• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
মুশফিকুর রহিমের রেকর্ডময় একদিন

মুশফিকুর রহিম

ছবি : ইন্টারনেট

ক্রিকেট

মুশফিকুর রহিমের রেকর্ডময় একদিন

  • মাহমুদুন্নবী চঞ্চল
  • প্রকাশিত ১৩ নভেম্বর ২০১৮

ধীর লয়ে তবে নান্দনিক। যেন গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে চলা। লক্ষ্য পূরণের সময় চেপে বসল পাহাড়সম চাপ। তাও উতরে গেলেন কব্জির মোচড়ে। বজ্রগতিতে দৌড়ালেন। অতঃপর ইতিহাস। দুই হাত ছড়িয়ে গোটা স্টেডিয়ামটাকেই যেন আলিঙ্গন করতে চাইলেন। পরে ব্যাট ফেলে এক ঝটকায় খুললেন হাতের গ্লাভস। চার আঙুলে আঁকলেন ভালোবাসার প্রতীক। চুমু এঁকে তা পাঠিয়ে দিলেন স্ত্রী মন্ডির উদ্দেশ্যে। বুকে কিংকংয়ের মতো ঘুসি ছুড়ে শেষটায় সিজদায় পড়ে কৃতজ্ঞতা জানালেন সৃষ্টিকর্তার প্রতি। মিরপুর টেস্টে ডবল সেঞ্চুরির পর মুশফিকের এমন উদযাপন যেন দিনের সেরা চিত্র। যাতে রেকর্ড বই হয়েছে ওলটপালট। দিন শেষে বাংলাদেশের স্কোরও ফুলেফেঁপে অনেক বড়। ৭ উইকেটে ৫২২, ডিক্লেয়ার। শেষ বিকালে জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ ১ উইকেটে ২৫। ৪৯৭ রানে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ অনুমিতভাবে চালকের আসনে।

মিরপুর টেস্টে কে এগিয়ে, কে পিছিয়ে; দ্বিতীয় দিন শেষে এমন আলোচনা যেন গৌণ। দিনের সবটুকু আলো যেন কেড়ে নিলেন মুশফিক একাই। অতিমানবীয় অপরাজিত ২১৯ রানের ইনিংসের কারণে তিনি জন্ম দিয়েছেন বেশকটি রেকর্ডের। টেস্টে মুশফিক বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার, যার দ্বিশতক দুটি। সাকিবকে (২১৭) ছাড়িয়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের মালিকও তিনি। বিশ্বরেকর্ডও হয়েছে। কিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে দুটি ডবল শতকের মালিক একমাত্র মুশিই। আবার দীর্ঘ সময় ও বলের হিসাবেও ব্যাট করার রেকর্ডও ভেঙেছেন তিনি। ৫৮৯ মিনিট ও ৪২১ বল, পেছনে ফেলেছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও মোহাম্মদ আশরাফুলকে। সত্যিই মুগ্ধ ছড়ানো মুশফিকময় এক রেকর্ড আখ্যানের দিন দেখল গোটা বাংলাদেশ। এ তো গেল মুশফিকের রেকর্ড। দলীয় রেকর্ডও হয়েছে এদিন। ৫২২ জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। আগেরটি ছিল ৫০৩ রানের। অষ্টম উইকেটে মুশফিক ও মিরাজের ১৪৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিও রেকর্ডের পাতায়।

প্রথম দিন ৫ উইকেটে ৩০৩ রানে শেষ করেছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনটা অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে নির্বিঘ্নেই কাটিয়ে দেন মুশফিক। আগের দিন ১১১ রানে অপরাজিত থাকা মুশফিকের চোখে তখন দ্বিতীয় ডবলের স্বপ্ন চিকচিক করছে। ষষ্ঠ উইকেটে ৭৩ রান আসার পর ছন্দপতন। ব্যক্তিগত ৩৬ রানে সাজঘরে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ। প্রথম টেস্টে ভালো করা আরিফুল হক মিরপুরে ম্লান। করতে পারলেন মাত্র ৪ রান। মুশফিকের আশার বাঁধে ফাটল ধরার মতো অবস্থা। না জানি দ্রুতই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু অষ্টম উইকেটে তা হতে দেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। রেকর্ড ১৪৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিই গড়ে ফেলেন দুজন। এর মধ্যে মুশফিক পেয়েছেন রেকর্ডময় এক মায়াবী ইনিংস। মিরাজও পান টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি। থাকেন ক্যারিয়ারসেরা ৬৮ রানে অপরাজিত। মুশফিক ২১৯ রানের ইনিংসে বল খরচ করেছেন ৪২১। ১৯টি চার, ছক্কা নেই একটিও। মুশফিকের দিনে জিম্বাবুয়ের পেসার জার্ভিস ৫ উইকেট নিয়ে কিছুটা আলোচিত।

শেষ বিকালে ১৮ ওভার ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়েছে জিম্বাবুয়ে। তাতে কিছুটা অস্বস্তি রয়ে গেছে বাংলাদেশের। কারণ মাত্র একটি উইকেট নিতে পেরেছে স্বাগতিকরা। কিন্তু উইকেটের সংখ্যা ন্যূনতম দুটি হতে পারত। অভিষেক ম্যাচে মাঠে নামা দীর্ঘদেহির খালেদ আহমেদ পেতে পারতেন প্রথম উইকেট। কিন্তু তার বলে মাসাকাদজার দেওয়া ক্যাচ স্লিপে হাস্যকরভাবে মিস করেন আরিফুল হক। যদিও ক্যাচটা লুফে নেওয়ার কথা ছিল মোহাম্মদ মিঠুনের। কিন্তু নিজের জায়গা ছেড়ে লাফ দিয়ে সবকিছু ভণ্ডুল করে দেন আরিফুল। লাইফ পাওয়া মাসাকাদজাকে পরে সাজঘরে ফেরান স্পিনার তাইজুল ইসলাম। স্লিপে ক্যাচ নেন মিরাজ। ৪৪ বলে ১৪ রানে ফেরেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক। ব্রান্ডন চারি ১০ রানে আছেন অপরাজিত। অপর অপরাজিত ব্যাটসম্যান তিরিপানো ১৬ বল খেলেও এখনো রানশূন্য। 

আজ ম্যাচের তৃতীয় দিন। এই দিনটা রাঙাতে হলে দায়িত্ব নিতে হবে বোলারদেরই। আর সেটা হলেই সিরিজ হারের শঙ্কা থেকে অন্তত রেহাই পাবে বাংলাদেশ। বল হাতে সেই ম্যাজিক দেখাতে পারবেন তো মোস্তাফিজরা? 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads