• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
হারে শুরু মাশরাফিদের

হারে শুরু মাশরাফিদের

ছবি : ইন্টারনেট

ক্রিকেট

হারে শুরু মাশরাফিদের

  • মাহমুদুন্নবী চঞ্চল
  • প্রকাশিত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

চোখ রাঙাচ্ছিল অতীত পরিসংখ্যান। এর ওপর ছিল প্রস্তুতির ঘাটতি। সাকিব না থাকায় কম্বিনেশনে গণ্ডগোল। আগে ব্যাট করতে নেমে টপ অর্ডারদের ভরাডুবি। অষ্টম উইকেটে জুটি না দাঁড়ালে হতো অসহায় আত্মসমর্পণ। তারপরও যে লড়াই হয়েছে, তা বলা যাবে না। যেন একপেশে ম্যাচই। নেপিয়ারের নয়নাভিরাম ম্যাকলিন পার্কে বাংলাদেশের করা ২৩২ রান নিউজিল্যান্ডের কাছে কখনোই দুঃসহ মনে হয়নি। বরং সুস্থির-অবিচল মার্টিন গাপটিলের ব্যাটে এমন টার্গেট ছিল সহজতরই। হয়নি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। কিউইদের মাটি দুর্বোধ্য ধাঁধাই হয়ে থাকল। প্রথম ওয়ানডেতে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ৮ উইকেটে হেরে মিশন শুরু হলো মাশরাফিদের।

টস পর্বটা জিতেছিলেন মাশরাফি। নিলেন আগে ব্যাটিং। কিন্তু কিউই সুইং বোলিংয়ে নাকাল টপ অর্ডার। মাঝে মিঠুন-সাইফের মানরক্ষার প্রতিরোধ। তারপরও খেলা হয়নি গোটা ৫০ ওভার। ৭ বল বাকি থাকতে বাংলাদেশ অলআউট ২৩২ রানে। জবাবে নিউজিল্যান্ড খেলেছে বাধাহীন নির্ভয়চিত্তে। বাংলাদেশের কোনো বোলারই কাঁপন ধরাতে পারেননি স্বাগতিক শিবিরে। মার্টিন গাপটিলের অপরাজিত সেঞ্চুরি, আর নিকোলসের ফিফটিতে ৩৩ বল হাতে রেখে জয়ের বন্দরে নিউজিল্যান্ড। ১১৬ বলে অপরাজিত ১১৭ রান, অনুমিতভাবে ম্যাচসেরার পুরস্কার বগলদাবা করেছেন ভারত সিরিজে ফর্ম নিয়ে প্রশ্ন ওঠা মার্টিন গাপটিল।

লক্ষ্যটা মাত্র ২৩৩। নিউজিল্যান্ড তাড়াহুড়ো করেনি। ওপেনিং জুটিতেই ১০৩ রান যোগ করেন গাপটিল ও নিকোলস। ৫৩ রান করা নিকোলসকে বোল্ড করে ফেরান মিরাজ। দলীয় ১৩৭ রানের মাথায় মাহমুদউল্লাহর এলবিডব্লিউর শিকার অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন (১১)। ওভার চলে তখন ২৮.৫। জয়ের স্বপ্ন কিছুটা হলেও উঁকি দিচ্ছিল বাংলাদেশ শিবিরে। কিন্তু শেষটা হতাশারই। গাপটিল ও টেইলর মিলে উপহার দেন চূড়ান্ত লজ্জা। দুজনের অবিচ্ছিন্ন ৯৬ রানের জুটি দলকে পাইয়ে দেয় সহজ জয়। ১১৬ বলে ১১৭ রানে অপরাজিত গাপটিল। যার ইনিংসে ছিল ৮টি চার ও ৪টি ছক্কার মার। টেইলর অপরাজিত ৪৯ বলে ছয় চারে ৪৫ রানে। প্রথম অধিনায়ক হিসেবে বাংলাদেশকে শততম আন্তর্জাতিক ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়া ম্যাচে মাশরাফি পেলেন হারের স্বাদ।

এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ফিকে হয়ে যায় প্রত্যাশার ছবি। ট্রেন্ট বোল্ট, ম্যাট হেনরির সুইং ও লকি ফার্গুসনের গতির সামনে ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের টপ অর্ডার। ৪২ রানের মধ্যে নেই ৪ উইকেট। একে একে সাজঘরে হার্ড হিটার তামিম (৫), লিটন (১), মুশফিক (৫) ও সৌম্য (৩০)।

তিনে নামা সৌম্য দারুণ খেলছিলেন। কন্ডিশন, প্রতিপক্ষের বোলিং বা পরিস্থিতির চাপ- তার ব্যাটিংয়ে ছিল না কোনো কিছুর ছাপ। দুর্দান্ত টাইমিংয়ে খেলেছেন দারুণ কয়েকটি ড্রাইভ, ফ্লিক, পুল। হেনরিকে গ্যালারিতে আছড়ে ফেলেছেন চোখধাঁধানো শটে। শেষ পর্যন্ত হেনরির অফস্টাম্পের বাইরে করা বাউন্সারে হুক করতে গিয়ে শেষ হয় তার সম্ভাবনাময় ইনিংস।

৪২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ ছিল দিশাহারা। এমন বিপর্যয় থেকে অনেকবারই দলকে টেনে তুলেছেন মাহমুদউল্লাহ। এদিন ব্যর্থ তিনিও। ফার্গুসনের গতির সামনে তাকে মনে হচ্ছিল নড়বড়ে। উইকেটও দিয়েছেন গতির ঝড় তোলা এই ফাস্ট বোলারকে। ২৯ বল খেলে তার সংগ্রহ ১৩। আইসিসি নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা সাব্বির রহমান দৃষ্টিনন্দন দুটি চার মেরেছিলেন ফার্গুসনকে। খানিক পরই বাঁহাতি স্পিনার মিচেল সান্টনারের প্রথম ওভারে সুইপ করতে গিয়ে স্টাম্পড হয়ে যান উইকেটে ভূপাতিত হয়ে।

৯৪ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর শুরু প্রতিরোধ পর্ব। মিঠুনের সঙ্গী মেহেদী হাসান মিরাজ। ৩৭ রানের জুটির পর মিরাজ আউট হন সান্টনারের বলেই বাজে এক শটে। অফস্টাম্পের অনেক বাইরের বল সুইপ করতে গিয়ে তুলেছেন আকাশে। তার সংগ্রহ ২৭ বলে ২৬। সেখান থেকেই মিঠুন ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের রেকর্ড জুটি। শুরুতে নড়বড়ে ছিলেন সাইফও। তবে টিকে যান, সময়ের সঙ্গে পান আত্মবিশ্বাস। ভরসা পেয়ে মিঠুনও এগোতে থাকেন স্বচ্ছন্দে। এই জুটিতে আসে ৮৪ রান। না হলে স্কোরটা দুশোর নিচে খাবি খেত, তা নিশ্চিত।

৯০ বলে সর্বোচ্চ ৬২ রানের ধৈর্যশীল ইনিংস খেলেন মোহাম্মদ মিঠুন। ৫৮ বলে ৪১ রান সাইফের। ১৪ বলে ৯ রান অধিনায়ক মাশরাফির। ৫০ ওভার খেলে আসার চেষ্টায় থেকে ৬ বলে শূন্য রান মোস্তাফিজের। নিউজিল্যান্ডের হয়ে বোল্ট ও সান্টনার তিনটি, হেনরি ও ফার্গুসন দুটি করে উইকেট নেন।

দ্বিতীয় ওয়ানডে আগামী শনিবার ক্রাইস্টচার্চে, ম্যাচ শুরু ভোর ৪টায়। কন্ডিশন যেখানে হতে পারে নেপিয়ারের চেয়েও আরেকটু বিরূপ। মাশরাফিদের প্রস্তুত থাকতে হবে শক্ত লড়াইয়ের জন্য।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads