• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
এবারো কি দূরের বাতিঘর

এশিয়া কাপ ক্রিকেট ২০১৮ এর লোগো

ছবি : ইন্টারনেট

ক্রিকেট

এবারো কি দূরের বাতিঘর

  • মাহমুদুন্নবী চঞ্চল
  • প্রকাশিত ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের কথা বাদই থাক। মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে শিরোপা জয় যেন এখনো দূরের বাতিঘর। আরো পরিষ্কার করে বললে, ত্রিদেশীয় সিরিজের ট্রফিটাই এখন পর্যন্ত করায়ত্ত করতে পারেনি বাংলাদেশ। ফাইনাল যে খেলা হয়নি, তা নয়। কিন্তু প্রতিবারই ফিরতে হয়েছে রিক্ত হাতে, অশ্রু ঝরিয়ে। সবশেষ নিদাহাস ট্রফির কথাই ধরুন। ফরম্যাটটি টি-টোয়েন্টি হলেও বাংলাদেশ স্বীয় যোগ্যতায় উঠে গিয়েছিল ফাইনালে। যেখানে শিরোপাটা ছিল নিঃশ্বাস দূরত্বে। কিন্তু শেষ ওভারে ভারতের দিনেশ কার্তিকের ব্যাটে যেন ভর করল দানবীয় শক্তি। চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছুটিয়ে বাংলাদেশের হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচটি মুহূর্তেই ছিনিয়ে নিল ভারত। সঙ্গে শিরোপাও। টাইগার শিবিরের আফসোস-আহাজারি ভারী করে তুলল কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম।

ত্রিদেশীয় কিংবা বহুজাতিক টুর্নামেন্টের ফাইনালে এমন হূদয়বিদারক দৃশ্য অনেক আছে বাংলাদেশের। বার বার যেখানে দীর্ঘ নিঃশ্বাসই সম্বল। চুমু আঁকা হয়নি কাঙ্ক্ষিত ট্রফিতে। সময়ের পালাবদলে আবারো সামনে আরো একটি টুর্নামেন্ট, দুয়ারে এশিয়া কাপ ক্রিকেট। যার পর্দা উঠবে আরব আমিরাতে, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে। উদ্বোধনী ম্যাচেই বাংলাদেশ খেলবে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে। সেই সঙ্গে বঙ্গদেশে শুরু হবে ক্রিকেট উত্তেজনা। চলবে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এশিয়া কাপে এবার কেমন করবে বাংলাদেশ? কোটি টাকার প্রশ্ন। দেশ ছাড়ার আগে মাশরাফি ব্রিগেড ছিল আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর। শিরোপা জেতার প্রত্যয় ছিল সবার চোখেমুখে।

২০১৬ সালের এশিয়া কাপ হয়েছিল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। এবার পুরনো ধারায় ফিরে গেছে সব। মানে ওয়ানডে ফরম্যাটে হবে ২২ গজের লড়াই। দুবাই-আবুধাবিতে অনুষ্ঠেয় এই টুর্নামেন্টের ফরম্যাটটিও কিছুটা ভিন্ন। দুই গ্রুপে তিনটি করে দল লড়বে প্রাথমিক রাউন্ডে। এই গ্রুপ উতরে সুপার ফোর রাউন্ডে খেলবে দুই গ্রুপের সেরা দুটি করে চারটি দল। এই গ্রুপে চারটি দলই খেলবে একে অপরের সঙ্গে। পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে থাকা দুটি দল খেলবে শিরোপা নির্ধারণী ফাইনাল।

তার মানে প্রত্যেক দলের প্রথম লক্ষ্য গ্রুপ পর্বের বৈতরণী পার হয়ে সুপার ফোরে নাম লেখানো। তারপর শিরোপার চিন্তা। দুই গ্রুপে তুলনামূলক কঠিন গ্রুপে পড়েছে বাংলাদেশ। যেখানে বাকি দুটি দল শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। এ গ্রুপে রয়েছে পাকিস্তান ও ভারত। সঙ্গে বাছাইপর্ব খেলে আসা অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল হংকং। অনুমিতভাবে এ-গ্রুপ থেকে পাক-ভারত উঠে আসবে পরের রাউন্ডে। তা বলাই যায়। তবে বি-গ্রুপের হিসাব-নিকাশটা জটিল। কারণ বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান প্রায় সমশক্তির দল। নির্দিষ্ট দিনে যারাই ব্যাটে-বলে আগুন জ্বালাতে পারবে, টিকেট মিলবে পরের রাউন্ডের। সব মিলিয়ে ডিফেন্ডিং রানার্সআপ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জের এই গ্রুপটি। তবে ফরম্যাটটি ওয়ানডে বলেই বাড়তি আত্মবিশ্বাস ভর করছে টাইগার শিবিরে। প্রেরণা জোগাচ্ছে কিছুদিন আগে ক্যারিবীয় সফর। যেখানে দাপট দেখিয়ে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে সিরিজ জিতে এসেছিল বাংলাদেশ।

নিদাহাস টুর্নামেন্টে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে সেটি ছিল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট। ওয়ানডের হিসাবে শ্রীলঙ্কার পরিসংখ্যানটা বেশ পোক্ত। ৪৪ বারের মোকাবেলায় এই লঙ্কানদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জয় মাত্র ৬টিতে। হার ৩৬টিতে। ম্যাচ পরিত্যক্ত দুটি। চলতি বছরের শুরুতে ঘরের মাঠে ত্রিদেশীয় সিরিজে শ্রীলঙ্কাকে ১৬৩ রানে পরাজয়ের স্মৃৃতি উজ্জ্বল বাংলাদেশের। তবে একই সিরিজে শ্রীলঙ্কার কাছে ১০ উইকেটে ও ফাইনালে ৭৯ রানে হেরে যাওয়ার তিক্ত স্মৃতিও রয়েছে মাশরাফিদের।

আফগানিস্তানের সঙ্গে ওয়ানডে ম্যাচে পাঁচবারের মোকাবেলায় বাংলাদেশের জয় তিনটিতে। সবশেষ সাক্ষাতে ১৪১ রানের বিশাল জয় টাইগারদেরই। তবে আফগান প্রসঙ্গ এলেই উঠে আসছে দেরাদুনের ভয়াল সেই স্মৃতি। যেখানে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে আফগানিস্তানের সঙ্গে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ। তবে দেশ ছাড়ার আগে ক্রিকেটাররা বলে গেছেন, এশিয়া কাপের ফরম্যাট টি-টোয়েন্টি নয়, বরং ওয়ানডে। যে ফরম্যাটে বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বে সত্যিই সমীহ জাগানো দল।

২০১২, ২০১৪, ২০১৬; গত এশিয়া কাপের তিনটি আসরই হয়েছিল বাংলাদেশের মাটিতে। যেখানে স্বাগতিকদের সাফল্য ছিল চোখে পড়ার মতো। ২০১২ ও ২০১৬ সালে ফাইনাল খেলেছিল মাশরাফিরা। তবে জেতা হয়নি ট্রফি। ২০১২ সালটি এখনো বেদনাবিধুর টাইগার সমর্থকদের জন্য। যেখানে ভারত ও শ্রীলঙ্কাকে পেছনে ফেলে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। ম্যাচটি জিতেই যাচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু হয়নি, কপালে জোটে মাত্র ২ রানের হার। যে হারে সাকিবের বুকে মাথা ঠেকিয়ে কেঁদেছিলেন মুশফিক, সঙ্গে গোটা দেশও।

২০১৪ এশিয়া কাপটা ভালো কাটেনি বাংলাদেশের। পাঁচ দলের লিগ পদ্ধতির টুর্নামেন্টে চারটি ম্যাচই হেরেছিল বাংলাদেশ। এমনকি আফগানিস্তানের সঙ্গেও। সেবার ফাইনাল খেলেছিল পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা, শিরোপা লঙ্কান শিবিরের। এশিয়া কাপের সবশেষ আসর ২০১৬ সালে ঢাকাতেই। টি-টোয়েন্টির এই ফরম্যাটেও চমক দেখায় স্বাগতিক বাংলাদেশ। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে পেছনে ফেলে ভারতের সঙ্গে ফাইনালে বাংলাদেশ। তবে বৃষ্টিবিঘ্নিত ফাইনাল ছিল একপেশে, উত্তেজনাহীন। ১৫ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ১২০। জবাবে ভারত ১৩.৫ ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে পৌঁছে গিয়েছিল জয়ের বন্দরে। বাংলাদেশের সান্ত্বনা রানার্স আপ।

এশিয়া কাপের গত তিনটি আসরে বাংলাদেশ ছিল স্বাগতিক। এর মধ্যে দুটিতে ফাইনাল খেলার গৌরব। তবে এবার মিরপুর নয়, সুদূর আরব আমিরাত। অপরিচিত ভেন্যু। দুঃসহ গরম। যাতে নাভিশ্বাস ওঠার কথা ক্রিকেটারদের। বাংলাদেশ স্কোয়াডে থাকা দুই-একজনের অভিজ্ঞতা রয়েছে এখানে খেলার। বাকিদের নেই। তবে বাংলাদেশের পঞ্চপাণ্ডবের একজন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সগর্বে বলে গেছেন, ‘বিরূপ কন্ডিশনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে পারফরম্যান্স করাই পেশাদার ক্রিকেটারদের মাহাত্ম্য।’

বিরূপ কন্ডিশন উতরে শতভাগ জ্বলে উঠুক মাশরাফি ব্রিগেড। আর স্বপ্নভঙ্গ নয়, স্বপ্নপূরণ হোক প্রথমবারের মতো বহুজাতিক টুর্নামেন্টের শিরোপায় চুমু আঁকার। এমন প্রত্যাশা সবারই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads