• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

ক্রিকেট

কিশোরকে পেটানোর খেসারত

কঠিন শাস্তিতে বছর শুরু সাব্বিরের

জরিমানা করা হলো তামিমকেও

  • ক্রীড়া প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০১ জানুয়ারি ২০১৮

মাঠের বাইরে অখেলোয়াড়সুলভ আচরণ আগেও করেছেন।  বিসিবি সতর্ক করেছে।  ২০১৬ সালে ১২ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছিল তাকে।  তবে অতীত কর্মকাণ্ড থেকে তেমন শিক্ষাই হয়তো নেন না সাব্বির রহমান রুম্মন।  ফলে পড়তে হলো কঠিন শাস্তির মুখে।  কিছুদিন আগে জাতীয় ক্রিকেট লিগে এক কিশোরকে পেটানোর অভিযোগে সাব্বির রহমান কিছুদিন ধরেই ছিলেন বিসিবির কাঠগড়ায়।  গতকাল তার ফয়সালাও হয়ে গেল।  যেখানে সাব্বিরের উপরে নেমে এসেছে ভয়াবহ শাস্তি।  বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে।  সঙ্গে জরিমানা ২০ লাখ টাকা।  এখানেই থামছে না শাস্তির খড়গ।  ছয় মাসের জন্য তিনি নিষিদ্ধ ঘরোয়া ক্রিকেটে।  কঠিন শাস্তিতেই নতুন বছর শুরু হলো সাব্বিরের।  
গতকাল ধানমন্ডির বেক্সিমকো ভবনে গণমাধ্যমের সামনে এমন তথ্যই জানান বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। সাব্বির ইস্যুর পাশাপাশি এদিন আলোচিত ছিলেন জাতীয় দলের আরেক হার্ড হিটার ওপেনার তামিম ইকবাল। তাকেও জরিমানা করা হয়েছে ৫ লাখ টাকা। তবে তার শাস্তির হেতুটা ভিন্ন। গত বিপিএলে কিউরেটরের সমালোচনা করার কারণেই তামিমের এমন শাস্তি।
তামিমের কাণ্ড ঢাকায় হলেও সাব্বিরের ভেন্যু ছিল রাজশাহীতে। ওয়ালটন ১৯তম জাতীয় ক্রিকেট লিগের শেষ রাউন্ডের খেলা হয়েছিল রাজশাহীর শহীদ কামরুজ্জামান স্টেডিয়ামে।  ২০ ডিসেম্বর সেখানে চারদিনের খেলা শুরু হয়।  পরদিন দ্বিতীয় দিনে মধ্যাহ্ন বিরতির পর ইনিংস বিরতির সময় মাঠের সাইট স্ক্রিনের পেছনে এক কিশোরকে পেটান সাব্বির রহমান। কিশোরের দোষ ছিল, মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার সময় ড্রেসিং রুমের কাছের গ্যালারি থেকে সাব্বিরকে ‘বিড়াল’ এবং ‘মিয়াও’ বলে ডাক দেন। ধূসর চোখের কারণে সাব্বিরকে ‘বিড়াল’ বলে সম্বোধন করেছিল সে। পরবর্তীতে স্থানীয় পরিচিতদের দিয়ে ওই কিশোরকে ডেকে আনেন সাব্বির। পরবর্তীতে ওই কিশোরকে পেটান জাতীয় দলের এ ক্রিকেটার। শুধু তাই নয় পরে ম্যাচ অফিসিয়ালদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করেন তিনি। ফলে ম্যাচ রেফারির রিপোর্টের ভিত্তিতে বিষয়টি তদন্ত করা হয় এবং তদন্তে সাব্বির রহমানকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
এমন কাণ্ড সাব্বিরের জন্য নতুন নয়। এর আগে মাঠেই আম্পায়ারকে গালি দিয়ে মোটা অংকের জরিমানা গুণেছিলেন তিনি। আরও বেশকিছু নেতিবাচক ঘটনার জন্ম দিয়েছিলেন তিনি আগে। সর্বশেষ কিশোর পেটানোর ঘটনার পর ক্ষমা নাকি চেয়েছিলেন সাব্বির। কিন্তু শুধু কথায় চিড়ে ভিজল না। পেতে হলো কঠিন শাস্তিই।
তবে ভবিষ্যতের জন্যও সাব্বিরকে চূড়ান্তভাবে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। যেখানে বিসিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটাই সাব্বিরের জন্য শেষ সুযোগ। ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ করলে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করা হতে পারে। শৃঙ্খলা কমিটির এসব সুপারিশ মিডিয়ার মাধ্যমে সবাইকে সভাপতি জানালেও তা পাশ হবে বিসিবির আগামী কার্যনির্বাহী কমিটির সভায়।
ঘরোয়া ক্রিকেটে আগামী ছয় মাস নিষিদ্ধ হওয়ার অর্থ, সাব্বির বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ এবং ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলতে পারছেন না। তবে, জাতীয় দলের হয়ে খেলতে কোনো বাধা নেই তার। নিষেধাজ্ঞা শুধুই ঘরোয়া ক্রিকেটের ক্ষেত্রে। আসন্ন ত্রিদেশীয় সিরিজ কিংবা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোম সিরিজে খেলতে পারবেন সাব্বির। কিন্তু এত শাস্তি যার মাথার উপর, তার স্কোয়াডে থাকাটা ধোঁয়াশার মধ্যেই আচ্ছন্ন।
বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান শেখ সোহেল বলেন, ‘অতীতের শাস্তির অভিজ্ঞতা থেকে সে কোন শিক্ষা নেয়নি। ফলে এবার তাকে কঠিন শাস্তিই দেওয়া হলো। সে কেন্দ্রীয় চুক্তির বাইরে এখন। যা তার জন্য বড় ধাক্কাই। সঙ্গে ২০ লাখ টাকা জরিমানা। তবে এটাই শেষ সুযোগ তার জন্য। ভবিষ্যতে এমন করলে আজীবন নিষেধাজ্ঞার খড়গে পড়তে হবে তাকে।
অন্যদিকে তামিম ইকবালের ঘটনা গত বিপিএলের সময়। গেল আসরে কয়েকটি ম্যাচে হয়েছিল লো স্কোরিং ম্যাচ। ফলে অনেকেই আঙুল তুলেছিলেন বাজে পিচের দিকে। সমালোচনা করেছিলেন তীর্যক কথার বাণে। সেই তালিকায় ছিলেন তামিম ইকবাল ও মাশরাফি বিন মর্তুজাও। মাশরাফি পার পেয়ে গেলে পিচকে জঘন্য বলায় জরিমানা গুণতে হলো তামিমকে।
গত ২ ডিসেম্বর রংপুর রাইডার্স ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ম্যাচে অসমান বাউন্সের জন্য মিরপুরের উইকেটের সমালোচনা করেছিলেন দুই দলের অধিনায়কই। রংপুরের অধিনায়ক মাশরাফির সুরে ঝাঁঝ না থাকলেও তামিমের কন্ঠে ছিল কড়া সমালোচনা। উইকেটকে ‘জঘন্য’ বলতেও দ্বিধা করেননি দেশসেরা ওপেনার।
মিরপুরের উইকেট নিয়ে ‘বাজে ভাষায়’ মন্তব্য করায় তামিম ইকবালকে শোকজ করেছিল বিসিবি। ১৪ ডিসেম্বর শৃঙ্খলা কমিটির মুখোমুখি হন তামিম। শুনানিতে তামিমের উপলব্ধি, আরেকটু মার্জিত শব্দ ব্যবহার করা উচিত ছিল তার। এজন্য দুঃখ প্রকাশ করতেও দ্বিধা করেননি তিনি। শৃঙ্খলা কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে তামিমকে জরিমানা করা হয়েছে। তবে শুনানিতে তামিমের বক্তব্য নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন বিসিবির পরিচালক ও কর্মকর্তারা।
শুনানি থেকে বের হয়ে মিরপুরে সেদিন তামিম বলেন, ‘আমার হয়তো বা আরেকটু ভালো শব্দ ব্যবহার করা উচিত ছিল। ভবিষ্যতে আমি আরেকটু সতর্ক থাকব। তারাও এটা ভালোভাবে নিয়েছেন। উইকেট ভালো না হলে বলতে পারব না যে, তা না। অবশ্যই বলতে পারব। আমি জিনিসটা আরো সুন্দরভাবে বলতে পারতাম।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads