• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
সৌম্য-রিয়াদের বীরত্বগাথা ইনিংস

সেঞ্চুরির পর ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেন মাহমুদউল্লাহ

ছবি : ইন্টারনেট

ক্রিকেট

হ্যামিল্টন টেস্টে বাংলাদেশের হার ইনিংস ও ৫২ রানে

সৌম্য-রিয়াদের বীরত্বগাথা ইনিংস

  • স্পোর্টস রিপোর্টার
  • প্রকাশিত ০৪ মার্চ ২০১৯

হারবে দল, এটা ছিল নিশ্চিত। ইনিংস ব্যবধানে হার এড়াতে পারবে কি-না বাংলাদেশ, সেটাই ছিল মূল লড়াইয়ের প্রতিপাদ্য। কিন্তু তাতেও ছিল ঢের সংশয়। কারণ, বাকি ছয় উইকেট নিয়ে ৩০৭ রান করার আশাটা ছিল বোকামিই।

শেষ পর্যন্ত হ্যামিল্টন টেস্টে অনুমিতভাবে বাংলাদেশ ইনিংস ব্যবধানে হার এড়াতে পারেনি সত্য। হারতে হয়েছে ইনিংস ও ৫২ রানের ব্যবধানে। কিন্তু এখানেই দেখা মিলেছে দুই ব্যাটসম্যানের বীরত্বগাথা ইনিংস। চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা আর অদম্য সাহসিকতার নিদর্শন। কিউই বোলারদের চোখে চোখ রেখে পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহ ও সৌম্য সরকারের দাপুটে ব্যাটিং। দুজনেই পেয়েছেন সেঞ্চুরি। ২৩৫ রানের জুটি এক সময় আশা জাগাচ্ছিল ইনিংস হার এড়ানোর। কিন্তু লোয়ার অর্ডারদের সীমাহীন ব্যর্থতায় তা আর সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ অলআউট ৪২৯ রানে।

প্রথম ইনিংসে তামিমের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ২৩৪ রান। জবাবে নিউজিল্যান্ড করে রেকর্ড ৭১৫/৬ (ডিক্লে.)। ৪৮১ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৪ উইকেটে ১৭৪ রান। ক্রিজে অপরাজিত ছিলেন সৌম্য (৩৯*) ও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ (১৫*)। চতুর্থ দিনে হ্যামিল্টনের চেহারাই পাল্টে দিতে শুরু করেন এই দুজন।

আগের দিন ১২৬ রানে দল চতুর্থ উইকেট হারানোর পর জুটি বেঁধেছিলেন দুজন। লড়াই করে কাটিয়ে দিয়েছিলেন শেষ সেশন। চাপ ছিল এদিন সকালেও। স্রোতের মতো এসেছে শর্ট বল। স্কিলের পরীক্ষা হয়েছে প্রতি মূহূর্তে। সৌম্য ও মাহমুদউল্লাহ জবাব দিয়েছেন দুর্দান্ত স্কিল, পরিকল্পনা ও সাহসিকতায়।

ট্রেন্ট বোল্টকে বাউন্ডারির পর ওই ওভারেই দারুণ হুক শটে ছক্কায় সৌম্য ফিফটি স্পর্শ করেন ৬০ বলে।

ওয়াগনারের শর্ট বলে দুই ইনিংসেই শাফল করে খেলে সফল হয়েছিলেন তামিম ইকবাল। সৌম্যও শাফল করে খেলে পেয়েছেন সাফল্য। তার শাফল করে খেলা শট থামাতে একপর্যায়ে শর্ট ফাইন লেগে রাখা হলো ফিল্ডার। সৌম্য সেটিও সামাল দিয়েছেন বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটিংয়ে। দিনের প্রথম ঘণ্টায় ১৪ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ৭৮ রান, যাতে ছিল ১১ চার ও ৩ ছক্কা!

বাংলাদেশের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়ার সুযোগ ছিল সৌম্যর। শেষ পর্যন্ত নতুন রেকর্ড গড়তে না পারলেও ছুঁয়েছেন ঠিকই। ৯৪ বলে করেছেন সেঞ্চুরি। ২০১০ সালে লর্ডসে ৯৪ বলে সেঞ্চুরি করে রেকর্ডটি এতদিন একার ছিল তামিম ইকবালের।

সকালের সেশনে ২৯ ওভারেই ১৩৬ রান তোলেন দুজন। লাঞ্চের পর তাদের জুটি পেরিয়ে যায় দুইশ। নিউজিল্যান্ডের বোলিং আক্রমণ কোনো প্রভাবই ফেলতে পারছিল না। চিত্র বদলে যায় দ্বিতীয় নতুন বলে। প্রথম বল থেকেই সুইং পেতে থাকেন বোল্ট। সাউদিকে যদিও ওভারে তিন বাউন্ডারি মারেন সৌম্য, তবে বোল্ড হয়ে যান বোল্টের সুইংয়ে ব্যাট-প্যাডের মাঝে ফাঁক রেখে। ১৭১ বলে ১৪৯ রানের ইনিংস তার প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারেও সর্বোচ্চ। ২১টি চারের সঙ্গে ইনিংসে সৌম্যর ছক্কা ছিল ৫টি।

মাহমুদউল্লাহকে থামাতে পারেনি নতুন বলও। সাউদিকে টানা দুটি বাউন্ডারিতে সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ১৮৩ বলে। ২০১০ সালে এই হ্যামিল্টনেই করেছিলেন টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। এবার সেঞ্চুরি করলেন অধিনায়ক হিসেবে। সেঞ্চুরির পরও দাপুটে সব শট খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ। ওয়াগনারকে টানা দুটি হুক শটে ফেলেছেন গ্যালারিতে, নান্দনিক শটে টানা দুই চার বোল্টকে। পেরিয়ে যান নিজের আগের সেরা ১৩৬ রান।

কিন্তু আরেক পাশে লিটন দাস, মেহেদী হাসান মিরাজরা ছিলেন বাজে খেলার তালে। সঙ্গী না পেয়ে দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় কাটা পড়েন মাহমুদউল্লাহ।

অসাধারণ ইনিংসটি থামে ২১ চার ও ৩ ছক্কায় ২২৯ বলে ১৪৬ রানে। লিটন ও মিরাজ দুজনের রানই সমান, ১। আবু জায়েদ, খালেদ ও ইবাদত বল হাতে শতরান দিলেও ব্যাট হাতে নিষ্ফল। শেষের দিকে একটি জুটিও যদি দাঁড়াতে পারত, অন্তত ইনিংস হারের লজ্জা থেকে রেহাই পেত বাংলাদেশ। কিন্তু হয়নি। প্রথম ইনিংসে মাত্র ২৩৪ রানে অলআউট হওয়ার চিত্রটা তাই বেশি করে কষ্ট দিচ্ছে বাংলাদেশকে। প্রথম ইনিংসটা একটু সমৃদ্ধ হলে ম্যাচের আবহ পাল্টে যেতে পারত।

দ্বিতীয় টেস্ট ৮ মার্চ ওয়েলিংটনে। যেখানে বাতাসের আধিপত্যই নাকি বেশি। তবে হ্যামিল্টনে দ্বিতীয় ইনিংসে সৌম্য ও মাহমুদউল্লাহর বুক চিতিয়ে প্রতিরোধের চিত্র হয়তো উজ্জীবিত করবে টাইগারদের ওয়েলিংটনে। যেখানে বল হাতে দেখা যাবে কাটার স্পেশালিস্ট মোস্তাফিজকেও।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads