ও তুচ্ছ বিষয় নিয়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বা সশস্ত্র সংঘর্ষে প্রাণহানির মতো ঘটনা রোধে সংঘর্ষে ব্যবহূত ঢাল, ফালা, সড়কি, বল্লম ইত্যাদি ব্যবহার বন্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এসবের ব্যবহারকারী, প্রস্তুতকারী ও মদদদাতাদের চিহ্নিত করতে সরকারি সংস্থার পাশাপাশি নির্বাচিত স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা নিতে হবে। জেলা পুলিশের ভূমিকা এ ব্যাপারে খুবই গুরত্বপূর্ণ বলে মনে করেন মজিবর রহমান।

নিজের জীবনকে নিজেই হত্যার মতো একটি কঠিন ও গর্হিত কাজ ঝিনাইদহে ঘটে থাকে আহরহ। নয় মাসের সুকঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ স্বাধীনতাযুদ্ধের ভেতর দিয়ে লাখো প্র্রাণ আর সম্ভ্রমের বিনিময়ে পাওয়া এ দেশটিকে অনেক দেশের মানুষই আত্মহননকারী দেশ বলে জানে যা শুধু জেলাবাসীই নয়, সমগ্র দেশবাসীর জন্য অসম্মানকর। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে ব্যাপক সচেতনা চালানো, বিশেষ করে স্কুল-কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সাথে মতবিনিময় এবং আত্মহত্যা করতে উদ্যত বা প্ররোচনাকারীদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ এজন্য বেশ জরুরি।

জেলা শহরে ‘ইজিবাইক’ বলে সমধিক পরিচিত তিনচাকার অবৈধ ‘আনইজি’ বাহন চলাচল নিয়ন্ত্রিত ও মহাসড়কে ওসবের চলাচল বন্ধে জেলা পুলিশ সুপারের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। অচিরেই পুলিশ সুপার, পৌর মেয়র, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এবং ওইসব কথিত বাহনের মালিক-নেতাদের সাথে আলোচনা করে মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত্ত নেওয়া হবে।

কবি ও গুণীজনের জেলা বলে পরিচিত ঝিনাইদহের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করতে নেতৃস্থানীয় সব সাংস্কৃতিক সংগঠনকে একছাতার নিচে আনা হয়েছে, তাদের মধ্যে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করতে কাজ করা হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যে জেলার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিকপাড়া আবার মুখরিত হয়ে উঠবে সম্মিলিত পদচারণায়, আশাবাদ ব্যক্ত করেন জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান। 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads