• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
বেতন নিয়ে ভাবছেন না বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটাররা

পাকিস্তানের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটার

বিবিসি

ক্রিকেট

বেতন নিয়ে ভাবছেন না বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটাররা

  • স্পোর্টস ডেস্ক
  • প্রকাশিত ১৩ জুন ২০১৮

বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দল এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর জোরালোভাবে আলোচনায় এসেছে নারী ও পুরুষ ক্রিকেটারদের বেতন-ভাতার বৈষম্য। আগেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি।

এশিয়া কাপ জয়ের পর নারী ক্রিকেট দলকে ২ কোটি টাকা পুরষ্কার ও প্রত্যেক ক্রিকেটারকে ১০ লাখ টাকা করে আর্থিক পুরষ্কার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। 

বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাথে চুক্তিবদ্ধ নারী ক্রিকেটারের সংখ্যা ১৭ জন। তাদের বেতন সর্বনিম্ন ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা। ছেলেদের ক্রিকেটে সর্বনিম্ন বেতন লাখের কাছাকাছি। ছেলেদের জাতীয় লীগে প্রথম স্তরে ম্যাচ ফি ২৫ হাজার টাকা, দ্বিতীয় স্তরে ২০ হাজার। বিসিএলে ম্যাচ ফি ৫০ হাজার টাকা।

মেয়েদের জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচ ফি ৬০০ টাকা মাত্র। যদিও পরবর্তীতে ম্যাচ ফি ৪'শ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। 

নারী ক্রিকেটাররা কী আশা করছেন?

এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারের পর সবগুলো ম্যাচে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ফাইনালে ভারতকে হারানোর আগে গ্রুপ পর্বেও ভারতকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ফাইনাল ম্যাচে শেষভাগে জয়ের ক্ষেত্রে স্নায়ুচাপ সামলে বড় ভূমিকা রেখেছেন জাহানারা আলম। তাই তার কাছে এই জয় বিশেষ কিছু।

বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দলের সাবেক এই অধিনায়ক মনে করেন, নারী ক্রিকেট দল তাদের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে জয় পেয়েছে। এখানে কোনো ছাড় দেয়া হয়নি।

তিনি বলেন, ২০১০ এশিয়াডে গুয়াংজুতে যখন আমরা সিলভার মেডেল পেলাম তখন থেকেই এই প্রত্যয় তৈরি হয় যে আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পারবো।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পুরষ্কার ঘোষণায় কতটা সন্তুষ্ট হতে পেরেছেন? বিবিসির এই প্রশ্নের জাববে  জাহানারা আলম বলেন, ‘দেখুন, এখানে খুশি বা অখুশি হবার কিছু নেই। আমরা আমাদের কাজটা ঠিকভাবে করেছি। এটা আমাদের দায়িত্ব ছিল। যেটা আমরা বহুদিন করে আসতে পারিনি। আমাদের ভালো ফলাফল দিয়ে বাংলাদেশের মানুষদের খুশি করতে পেরেছি এটাই বড় ব্যাপার, এখন বোর্ড যা-ই করবে সেটা বোনাস।’

বেতনের ব্যাপারটাও বোর্ডের ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। তার মতে, এটা ভাবার জন্য বোর্ডের কর্মকর্তারা আছেন। এটা নিয়ে মাথা ঘামালে ক্রিকেট খেলায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

সালমা খাতুন ২ বছর পর অধিনায়কত্ব পেয়েই বাংলাদেশের ক্রিকেটে প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা পেয়েছেন। বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের পরিচিত এই মুখ বলেন, ‘আগে কিংবা পরে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটে যে সাহায্য ছিল না তেমন নয়, হয়তো একটু কম ছিল।’

এই জয়টাকে একটা মঞ্চ মনে করেন সালমা খাতুন। তার মতে, আকরাম খান বা খালেদ মাহমুদ সুজনরা যখন খেলেছেন তখন বর্তমান পুরুষ দলের মতো সুবিধা পাননি। এখন যে নারী দল খেলছে তারা সেই মঞ্চ তৈরি করে দিবেন, যাতে ভবিষ্যৎ নারী ক্রিকেটাররা আরো ভাল সুযোগ সুবিধা পান।

ফাইনালে ভারত ও গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভাল ব্যাট করেন নিগার সুলতানা জ্যোতি। বাংলাদেশের শেরপুর জেলা থেকে উঠে আসা এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান বলেন, মেয়েদের ক্রিকেট ছেলেদের থেকে একটু অবহেলিত। মিডিয়ার ফোকাসটা নেই। অনেক খেলা সরাসরি দেখানো হয়না, তার মধ্যেও এই জয়টা অনেক বড় বার্তা দেবে।

খুব রাতারাতি পরিবর্তনের আশা করছেন না জ্যোতি। তবে তার বিশ্বাস, এই জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলেই গুরুত্ব অর্জন করা সম্ভব হবে।

বিসিবি কী বলছে?

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের মতে, নারী ক্রিকেটারদের এশিয়া কাপ জয় শুধু ক্রিকেট নয়, বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসেই এটা সবচেয়ে বড় অর্জন। তার মতে, এই সাফল্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের লম্বা পরিবর্তনের ফসল।

তিনি বলেন, ‘নারীদের ক্রিকেট নিয়ে একটু হতাশ ছিলাম, কিন্তু তাই বলে এমন না যে বোর্ড কিছু করেনি। ৩ বছর ধরে প্রস্তুতি চলছে, আমরা মেয়েদের বেলাতেও বিদেশী কোচ এনে দিয়েছি। ভারতের মেয়েদের দলের হেড কোচকে আমাদের হেড কোচ করেছি। ফিজিও এনে দিয়েছি। তাই বোর্ড কিছু করেনি, এমনটা মনে হলে সেটা ভুল।’

তিনি ভারতের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ভারত প্রচুর বিনিয়োগ করেছে যার ফলাফল তারা বিশ্বকাপের রানার্স আপ ও এশিয়া কাপে ছয় বারের চ্যাম্পিয়ন। তাদের হারানোটা অনেক বড় ব্যাপার। মেয়েদের আর্থিক অবস্থার সাথে ছেলেদের আর্থিক অবস্থা তুলনা করা কঠিন হবে বলে মনে করেন বিসিবি প্রধান।

তিনি বলেন, ‘অনেক মেয়েই নতুন খেলা শুরু করেছে, তাদের সাথে ছেলেদের মূল দলের তুলনা দেয়া অনেক কঠিন। যেমন তুষার ইমরান এত বছর ধরে খেলছে তার বেতন গত সপ্তাহ পর্যন্ত ছিল ২২ হাজার টাকা। তবে তামিম, সাকিব, মুশফিক, রিয়াদ ওদের সাথে তুলনা করাটা চলে না।’

তবে মেয়েদের সাফল্যের ফলে আরো বেশি মেয়ে ক্রিকেট খেলায় আগ্রহী হবে বলে মনে করেন তিনি। এক বা দুদিনের মধ্যে মেয়েদের সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর ব্যাপারে ঘোষণা আসবে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads