• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
সাফল্যের সঙ্গে ছিল হাহাকারও

ছবি : সংগৃহীত

ক্রিকেট

ফিরে দেখা ২০১৮, ক্রিকেট

সাফল্যের সঙ্গে ছিল হাহাকারও

  • মাহমুদুন্নবী চঞ্চল
  • প্রকাশিত ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮

সাফল্যের নিরিখে ক্রিকেটের সেরা বছর। কিন্তু এও সত্য। এ বছরই বেশি হাহাকারের রব উঠেছে, তা শুধুমাত্র ট্রফি নিয়ে। তিন তিনটি ফাইনাল, কিন্তু প্রাপ্তির খাতা শূন্য। অস্পর্শ থেকেছে ট্রফি। নিঃশ্বাস দূরত্বে থাকা কাঙ্ক্ষিত বস্তুতে চুমু আঁকা হয়নি আলতো আদরে। জয়-পরাজয়ের রেকর্ডে স্বস্তির আবহ থাকলেও হিসাবের খেরোখাতায় আফসোস একটি জায়গায়। তারপরও ২০১৮ বাংলাদেশের ক্রিকেটে দারুণ একটি বছর হিসাবেই লেখা থাকবে কালের যাত্রায়।

টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি- তিন ফরম্যাট মিলে এ বছর টাইগাররা খেলেছে ৪৪টি ম্যাচ। সবচেয়ে বেশি জয়ের রেকর্ড এ বছরেই, ২১টি। রাঙানো পারফরম্যান্স। আর সেটা ঘরে কিংবা বাইরে। মিরপুর থেকে সুদূর ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ। কলম্বো কিংবা দুবাই-আবুধাবি। সব জায়গাতেই টাইগারদের দাপুটে পদচারণা ছিল বছর জুড়ে। তবে এর মাঝেও যে লজ্জার কিছু স্মৃতি ছিল না, তা কিন্তু নয়। ক্যারিবীয় সফরে সাদা পোশাকের সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনো গায়ে কাটা দেয়। কিন্তু ঘরের মাঠে তীব্র প্রতিশোধ সেই ক্ষতে প্রলেপও দিয়েছিল। সব মিলিয়ে বছরটা অম্লমধুরই।

জয়ের পাল্লা ভারী। কিন্তু নেই একটি শিরোপাও। শিরোপা বলতে ত্রিদেশীয় কিংবা বহুজাতিক, যা বাংলাদেশের জন্য এখন পরম প্রার্থিত। হয়ে হয়েও হচ্ছে না। খুব কাছাকাছি গিয়েও মুখ থুবড়ে পড়তে হচ্ছে। গ্রাস করছে তীব্র হতাশায়। এমনো তো হতে পারত, যে ট্রফিটি বাংলাদেশ এখনো জিততে পারেনি, এ বছর সেটির সংখ্যা তিন। কিন্তু হয়নি। তিনের পরিবর্তে হূদয় ভাঙা শূন্যই উপহাস করেছে। না হলে ঘরের মাঠে বছরের শুরুতে ত্রিদেশীয় সিরিজে দাপটের সঙ্গে ফাইনালে উঠেও কেন লঙ্কানদের কাছে হার। আবার কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাকে দর্শক বানিয়ে ফাইনালে ওঠা বাংলাদেশ কেনই বা হেরে যাবে ভারতের কাছে শেষ ওভারের ভুলে। কেন এশিয়া কাপের শিরোপা এখনো যেন দূরের বাতিঘর। মরু প্রান্তরে ভারতের কাছে হারের স্মৃতি। তিনটি ফাইনাল, অথচ প্রাপ্তি রানার্সআপের ট্রফি।

এক নজরে দেখা যাক তিন ফরম্যাটের পরিসংখ্যান। এ বছর বাংলাদেশ খেলেছে ২০টি ওয়ানডে। এর মধ্যে জয় ১৩টি। হার মাত্র সাতটিতে। সাদা পোশাকের টেস্টেও খুব খারাপ নয় অতীতের তুলনায়। আট টেস্টের মধ্যে তিন জয়। হার চারটি। একটি ড্র। আর ১৬ টি-টোয়েন্টিতে জয় ৫টিতে। হার ১১টিতে। বছরের শেষ ম্যাচটি ছিল টি-টোয়েন্টি। উইন্ডিজের বিরুদ্ধে হার ঘরের মাঠে।

অথচ বছরটা কিন্তু শুরু হয়েছিল দারুণ জয় দিয়েই। মিরপুরে বসেছিল শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়েকে নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে দুটি ও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে এক জয়ে ফাইনালে উঠেও বাংলাদেশ পারেনি শেষ হাসি হাসতে। ফাইনালে সাকিবের ইনজুরি, ছন্দপতন। লঙ্কানদের কাছে হার। ট্রফি চলে যায় ভিনদেশে। দুই টেস্ট সিরিজেও হার। প্রথমটি ড্র করলেও দ্বিতীয়টিতে শ্রীলঙ্কার কাছে পরাজয়। লঙ্কানদের কাছে ঘরের মাঠে ফাইনালের হারের প্রতিশোধটা অবশ্য নেওয়া যায় মার্চেই। তাও লঙ্কানদের মাটিতে নিদাহাস টুর্নামেন্টে। এটাও ত্রিদেশীয় সিরিজ। তৃতীয় দল অবশ্য ভিন্ন, ভারত। সবার ভাবনা ছিল ফাইনাল হবে শ্রীলঙ্কা ও ফাইনালের মধ্যে। সে রকম প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছিল লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড। কিন্তু সব হিসাব উল্টে ফাইনালে নাম লেখায় বাংলাদেশ। সঙ্গে ভারত। বাংলাদেশের সঙ্গে টানা দুই হারে বিদায় স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার। ফাইনালে জিততে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু শেষের দিকে মুরালি কার্তিকের ব্যাট ধূলিসাত করে দেয় বাংলাদেশের সব আশা। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে আরো একটি হার।   

এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরটা ছিল অম্লমধুর। দুই টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ। এর মধ্যে একটিতে ছিল ৪৪ রানে অলআউট হওয়ার লজ্জার রেকর্ড। তবে সাদা পোশাকের দুঃস্বপ্ন ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে ভুলিয়ে দেয় টাইগাররা। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ জেতে বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে। ক্যারিবীয় সফরে এমন সাফল্য ছিল চোখে পড়ার মতো। যার রেশ দেখা যায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে এশিয়া কাপেও। ইনজুরিগ্রস্ত দল নিয়েও বাংলাদেশ তরতর করে উঠে যায় ফাইনালে। যে ম্যাচে ছিলেন না তামিম ও সাকিব। ভারতের কাছে আবারো পরাজয়ের বৃত্তে বন্দি বাংলাদেশ। হলো না এশিয়া কাপের ট্রফি উঁচিয়ে ধরা।

বছরের বাকি সময়টা ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজ। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে দুই টেস্টের সিরিজ ১-১ ব্যবধানে ড্র হলেও ওয়ানডে সিরিজে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশের স্বাদ দেয় মাশরাফি ব্রিগেড। এরপর শুরু ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে মহারণ। ক্যারিবীয় দুঃসহ স্মৃতির পাল্টা উল্টে দেয় সাকিবরা। দুই টেস্টের সিরিজে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। ওয়ানডে সিরিজও জেতে ২-১ ব্যবধানে। তবে ঘরের মাঠে সিরিজ জেতা হয়নি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। সিলেটে হার দিয়ে শুরু। মিরপুরে দ্বিতীয়টি জিতে সিরিজে সমতা আনলেও শেষ ম্যাচে বাজে হারে ট্রফি হাতছাড়া। সঙ্গে যোগ হয় বাজে আম্পায়ারিংয়ের লজ্জাও।   

মাঠের বাইরে বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার এ বছর ছিলেন আলোচনায়। সবার উপরে নাসির হোসেন। উঠতি মডেলের সঙ্গে যৌন কেলেঙ্কারিতে সয়লাব ছিল সোস্যাল মিডিয়া। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভক্তকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা পান হার্ড হিটার সাব্বির রহমান রুম্মন। নারী নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত হন বাংলাদেশ জাতীয় দলের আরেক তারকা ক্রিকেটার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ও ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবির অভিযোগে ময়মনসিংহের একটি আদালতে মামলা করেন তার স্ত্রী সামিনা শারমিন উষা। পরে মামলার বিষয়টি জানাজানি হয়। আদালত পর্যন্ত গড়ায় বিষয়টি।

এ বছরই নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে মুক্ত বাতাসের ঘ্রাণ নেন মোহাম্মদ আশরাফুল। বিপিএলে ফিক্সিংয়ের কারণে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট থেকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক সময়ের সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট এই সেঞ্চুরিয়ান। ২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট আশরাফুলের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হয়। আগামী বিপিএলে দলও পেয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে সব সময়ই আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন পঞ্চপাণ্ডব খ্যাত মাশরাফি, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিক ও তামিম ইকবাল। তবে এ বছর বাংলাদেশ পেয়েছে নতুন নতুন ম্যাচ উইনার। টেস্টের বিস্ময় মুমিনুল হক, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলামদের সঙ্গে সাদা পোশাকে টাইগারদের গর্জন শুনিয়েছেন সাদমান ইসলাম, নাঈম ইসলামরা। সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন লিটন দাস, মোহাম্মদ মিঠুনরা। বিশ্ব মিডিয়ায় বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতির কথা প্রচার করা হয়েছে। বার বার প্রমাণ হয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সামগ্রিক ফলাফল নিশ্চিত ঊর্ধ্বগামী। এমন ধারা আগামী বছরেও বজায় থাকবে- এমনটাই সবার চাওয়া। 

 

পরিসংখ্যান
২০ ওয়ানডেতে ১৩ জয় ৭ হার
৮ টেস্টে ৩ জয় ৪ হার ১ ড্র
১৬ টি-টোয়েন্টিতে ৫ জয় ১১ হার

 

সবচেয়ে বেশি রান
টেস্ট                                      মুমিনুল হক ৬৭৩
ওয়ানডে                                  মুশফিকুর রহিম ৭৭০
টি-টোয়েন্টি                               মাহমুদউল্লাহ ৪১৪

 

সবচেয়ে বেশি উইকেট
টেস্ট                              তাইজুল ইসলাম ৪৩
ওয়ানডে                          মোস্তাফিজুর রহমান ২৯
টি-টোয়েন্টি                       মোস্তাফিজুর রহমান ২১

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads