• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
দ্য ম্যাজিশিয়ান

কাটার স্পেশালিস্ট মোস্তাফিজুর রহমান

সংগৃহীত ছবি

ক্রিকেট

দ্য ম্যাজিশিয়ান

  • স্পোর্টস রিপোর্টার
  • প্রকাশিত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আফগানদের বিরুদ্ধে ৩ রানের নাটকীয় জয়ে প্রশংসার বৃষ্টিতে ভিজছে গোটা বাংলাদেশ দল। তবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে মোস্তাফিজুর রহমান, দ্য ফিজ, কাটার স্পেশালিস্ট। যার শেষ ডেলিভারিতে নির্ধারণ হয়েছিল ম্যাচের ভাগ্য। ছিটকে গেল আফগানিস্তান। ফাইনালের স্বপ্নে বিভোর বাংলাদেশ। ম্যাচের পর টাইগার দলের সবার মুখে ছিল মোস্তাফিজ-বন্দনা। ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মুর্তজা তো মোস্তাফিজকে অভিহিত করেছেন ম্যাজিশিয়ান হিসেবে।

আসলেই তো তাই। ৬ বলে জয়ের জন্য আফগানিস্তানের দরকার ছিল মাত্র ৮ রান। হাতে ৪ উইকেট। সেখানে ক্যারিশম্যাটিক বোলিংয়ে মোস্তাফিজ দিলেন মাত্র ৪ রান। শেষ বলে যখন দরকার ৪, সেখানে হলো ডট। মানে স্ট্রাইকে থাকা শেনওয়ারি ব্যাটে ছোঁয়াতেই পারলেন না বল, উল্টো ব্যাট ছিটকে পড়ল হাত থেকে। যেমনটি আফগানরা ছিটকে পড়ল ম্যাচ থেকেও।

ম্যাচের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মোস্তাফিজকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলেন মাশরাফি। যেখানে তিনি বলেন, ‘ম্যাচ শেষে মোস্তাফিজই ম্যাজিশিয়ান। এমন পরিস্থিতির ম্যাচে আগে অনেক হেরেছি। তবে আজ (পরশু) পেরেছি।’

প্রচণ্ড গরমে অস্থির ছিলেন দুই দলের খেলোয়াড়রা। মাশরাফির শরীরও যেন চলছিল না। কিন্তু সবাইকে বুঝতে দেননি তিনি। শেষের দিকে বোলিং করতে অনীহা প্রকাশ করেছিলেন মোস্তাফিজ। মাশরাফির ভাষায়, ‘মোস্তাফিজ বলছিল, ভাই আর পারব না।’ কিছুক্ষণ আগেই ক্র্যাম্প করেছিল মোস্তাফিজের। ফিজিওর সাহায্যে চেষ্টা করেছিলেন নিজেকে ধরে রাখতে। তারপরও মাশরাফি বল তুলে দিয়েছিলেন মোস্তাফিজের হাতে। শেষ পর্যন্ত স্বপ্নিল সমাপ্তি।

পাঁচ ওভার বোলিং করার পরই মোস্তাফিজ বলেছিলেন আর পারব না। কিন্তু মাশরাফি তারপরও তার কাছ থেকে আদায় করেছেন আরো চার ওভার। মাশরাফি তখন থেকেই তাকে বলতে থাকেন, যে করেই হোক বোলিং চালিয়ে যেতেই হবে। এ প্রসঙ্গে মাশরাফি বলেন, ‘ও ৫ ওভারের পর থেকেই বলছিল- ভাই, আমি আর পারব না। আমার তো মাথায় হাত! আজকে রুবেলও নেই। ম্যাচ তো জিততেই হবে, ওকে আমার লাগবেই। ওর ১০ ওভার তো হিসাব করা আমার। আমি বার বার ওকে বলেছি, পারতেই হবে। বলেছি নিজেকে পুশ করতে। চেষ্টা করেছি ছোট স্পেলে ওকে বোলিং করাতে। ওর কাফ মাসলে টান লাগছিল। এফোর্ট দিতে পারছিল না, ইয়র্কার পারছিলই না শেষ দিকে। আমি বললাম যে, অন্তত রান আপে আস্তে আস্তে দৌড়ে গিয়ে হলেও কাটার দিয়ে কাজ চালিয়ে নিতে। চেষ্টা করেছি সাহস দিতে। তবে আমার কাজ তো ছিল স্রেফ বলা, আসল কাজ সে করেছে। এ অবস্থার মধ্যেও যেভাবে বোলিং করেছে, তা অতুলনীয়।’

শুধু মোস্তাফিজ নয়, শেষের দিকে শরীর চলছিল না কারোরই। ক্যাপ্টেন নিজেই ধুঁকছিলেন। তবে বুঝতে দেননি। পাছে ভেঙে পড়ে সতীর্থদের মনোবল। এ প্রসঙ্গে মাশরাফি জানান, ‘আমারো কষ্ট হচ্ছিল প্রচণ্ড। শরীর সাপোর্ট দিচ্ছিল না। কিন্তু আমি যদি নিজের এসব কথা বলি, অন্যরা আরো দমে যাবে। এজন্যই চেষ্টা করেছি ওদেরকে যত সাপোর্ট দেওয়া যায়। মাঠে শিশির ছিল, ঘাম তো দরদর করে ঝরছিল। হাতে বল গ্রিপ করাই অসম্ভব হয়ে পড়ছিল। অনেকবার আমরা মাটিতে হাত ঘষেছি। লাভ বেশি হয়নি। বিশেষ করে সাকিবের কাজটা কঠিন হয়ে পড়ছিল। শিশির আর ঘামে ভিজে বল ব্যাটে যাচ্ছিল ভালোভাবে। আমার, মোস্তাফিজের অনেকগুলো কাটার গ্রিপ করেনি। শেষ দিকের ছক্কাটি খেলাম বল গ্রিপ করেনি বলেই। এরপরও শেষ পর্যন্ত ভালোয় শেষ করতে পেরেছি, এটাই আসল কথা।’

প্রথম দুই স্পেলে ব্যর্থ মাশরাফি এদিন তৃতীয় স্পেলে তুলে নেন দুই উইকেট। আসগর আফগান ও হাশমতউল্লাহ শহিদির জুটি যখন আফগানদের এগিয়ে নিচ্ছে জয়ের পথে, দুজনকেই ফিরিয়েছেন অধিনায়ক। যে দুই উইকেটে বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে স্পর্শ করেছেন ২৫০ ওয়ানডে উইকেটের মাইলফলক।

ব্যাট করার পাশাপাশি বল হাতে শাহজাদের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়েছেন ম্যাচসেরা মাহমুদউল্লাহ। তাকে দিয়ে বল করানোর ব্যাপারে ম্যাশ জানান, ‘মোসাদ্দেক ছিল না, রিয়াদের বোলিংটা এদিন লাগতই হয়তো। অন্যদের একটু বিশ্রাম দেওয়ার ব্যাপারও ছিল। আর বাইরে যাওয়ার পর মাঠে ফিরেই মনে হলো এখন রিয়াদকে আনলে কাজে লাগতে পারে।’

মাহমুদউল্লাহ সফল। তার পুরস্কারও তিনি পেয়েছেন ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে। তবে মাহমুদউল্লাহর চোখে ম্যাচসেরা আসলে মোস্তাফিজই। তিনি বলেছেন, ‘টার্নিং পয়েন্ট মোস্তাফিজের বোলিংকেই বলব আমি। আমাদের জুটি হয়তো গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কিন্তু ৬ বলে ৮ রান আটকানো সহজ নয়। মোস্তাফিজ যেভাবে বোলিং করেছে, সেটা ছিল অসাধারণ।’

বিষাদময় হার আফগানদের। সেই দলের অধিনায়ক আসগর আফগানও প্রশংসা করেছেন মোস্তাফিজের বোলিংকে। যদিও শুরুটা বেদনার আবহে ঠাসা, ‘অভিনন্দন বাংলাদেশকে। তবে বড়ই কষ্টের ম্যাচ। ৬ বলে ৮ রান মোটেই কঠিন ছিল না। রশিদ, নবী, শেনওয়ারিরা করে দেখাতে পারত। কিন্তু হয়নি। তবে প্রশংসার দাবিদার সে (মোস্তাফিজ)। যার প্রতিটি বল ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads