• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
মুশফিক-মুমিনুলে রঙিন দিন

সংগৃহীত ছবি

ক্রিকেট

মুশফিক-মুমিনুলে রঙিন দিন

  • মাহমুদুন্নবী চঞ্চল
  • প্রকাশিত ১২ নভেম্বর ২০১৮

মুমিনুল টেস্টের খেলোয়াড়। এমন কথা বহুল প্রচলিত। অথচ এই ফরম্যাটের শেষ আট ইনিংসে তার নেই কোনো ফিফটি। উল্টো তিন ইনিংসে আছে শূন্য রানে আউটের অস্বস্তি। নয় ইনিংসে মুশফিকুর রহিমেরও একই অবস্থা। নেই কোনো ফিফটি। একবার হয়েছেন শূন্য রানে আউট। সমালোচনার তীর ক্রমেই ধেয়ে আসছিল তাদের দিকে। কিন্তু মিরপুর টেস্টের প্রথম দিন সব সমালোচনা যেন মাটিচাপা দিলেন তারা। ব্যাট হাতে দুজনই উপহার দিলেন নান্দনিক সেঞ্চুরি। ১৬১ রানে মুমিনুল বিদায় নিলেও ১১১ রানে অপরাজিত মুশফিক। দুজনের ব্যাটে প্রথম দিনটা রঙিনই। দিন শেষে টাইগারদের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ৩০৩ রান। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে বড় ইনিংস গড়ার স্বপ্নে বিভোর বাংলাদেশ।

অথচ দিনের শুরুটা আভাস দিয়েছিল ভয়াবহ বিপর্যয়ের। ফিরে আসছিল সিলেটের ভয়াল স্মৃতি। ২৬ রানেই নেই তিন উইকেট। সেখান থেকে দিন শেষে তিনশোর্ধ্ব রান, বিস্ময়ের পালে ধাক্কা লাগার মতো অবস্থা। সবুজ জমিনে প্রজাপতির রঙ ছড়িয়ে এর পেছনে আসল মাহাত্ম্য চতুর্থ উইকেটে মুমিনুল-মুশফিক জুটি। যে রেকর্ড জুটির ২৬৬ রান পাল্টে দিয়েছে ম্যাচের রঙ, স্বস্তি দিচ্ছে মাহমুদউল্লাহদের।

টস জিতে মাহমুদউল্লাহর আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্তকে সার্থক করতে পারেননি দুই ওপেনার লিটন দাস ও ইমরুল কায়েস। দলীয় ১৩ রানের মাথায় নেই ইমরুলের উইকেট। জার্ভিসের স্টাম্পের ওপরে বল ডিফেন্স করতে গিয়ে ক্যাচ দেন চাকাভার হাতে। ১৬ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি ইমরুল। আর তাতে অনাকাঙ্ক্ষিত একটি রেকর্ডও জুটেছে তার কপালে। সবচেয়ে বেশি বল খেলে রান না করা প্রথম বাংলাদেশি ওপেনার এখন তিনিই।

দলীয় ১৬ রানে পড়ে দ্বিতীয় উইকেট। নতুন জীবন পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি লিটন দাস। তিনিও জার্ভিসের শিকার। প্রিয় ফ্লিক শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন মিড উইকেটে ব্রান্ডন মাভুতার হাতে। ৩৫ বলে ৯ রান সম্বল তার। এরপর মোহাম্মদ মিঠুনের পালা। অভিষেকটা রাঙাতে পারতেন বিপর্যয় রোধ করে। উল্টো শূন্য রানে হাঁটা দিলেন তিরিপানোর বলে দ্বিতীয় স্লিপে টেইলের হাতে ধরা পড়ে। ২৬ রানে তিন উইকেট হারিয়ে রীতিমতো কাঁপছে তখন বাংলাদেশ। উঁকি দিচ্ছে টানা নবম ইনিংসে দুশর আগে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা।

তবে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ম্যাচের চিত্র আমূল বদলে দেন মুমিনুল ও মুশফিক। দুজনের ব্যাটে ফুলে-ফেঁপে ওঠে আশার বেলুন। শুরুটা নড়বড়ে হলেও আস্তে আস্তে দৃঢ় প্রতয়ী হয়ে ওঠেন দুজন। ঝুটঝামেলা ছাড়াই দিনের দ্বিতীয় সেশনটা পার করে দেন তারা। নান্দনিক সব শটে হতাশ করেন জিম্বাবুয়ের বোলারদের। বাংলাদেশের স্কোরটাও সমৃদ্ধ হতে থাকে ক্রমশ। শেষ পর্যন্ত এই জুটি বিচ্ছিন্ন হন দলীয় ২৯২ রানে। ততক্ষণে বড় ইনিংসের ভিত আসলে গড়া হয়ে গেছে। ১৫০ বলে ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরি করা মুমিনুল থামেন ১৬১ রানে। ব্যক্তিগত নয় রানে মুমিনুলের ক্যাচ ধরতে না পারা ব্রায়ান চারি এবার ভুল করেননি, লুফে নেন নিচু হয়ে আসা ক্যাচ। ভাঙে ২৬৬ রানের জুটি। টেস্টে চতুর্থ উইকেটে টাইগারদের সেরা জুটি এটি। আগেরটি ছিল ১৮০ রানের, মুমিনুল-লিটনের। ২৪৭ বলের ইনিংসে মুমিনুল হাঁকান ১৯টি বাউন্ডারি। সেঞ্চুরি করার পর মুমিনুল ছিলেন শান্ত, আলগোছে- শুধু ব্যাটটাই উঁচিয়ে ধরেছেন। কেন এই নির্লিপ্ততা। মুমিনুলের ভাষায়, ‘পরিস্থিতির কারণে সব ভুলে গিয়েছিলাম।’   

এরপর একটু ছন্দপতন। নাইটওয়াচম্যান তাইজুল ইসলাম বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি মুশফিককে। জার্ভিসের বলে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে চাকাভার হাতে। রিভিউতে আউট তিনি। শেষ বেলায় নামা অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ কোনো বল খেলার সুযোগ পাননি। ১১১ রানে রাজকীয় স্টাইলে অপরাজিত আছেন মুশফিকুর রহিম। সেঞ্চুরির পর মুমিনুল ছিলেন শান্ত। তবে মুশফিকের ক্ষেপাটে উদযাপন ছিল চোখে পড়ার মতো। বাঘের মতো গর্জনে যেন উগরে দিলেন ভেতরে জমে থাকা ক্ষোভ ও রাগ। ২৩১ বলের ইনিংসে মুশফিক হাঁকিয়েছেন ৯টি চার। টেস্ট ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি পাওয়া মুশফিক আজ কতদূর যেতে পারেন, সেটাই দেখার বিষয়।

দিন শেষে ভালো অবস্থানে বাংলাদেশ। এমনটি বলা অত্যুক্তি হবে না। তবে মানতে নারাজ মুমিনুল হক। তার মতে, তার উইকেটটি না পড়ে রান যদি তিনশ থাকত, তাহলে ভালো অবস্থা বলা যেত। সব মিলিয়ে মুমিনুলের ভাবনা, চার থেকে সাড়ে চারশ রান হলে ভালো কিছুর সম্ভাবনা আছে এই টেস্টে। ব্যাটিংয়ে এখনো আছেন মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। পরে আরিফুল হক ও মেহেদী হাসান মিরাজ। ভালো কিছুর স্বপ্নে বিভোর তো এখন সবাই। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads