• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
হোয়াইটওয়াশে মধুর প্রতিশোধ

ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেট পতনের পর উল্লসিত বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা

ছবি : ক্রিকইনফো

ক্রিকেট

হোয়াইটওয়াশে মধুর প্রতিশোধ

  • মাহমুদুন্নবী চঞ্চল
  • প্রকাশিত ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮

টেস্টে দেড় যুগের পথচলা। এর মধ্যে প্রাপ্তির চেয়ে শূন্যতা আর হাহাকারই বেশি। সাকুল্যে গুটিকয়েক জয়। তাও যেন মন ভরানোর মতো নয়। নেই কোনো ইনিংস ব্যবধানে জয়, কিংবা প্রতিপক্ষকে ফলোঅন করানোর মতো দোর্দণ্ড দাপট। সবশেষ ক্যারিবীয় সফরটা তো সাদা পোশাকে লেপ্টে দিয়েছিল কালিমা। ৪৩ রানের লজ্জার সঙ্গে হোয়াইটওয়াশের চাপা দীর্ঘশ্বাস। সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে প্রাপ্ত মওকা সাকিবরা কীভাবে কাজে লাগান, তা দেখতে পাখির চোখ করে ছিলেন সবাই। চট্টগ্রাম টেস্টে ৬৪ রানের জয়ে শুরু অভিযান। এরপর মিরপুরে যা হলো, তা তো ইতিহাস। রেকর্ড বুক ওলটপালট। দেখা মিলল প্রথমবারের মতো ফলোঅন করানোর মতো দাপট, এলো প্রথমবারের মতো ইনিংস ব্যবধানে জয়ও। সঙ্গে ক্রিকেটারদের একগুচ্ছ কীর্তিগাথা। স্পিনঘূর্ণিতে পাঁচ দিনের টেস্ট শেষ পৌনে তিন দিনে। ইনিংস ও ১৮৪ রানের গৌরবমাখা জয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধবলধোলাই করেই ছাড়ল বাংলাদেশ (২-০)। এই গৌরবগাথা জয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

১১৩তম টেস্টে বাংলাদেশের এটি ১৩তম জয়। চতুর্থবারের মতো সিরিজ জয়। ঘরের মাঠে তৃতীয়। তৃতীয়বারের মতো হোয়াইটওয়াশ। ঘরের মাঠে দ্বিতীয়। দুটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, একটিতে জিম্বাবুয়ে। পেসার ছাড়া চতুষ্টয় স্পিনার নিয়ে রীতিমতো ঝুঁকিই নিয়েছিল বাংলাদেশ, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম। কিন্তু তিন দিনে স্পিনাররা যা করে দেখালেন, তা আবার টেস্ট ইতিহাসেই বিরল। হলো বিশ্বরেকর্ড। দুই টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৪০টি উইকেটই নিয়েছেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। এমন ঘটনা প্রথম দেখল টেস্ট ক্রিকেটবিশ্ব। আগের রেকর্ডটিও অবশ্য বাংলাদেশের দখলে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে ঘরের মাঠে ৩৮টি উইকেট নিয়েছিলেন বাংলাদেশের স্পিনাররা।

৫০৮ রানে প্রথম ইনিংস শেষ করা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে নতজানু ক্যারিবীয় শিবির। দ্বিতীয় দিনের শেষ বেলায় তাদের সংগ্রহ ছিল ৫ উইকেটে ৭৫। গতকাল সকালে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে প্যাকেট অতিথি শিবির, ১১১ রানে। এটাও রেকর্ড, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কম রানে অলআউট তারা। টাইগারদের লিড তখন ৩৯৭, এটাও রেকর্ড। এত রানের লিড আগে কখনো পাননি সাকিবরা। প্রথম ইনিংসে মিরাজ আর সাকিবই ঘণ্টা বাজিয়েছেন ব্রাফেটদের। সাত উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারসেরা বোলিং ফিগার মিরাজের। সাকিবের তিনটি।

ফলোঅনে পড়ে রীতিমতো হাঁসফাঁস ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছিন্ন করতে পারেনি টাইগারদের স্পিনের মায়াজাল। আটকে গেছেন বার বার। অসহায় চাহনিতে ফিরেছেন সাজঘরে। স্রোতের বিপরীতে শুধু লড়েছেন লড়াকু যোদ্ধা শিমরন হেটমায়ার। ব্যক্তিগত ৯৩ রানে তাকে ফিরিয়ে শেষ কাঁটাটা সরান মিরাজই। রোচের অপরাজিত ৩৭ রান ও হোপের ২৫ শুধুই পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়েছে। দ্বিতীয় ইনিংসে ২১৩ রানে অলআউট ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

মেহেদী হাসান মিরাজের ঘূর্ণিজাদু যথারীতি এই ইনিংসেও। তুলে নেন ৫টি উইকেট। ১১৭ রানে দুই ইনিংসে ১২ উইকেট মিরাজের, বাংলাদেশের কোনো বোলারের সেরা কীর্তি। সাকিবের পর এক ম্যাচে দুইবার ১০ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্বও এখন খুলনার এই ডান হাতি স্পিনারের। পুরস্কারটাও পেয়েছেন ম্যাচসেরার মঞ্চে দাঁড়িয়ে। দ্বিতীয় ইনিংসে তাইজুল তিনটি, নাঈম ও সাকিব নিয়েছেন একটি করে উইকেট। সিরিজসেরা অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ব্যাট হাতে ১১৫ রানের পাশাপাশি বল হাতে ৯ উইকেট; অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্স তাকেই তো মানায়। যার অভিধানে হারের মন্ত্র যে একদমই নেই।

টেস্ট সিরিজের সুখস্মৃতি নিয়ে আগামী ৯ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে ওয়ানডে সিরিজ। সাকিব বলছেন, ‘লড়াই হবে কঠিন।’ কিন্তু সবচেয়ে প্রিয় ফরম্যাটে বাংলাদেশ কতটা ভয়ঙ্কর, তা জানে ক্রিকেটবিশ্ব। অপেক্ষা এবার সেটারও প্রত্যক্ষ করার।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads