• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
মিরপুরে ইমরুল বীরত্ব

সেঞ্চুরির পর আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছেন ইমরুল কায়েস

ছবি : বাংলাদেশের খবর

ক্রিকেট

মিরপুরে ইমরুল বীরত্ব

  • স্পোর্টস রিপোর্টার
  • প্রকাশিত ২২ অক্টোবর ২০১৮

ওয়ানডে অভিষেক ২০০৮ সালে। কিন্তু এই ফরম্যাটে প্রথম সেঞ্চুরি পেতে ইমরুল কায়েসকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল দুটি বছর। ২০১০ সালে সুদূর ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে আসে কাঙ্ক্ষিত সেই সেঞ্চুরি। এরপর দীর্ঘ অপেক্ষা। দেখা নেই দ্বিতীয় সেঞ্চুরির। গুনে গুনে ছয় বছর। ২০১৬ সালে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিনি দেখা পান ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি। করেন ক্যারিয়ার সেরা ১১২ রান। এরপর আবার বছর দুয়েকের অপেক্ষা তৃতীয় সেঞ্চুরির জন্য। যখন সেঞ্চুরিটা এলো, তখন দলের জন্য তা খুবই জরুরি ছিল। নেই তামিম ও সাকিব। ওপেনিং ফ্লপ লিটন দাস। সব দায়িত্ব বর্তেছিল যেন ইমরুলের ওপর। তিনিও আস্থার প্রতিদান দিলেন হাতেনাতে। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে গতকাল প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে মিরপুরে দেখা মিলল ইমরুল বীরত্বগাথা। দলকে উপহার দিলেন ১৪৪ রানের ঝলমলে ইনিংস। যে ইনিংসের ওপর ভর করে বাংলাদেশ পায় ৮ উইকেটে ২৭১ রানের পুঁজি।

ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেছেন ইমরুল। তাতে রেকর্ড বই কিছুটা ওলট-পালট। মনোমুগ্ধকর এই ইনিংসে তিনি স্পর্শ করেছেন বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের মালিক মুশফিকুর রহিমকে। ওয়ানডেতে দুজনেরই সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান এখন ১৪৪। দুজনের সামনে রয়েছেন শুধুই একজন। তিনি তামিম ইকবাল। তার সর্বোচ্চ রান ১৫৪। উইকেট জুটিরও রেকর্ড হয়েছে এদিন। সপ্তম উইকেটে ইমরুল-সাইফউদ্দিনের ১২৭ রানই এখন সর্বোচ্চ। আগেরটি ছিল মুশফিক-নাঈমের, ১০১। ইমরুলের বীরত্বের দিনে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম ফিফটির দেখা পেয়েছেন অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিন।

ইমরুলের সেঞ্চুরির মাহাত্ম্য অনেক। টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই ধুঁকেছে বাংলাদেশ। দলীয় ১৭ রানের মধ্যে বিদায় নেন ওপেনার লিটন দাস (৪) ও অভিষিক্ত ফজলে রাব্বি (০)। এরপর থেকেই খণ্ড খণ্ড জুটিতে বাংলাদেশকে পথ দেখান ইমরুল কায়েস। তৃতীয় উইকেটে মুশফিকের সঙ্গে তোলেন ৪৯ রান। বাজে শটে মুশফিক (১৫) বিদায় নিলে ইমরুলের সঙ্গী হন মোহাম্মদ মিঠুন। এই জুটি থেকে আসে মহাগুরুত্বপূর্ণ ৭১ রান, যা ভাঙা ইনিংস মেরামতে কাজে দেয় অনেক। মিঠুন ৩৭ রানে সাজঘরে ফিরলে আবার বিপর্যয়ের ধাক্কা। দুই রানের মধ্যে নেই মাহমুদউল্লাহ (০) ও মিরাজের (১) উইকেট। ইমরুলের সঙ্গী হন তখন তরুণ অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিন।

এই জুটিতেই ম্যাচের আসল গল্প নিহিত। জিম্বাবুইয়ে বোলারদের নাচিয়ে রানের গতি বাড়াতে থাকেন ইমরুল ও সাইফউদ্দিন। শুরুটা ধীরলয়ে হলেও আস্তে আস্তে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন দুজন। ১১৯ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ইমরুল কায়েস। তার সেঞ্চুরির উদযাপনও ছিল নয়নকাড়া। দুই হাতে ব্যাটটি তুলে দোলালেন কিছুক্ষণ। যেভাবে মা-বাবা দোলান তার শিশু বাচ্চাকে। কিছুদিন আগে সন্তানের জনক হয়েছেন ইমরুল। মায়াবী ইনিংসটা সেই সন্তানকেই উৎসর্গ করা হলো, তা বুঝতে কারো বাকি রইল না। সেঞ্চুরির পর ইমরুলের ব্যাট যেন আরো ধারালো হয়ে ওঠে। সপাটে আঘাত করতে শুরু করলেন। বল কখনো মাটি ছুঁয়ে, কখনোবা বাতাসে ছুঁয়ে আছড়ে পড়তে লাগল মিরপুরের গ্যালারিতে। সঙ্গে সাইফও ছিলেন দুর্দান্ত। এক সময় মনে হচ্ছিল তামিমের সর্বোচ্চ ১৫৪ রানের ইনিংসটা আজ ভেঙেই ফেলবেন ইমরুল। কিন্তু না, শেষ পর্যন্ত তিনি স্বস্তি দিয়েছেন তামিমকে। তবে কাঁধে চেপে বসেন মুশফিকের। মুশফিক তার ক্যারিয়ার সেরা ১৪৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন গত এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দুবাইয়ে। ভাগ্যিস, অল্পের জন্য তাকে টপকাতে পারেননি ইমরুল।

১৪৪ রানের দারুণ ইনিংস খেলেছেন ইমরুল ১৪০ বলে। যার মধ্যে ছিল ১৩টি বাউন্ডারি ও ৬টি ছক্কার মার। অন্যদিকে বরাবর ৫০ রানে সাজঘরে ফেরেন সাইফউদ্দিন। যার মধ্যে ছিল তিনটি চার ও একটি ছক্কা। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে সাইফের এটি প্রথম হাফসেঞ্চুরি। মজার বিষয় তার আগের সর্বোচ্চ রানই ছিল মাত্র ১২। তিন ম্যাচে সর্বমোট রান ছিল ৩০। এক লাফে চার ম্যাচে তার মোট রান এখন ৮০।

দলীয় ২৬৬ রানে বিদায় নেন ইমরুল। এক রান যোগ হতে সাইফউদ্দিনও। এরপর আর উইকেট পড়েনি। মাশরাফি ও মোস্তাফিজুর শেষ করেন ব্যাটিং ইনিংস। মাশরাফি দুই ও মোস্তাফিজুর এক রানে ছিলেন অপরাজিত। জিম্বাবুয়ের হয়ে সফল বোলার কাইল জারভিস। ৯ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে তুলে নেন সর্বোচ্চ চার উইকেট। ৫৫ রানে তিন উইকেট তেন্দাই চাতারার। বাকি একটি উইকেট বগলদাবা করেন ব্রেন্ডন মাভুটা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads