• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
স্বপ্নের সিরিজ জয়

বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের উল্লাস

সংগৃহীত ছবি

ক্রিকেট

স্বপ্নের সিরিজ জয়

  • মাহমুদুন্নবী চঞ্চল
  • প্রকাশিত ০৭ আগস্ট ২০১৮

ওয়ানডেতে যতটা দুর্দান্ত, টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে যেন ততটাই ধূসর। এই দুই ফরম্যাটে জয় আসে কালেভদ্রে। সিরিজ জয়ের সুখস্মৃতিও যেন দূর অতীতের গল্প। তবে ফ্লোরিডার লুডেরহিল স্টেডিয়ামে যেন নতুন করে কেতন উড়ল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের। প্রবল গর্জনে সাকিবরা জানিয়ে দিলেন, ২০ ওভারের এই ফরম্যাটেও বাংলাদেশ এখন হেলাফেলা নয়। বরং যেকোনো দলের জন্য আতঙ্কজাগানিয়া।

টাইগারদের এমন প্রবল অহংবোধ টি-টোয়েন্টি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধরাশায়ী করার পর। তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশ জিতেছে ১৯ রানে। সেই সঙ্গে ২-১ ব্যবধানে সিরিজও। শুধুই একটি সিরিজ জয়, নাকি দীর্ঘ অপেক্ষার পর নতুন ভোরের সন্ধান। প্রায় এক যুগ ধরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলা বাংলাদেশের এটি দ্বিতীয় কোনো সিরিজ জয়ের ঘটনা। প্রথম সিরিজ জয় আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে, ২০১২ সালে (৩-০)। তবে ফ্লোরিডায় এই সিরিজ জয়ের মাহাত্ম্য অনেক। কারণ এটি টেস্ট খেলুড়ে কোনো দেশের বিরুদ্ধে প্রথম সিরিজ জয় বাংলাদেশের। যেন পূরণ হলো দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন।

অথচ ক্যারিবীয় সফরটা বাংলাদেশের শুরু হয়েছিল কি ম্যাড়মেড়ে আর লজ্জার রেকর্ডে। দুই টেস্ট ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ। তবে চেনা ফরম্যাটের ওয়ানডে সিরিজ জিতে নতুন মন্ত্রে উজ্জীবিত টাইগাররা। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের শুরুটা যদিও সেন্ট কিটসে হার দিয়ে। তবে মার্কিন মুলুকের বাকি দুটি ম্যাচ চিত্র পাল্টে দিল ভোজবাজির মতো। যেখানে দেখা মিলল দুরন্ত টাইগারদের। টানা দুটি ম্যাচেই প্রবল আধিপত্য দেখানো গর্বের জয়।

সিরিজ সমতার পর তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ছিল অলিখিত ফাইনাল। জিততে মরিয়া দুই দলই। টস জিতে বাংলাদেশের শুরুটা হলো ঝড়ো গতিতে। শেষ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের রেকর্ড সংগ্রহ, ১৮৪/৫। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৭.১ ওভারে ৭ উইকেটে ১৩৫ রান তোলার পর লুডেরহিলের আকাশে মুষলধারে বৃষ্টি। পরে মাঠে গড়ায়নি একটি বলও। হিসাব-নিকাশ হলো বৃষ্টি আইনে। ১৯ রানের জয় বাংলাদেশের। ম্যাচসেরা লিটন দাস। যিনি খেলেছেন ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। ব্যাট হাতে কচুকাটা করেছেন ক্যারিবীয় বোলারদের। ৩২ বলে ৬১ রান। স্ট্রাইক প্রায় ২০০। ৬ চার ও ৩ ছক্কা। লিটনের বিধ্বংসী রূপে মুগ্ধ ফ্লোরিডা আগত প্রবাসী বাঙালিরা।

দ্বিতীয় ম্যাচে ঝড় তোলা তামিম এদিন করতে পেরেছেন ১৩ বলে ২১। সাকিব ছিলেন ওয়ানডে মেজাজে, ২২ বলে ২৪। ব্যর্থতার বৃত্তে সৌম্য (৫)। তবে ২০ বলে ৩২ করে স্কোরটাকে সমৃদ্ধ করেছেন অপরাজিত থাকা মাহমুদউল্লাহ। ১৮ রানে আরেক অপরাজিত ব্যাটসম্যান আরিফুল হক। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে যা আতঙ্ক ছড়িয়েছেন শুধু আন্দ্রে রাসেলই। তাকে ফিরিয়ে উৎসবের আমেজ তোলেন মোস্তাফিজ। রাসেলের ২১ বলে ৪৭ রানের ইনিংসে ছয়টি ছক্কা ও একটি চার বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিল সাকিবদের। এরপর বৃষ্টি, তারপর স্বস্তি, উৎসব সিরিজ জয়ের।

৩১ রানে সর্বোচ্চ তিন উইকেট নেওয়া মোস্তাফিজ ছাড়িয়ে গেছেন মাশরাফিকে। টি-টোয়েন্টিতে ৫৪ ম্যাচে ৪২ উইকেট মাশরাফির। ২৭ ম্যাচে ৪৩ উইকেট মোস্তাফিজের। ৬৯ ম্যাচে ৮০ উইকেট নিয়ে শীর্ষে সাকিব। ব্যাট ও বলের দারুণ সমন্বয়ে সিরিজ সেরার পুরস্কার সাকিবের থলেতে। ব্যাট হাতে ১০৩ রান, উইকেট ৪টি, নিখাদ অলরাউন্ডার বলে কথা।

সিরিজ জয়ে রোমাঞ্চিত সাকিব। সতীর্থদের প্রতি তার মুগ্ধতা ছিল এমন, ‘প্রথম ম্যাচে হারার পর আমরা দারুণ দৃঢ়তা দেখিয়েছি। ছেলেদের এই প্রচেষ্টা ছিল অবিশ্বাস্য। যারা খেলেনি তাদেরও যথেষ্ট অবদান আছে। যেভাবে পেরেছে সহায়তার চেষ্টা করেছে। এর চেয়ে বেশি কিছু আমি ছেলেদের কাছ থেকে চাইতে পারতাম না।’ সাফল্যের ভাগীদার হিসেবে ফ্লোরিডার দর্শকদেরও ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। যারা গলা ফাটিয়ে সমর্থন দিয়ে গেছেন সাকিবদের।

দেরাদুনে আফগানদের কাছে ৩-০ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টিতে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল বাংলাদেশ। সেই জ্বালা সাকিবরা জুড়াল ক্যারিবীয়দের বধ করে। বৃহস্পতিবার দেশে ফিরবে বাংলাদেশ দল। টাইগারদের মিশন এবার এশিয়া কাপ ক্রিকেট, যা শুরু হবে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে দুবাইয়ে। এশিয়া কাপে টাইগারদের স্বপ্নটা দিগন্ত ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কারণ ফরম্যাটটি যে ওয়ানডে। আর অধিনায়ক? মাশরাফি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads