স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ওপেনার তামিম ইকবালের ওয়ানডে সিরিজটা ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। তবে টেস্ট সিরিজের শুরুটা তার হলো স্বপ্নময়। তার ব্যাটিং নৈপুণ্যে বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুটাও হয় দারুণ। কিন্তু অন্যদের ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত সেই ইনিংসটাই হয়ে আসে সাধারণ মানের। তামিমের স্কোরের পেছনেও পড়েছে বাকি দশজনের মিলিত রান। ব্যাটিং হতাশার পর বাংলাদেশের বোলাররাও কোনো প্রকার আশা জাগাতে পারেননি।
গতকাল বৃহস্পতিবার হ্যামিল্টনে প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে তামিম উপহার দিয়েছেন ওয়ানডে স্টাইলের এক সেঞ্চুরি। তার সতীর্থরা একের পর এক উইকেট উপহার দিয়ে এসেছেন প্রতিপক্ষকে। তামিমের ১২৮ বলে ১২৬ রানের ইনিংসের পরও তাই বাংলাদেশ গুটিয়ে গেছে ২৩৪ রানেই। কারণ, বাকি দশজনে মিলে করেছেন মাত্র ১০৮ রান। দশজনের রান- সাদমান ইসলাম ২৪, মুমিনুল হক ১২, মোহাম্মদ মিঠুন ৮, সৌম্য সরকার ১, মাহমুদউল্লাহ ২২, লিটন দাস ২৯, মেহেদী হাসান মিরাজ ১০, আবু জায়েদ ২, খালেদ আহমেদ ০, এবাদত হোসেন ০।
লিড নেওয়ার পথে নিউজিল্যান্ড অনেকটা এগিয়ে গেছে বিকালেই। প্রথম দিন শেষে কোনো উইকেট না হারিয়ে কিউইদের রান ৮৬।
সেডন পার্কের উইকেট সবুজ ঘাসে মোড়ানো। সেখানেই টস হেরে নিতে হয়েছে আগে ব্যাটিংয়ের চ্যালেঞ্জ। শঙ্কার কারণ ছিল যথেষ্টই। কিন্তু তামিমের দারুণ সব শটে আস্তে আস্তে দূরে সরে যায় শঙ্কার মেঘ। ওয়ানডে সিরিজে তামিমের রান ছিল ৫, ৫ ও শূন্য। কিন্তু রঙিন পোশাকে বিবর্ণ সময়টুকু পেছনে ফেলে সাদা পোশাকেই হয়ে উঠলেন রঙিন। এদিন শুরু থেকেই খেলেছেন আত্মবিশ্বাসী সব শট।
উদ্বোধনী জুটিতে তামিমকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন সাদমান ইসলাম। দুজনের ব্যাটে ১০ ওভারেই ৫৩ রান তুলে ফেলে বাংলাদেশ। ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদিরা সুইং পাননি প্রত্যাশিত। বাংলাদেশের আগ্রাসন চমকে দেয় তাদের। তবে ৫৭ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে বোল্টের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে। বাতাসে অনেক পরে সুইং করা বলে আগেই ব্যাট ঘুরিয়ে ফেলে লাইন মিস করে সাদমান বোল্ড হন ২৪ রান করে। পরের জুটিতে কেবলই ‘তামিম শো’। মুমিনুল হক উইকেট আগলে রেখেছেন, তামিম শট খেলে গেছেন। বোল্টের এক ওভারে টানা তিন চারে তামিম ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন ৩৭ বলে; দেশের বাইরে তার দ্রুততম ফিফটি। ওই ওভারে বাউন্ডারি মারেন চারটি। ইনিংসটির পথে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে তামিম ছুঁয়েছেন টেস্টে ৫০০ চার। কেবল কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমই তাকে একটু শান্ত রাখতে পারছিলেন।
লাঞ্চের একটু আগে বাংলাদেশ হারায় মুমিনুলকে। তবে তামিমের সৌজন্যে তবু বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে থাকে। সাউদিকে দারুণ পুলে বাউন্ডারিতে সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ১০০ বলে। তার নবম টেস্ট সেঞ্চুরি, দেশের বাইরে চতুর্থ। সেঞ্চুরির পর সাউদির শর্ট বলের জবাব দেন তামিম পুল করে ছক্কায়। ৩৪ ছক্কায় বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ডে ছুঁয়েছেন মোহাম্মদ রফিককে। সাউদির ওই ওভারে মারেন আরো দুটি বাউন্ডারি। শেষ পর্যন্ত তাকে থামান ডি গ্র্যান্ডহোম। ২১ চার ও ১ ছক্কার ইনিংস খেলে তামিম ক্যাচ দেন গালিতে।
তামিম আউট হওয়ার আগে অন্য পাশে শুরু হয় ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়া। শরীর তাক করে ক্রমাগত বাউন্সার করে যাওয়ার ফর্মুলায় বরাবরই সফল ওয়াগনার। এদিনও ব্যাটসম্যানরা পা দিয়েছেন সেই ফাঁদে। এই বাঁহাতি পেসারের শর্ট বলে বাজে শটে ফেরেন মিঠুন ও মাহমুদউল্লাহ। মাঝে সাউদির বল ছাড়তে গিয়ে গ্লাভসে ছুঁইয়ে দেন সৌম্য সরকার। একটি করে চার ও ছক্কার পর মেহেদী হাসান মিরাজকেও শর্ট বলে ফেরান ওয়াগনার। আরেকটি শর্ট বলে লিটন দাসকে ফিরিয়ে শেষ করে দেন বাংলাদেশের ইনিংস। মাত্র ২৭ রানে শেষ ৫ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। ৪৭ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন ওয়াগনার, টেস্টে এই স্বাদ পেলেন ষষ্ঠবার।
বাংলাদেশের বোলিংয়ের শুরুটায় দলকে মনে হচ্ছিল বেশ উজ্জীবিত। আবু জায়েদ ও অভিষিক্ত পেসার এবাদত হোসেন নতুন বলে দারুণ বোলিংয়ে পরীক্ষা নেন জিত রাভাল ও টম লাথামের। টেস্ট ক্রিকেটে নিজের দ্বিতীয় বলেই উইকেট নিতে পারতেন ইবাদত। স্লিপে লাথামের ক্যাচ নিতে পারেননি সৌম্য। এরপর আর কোনো সুযোগ দেয়নি কিউইরা। দুজনই ঠান্ডা মাথায় কাটিয়ে দেন সময়টুকু। উইকেট না পেয়ে ক্রমে কমে আসে পেসারদের ধার। দুই ব্যাটসম্যানই তা কাজে লাগান। দারুণ খেলে রাভাল পেরিয়ে যান ফিফটি, ল্যাথামও জমে যান উইকেটে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৫৯.২ ওভারে ২৩৪ (তামিম ১২৬, সাদমান ২৪, মাহমুদউল্লাহ ২২, লিটন ২৯; বোল্ট ১/৬২, সাউদি ৩/৭৬, ডি গ্র্যান্ডহোম ১/৩৯, ওয়াগনার ৫/৪৭, অ্যাস্টল ০/১০)। নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংস : ২৮ ওভারে ৮৬/০ (রাভাল ৫৩*, ল্যাথাম ৩৫*)।
