• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
অধরা জয়ের খোঁজে মাশরাফিরা

হঠাৎ করেই দেখা। একই ফ্রেমে মাশরাফি-তামিমদের সঙ্গে বন্দিও হয়ে গেলেন বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার আল শাহরিয়ার রোকন (বাঁ থেকে চতুর্থ)। এই নেপিয়ারেই কাল থেকে শুরু হবে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ওয়ানডে সিরিজ। মাঠের খেলাতেও ক্রিকেটারদের মুখে এমন হাসি থাকবে তো

ছবি : ফেসবুক

ক্রিকেট

নিউজিল্যান্ড-বাংলাদেশ প্রথম ওয়ানডে বুধবার সকালে

অধরা জয়ের খোঁজে মাশরাফিরা

  • মাহমুদুন্নবী চঞ্চল
  • প্রকাশিত ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

২০১০ সাল। চার ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। দ্বিপক্ষীয় সিরিজ শুরুর আগে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজ জিততে পারবে, তা নিয়ে বাজি ধরার লোক ছিল না। কারণ এর আগে কিউইদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জয়ই ছিল সাকুল্যে একটি। কিন্তু অক্টোবরে মিরপুরে অনুষ্ঠিত সিরিজ এখনো সবার মনে জাগ্রত, সঙ্গে বিস্ময়েরও। রেজাল্টটা হয়েছিল রীতিমতো ভয়াবহ। প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ জেতে বাংলাদেশ। শেষটা তো হোয়াইটওয়াশ দিয়ে। তার মানে চার ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ট্রফিতে চুমু এঁকেছিল ৪-০ ব্যবধানে। রিক্ত হাতে নিউজিল্যান্ড ফেরত গিয়েছিল ভেট্টরি শিবির।

বছর তিনেক পর চিত্রটা আবারো একই রকম। ভেন্যু এবার মিরপুরের সঙ্গে ফতুল্লাও। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। বাংলাদেশ দোর্দণ্ড প্রতাপে জিতল সব ম্যাচ। ০-৩ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ নিউজিল্যান্ড। কিউইদের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে এমন সুখস্মৃতি আছে বাংলাদেশের। কিন্তু প্রসঙ্গ যখন আসে নিউজিল্যান্ডের মাটি। চিত্রটা ভোজবাজির মতো যেন পাল্টে যায়। ঠিক যেন মুদ্রার অপর পিঠ। নিউজিল্যান্ড দুইবার হোয়াইটওয়াশ হলেও বাংলাদেশের মাটিতে তাদের জয়ের রেকর্ড আছে ঠিকই। কিন্তু বাংলাদেশের বেলায় তা শূন্য। অর্থাৎ নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ওয়ানডেতে জয়ের কোনো স্মৃতিই নেই মাশরাফিদের। শুধু ওয়ানডে কেন, টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতেও তাই। সব ফরম্যাট মিলিয়ে ২১ ম্যাচেই হারতে হয়েছে নিদারুণভাবে। জয় নামক সোনার হরিণটি যেন ধরা দিচ্ছে না কোনোমতেই। এবারো কি সেই পথেই হাঁটবে বাংলাদেশ, নাকি অধরা জয়ের দেখা পাবে টিম টাইগারস?

তিন দফায় ভেঙে ভেঙে বাংলাদেশ দল গেছে সুদূর নিউজিল্যান্ডে। লক্ষ্য তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। যার শুরুটা হবে আগামীকাল থেকে। বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল ৭টায় প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ম্যাচটি হবে নেপিয়ারে। ১৬ ও ২০ ফেব্রুয়ারি হবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়ানডে। ভেন্যু ডুনেডিন ও হ্যামিল্টন। শুরুটা কেমন হবে বাংলাদেশের, তা দেখতে মুখিয়ে আছেন সবাই।

প্রস্তুতি ম্যাচের রেজাল্ট দেখলে আশা জাগতেই পারে। যদিও সেই ম্যাচে খেলতে পারেননি মাশরাফি কিংবা তামিম। আর চোটের কারণে তো কিউই সফর থেকে ছিটকে গেছেন দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তারকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ওয়ানডে প্রস্তুতি ম্যাচে ভাঙা টিম নিয়েও নিউজিল্যান্ড একাদশকে টক্কর দিয়েছে বাংলাদেশ। যদিও হার ২ উইকেটে। লিঙ্কনে আগে ব্যাট করতে নেমে ২৪৭ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। খেলা হয়নি গোটা ৫০ ওভার। যা কিছুটা শঙ্কার ব্যাপার। তবে ব্যাট হাতে ফিফটি করে আস্থার প্রতিদান দেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম। আবার বল হাতে মোস্তাফিজ, মিরাজ, মাহমুদউল্লাহরাও বেশ ভালো করেছেন। সহজে জিততে পারেনি নিউজিল্যান্ড। হারাতে হয়েছে ৮ উইকেট।

নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে ভালো করতে হলে পেসারদের জ্বলে উঠতে হবে পুরোদমে। স্পিনাররা সাফল্য পেলে তা বোনাস। এটা বেশ ভালো করেই জানা সব দলের। বাংলাদেশ টিমও সেই পরিকল্পনায় এগোবে। যদিও পেস কম্বিনেশনে কিছুটা রদবদল হয়েছে। স্কোয়াডে থাকা তাসকিন হঠাৎ ইনজুরিতে পড়ায় দেখা দেয় শূন্যতা। তার বদলে এসেছেন শফিউল। আর টেস্টে ইবাদত। কিন্তু প্রস্তুতি ম্যাচে শফিউল নিজের কারিকুরি দেখাতে পারেননি। ৫ ওভারে ৪০ রান দিয়ে থেকেছেন উইকেটশূন্য। তবে মোস্তাফিজ, রুবেল, খালেদদের ওপরই নির্ভর করতে হবে বাংলাদেশকে। প্রচণ্ড ঠান্ডা আর বাতাসপ্রবণ নিউজিল্যান্ডে সুইংনির্ভর পেস সবচেয়ে কার্যকর। সেটা করতে পারলে কাজে দেবে। আর ব্যাট হাতে তো টপঅর্ডারদের বাড়তি দায়িত্ব নিতেই হবে। বড় স্কোর গড়তে না পারলে লড়াই করা কঠিন হয়ে যাবে।

ওয়ানডেতে ৩১ মোকাবেলায় জয়ের পাল্লা ভারি নিউজিল্যান্ডেরই। ২১টি জয়। বাংলাদেশের জয় সেখানে ১০টি। এর মধ্যে আটটি জয়ই ঘরের মাঠে। বাকি দুটি জয় নিরপেক্ষ ভেন্যুতে। শেষ দুই ম্যাচের মোকাবেলার স্মৃতি বাংলাদেশের জন্য উদ্দীপনার। কারণ শেষ দুটিতেই জিতেছিল বাংলাদেশ। তাও বিদেশের মাটিতে। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে সবশেষ মোকাবেলা হয় ইংল্যান্ডের কার্ডিফে। আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। যেখানে নিউজিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এর ঠিক আগের ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে ত্রিদেশীয় সিরিজে আরেকটি জয় বাংলাদেশের। যে ম্যাচে নিউজিল্যান্ড হেরেছিল ৫ উইকেটে।

তার আগের তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের মাটিতে। রেজাল্ট ধবলধোলাই। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশ হেরেছিল ৭৭ রানের ব্যবধানে। নিউজিল্যান্ডের করা ৩৪১ রানের জবাবে বাংলাদেশ করতে পেরেছিল ২৬৪ রান। সিরিজের বাকি দুটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল নেলসনে। হারতে হয়েছিল যথাক্রমে ৬৭ রান ও ৮ উইকেটের ব্যবধানে।

নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ইতিহাস বড়ই তিক্ততার। তবে দিনবদলের সঙ্গে বাংলাদেশ দল এখন বেশ পরিপক্ব। বিশেষ করে ওয়ানডে ভার্সনে। দলের ইংলিশ কোচ স্টিভ রোডস যেমন দেশ ছাড়ার আগে বলে গেছেন, এবার কিছু ম্যাচ অন্তত জিততে চাই। কোচের সঙ্গে একমত হয়তো সবাই। মাশরাফি ব্রিগেডও হয়তো একটি জয়ের জন্য হয়ে আছে মরিয়া। সেই জয়টা শুরু হোক নেপিয়ার থেকেই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads