• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
দারুণ শুরুর পরও সেই বাংলাদেশ

কঠিন উইকেটেও দারুণ জুটি তামিম ও সাদমানের। দৌড়াচ্ছেন রানের জন্য। কিন্ত্তু এই জুটি বিচ্ছিন্নের পর হতাশার চিত্র বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে। তবে বল হাতে শুরুটা দুর্দান্ত করেছেন রাহী (ডানে)

ছবি : বিসিবি

ক্রিকেট

দারুণ শুরুর পরও সেই বাংলাদেশ

  • স্পোর্টস রিপোর্টার
  • প্রকাশিত ১১ মার্চ ২০১৯

বৃষ্টির কারণে প্রথম দুই দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল রোববার দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিনে কিছুটা সময় বাদে মোটামুটি ভালোই খেলা হয়েছে। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের দলের জন্য তাই চ্যালেঞ্জ ছিল অনেক বেশি। এরপরও বাংলাদেশের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। কিন্তু সুইং সামাল দেওয়া ব্যাটসম্যানদের তাড়া করল শর্ট বলের পুরনো ভূত। ব্যাটিং ধসে দুই সেশনেই শেষ হলো ইনিংস। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে গেছে মাত্র ২১১ রানে। প্রথম টেস্টেও প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ করেছিল মাত্র ২৩৪ রান। দিনশেষে নিউজিল্যান্ড করেছে ২ উইকেটে ৩৮। বোলাররা কতটুকু করবেন সেটা পরের কথা। কিন্তু ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ রয়ে গেলে সেই প্রথম টেস্টের অবস্থায়।

এক পর্যায়ে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১১৯। লাঞ্চের সময় রান ছিল ৩ উইকেটে ১২৭। কিন্তু দ্বিতীয় সেশনে বিধ্বস্ত হয়েছে ৭ উইকেট হারিয়ে। প্রথম টেস্টে কিউইদের অন্যতম নায়ক নিল ওয়াগনার এবার শর্ট বলের ছোবলে নিয়েছেন চার উইকেট। প্রথম স্পেলে বিবর্ণ বোল্ট পরে তিন ওভারে তিন উইকেট নিয়ে গুটিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের ইনিংস।

অথচ বাংলাদেশের শুরুটা ছিল দারুণ। চ্যালেঞ্জিং কন্ডিশন ও উইকেটে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নেমেছিল অনেক শঙ্কাকে সঙ্গী করে। কিন্তু তামিম ইকবাল ও সাদমান ইসলামের প্রত্যয়ী ব্যাটিং সরিয়ে দিয়েছিল শঙ্কার মেঘ। ম্যাচের দ্বিতীয় বলে দারুণ এক ড্রাইভে বাউন্ডারিতে শুরু করা তামিম খেলেছেন চোখধাঁধানো সব শট। সুইংয়ের আশায় কিউই পেসারদের করা ফুল লেংথ বলে খেলেছেন নান্দনিক সব ড্রাইভ। শর্ট বলের সাজা দিয়েছেন কাট-পুলে।

আরেক পাশে সাদমান ছিলেন বেশ সতর্ক। অনভিজ্ঞ হলেও তার ব্যাটিংয়ে ছিল না অস্বস্তি। বল ছাড়া ও ঠেকানোর ফাঁকে দারুণ কিছু শট খেলেছেন তিনিও। ৪ স্লিপ, ১ গালি রেখে বোলিং শুরু করেছিলেন ট্রেন্ট বোল্ট। ক্রমে ছড়াতে থাকে ফিল্ডিং। দ্বাদশ ওভারেই বাংলাদেশ ছুঁয়ে ফেলে পঞ্চাশ। তাতে গড়া হয়ে যায় বিরল এক কীর্তি। এটি ছিল সিরিজে বাংলাদেশের টানা তৃতীয় অর্ধশত রানের উদ্বোধনী জুটি। নিউজিল্যান্ডে কোনো সফরকারী দলের শুরুর জুটি টানা তিন ইনিংসে পঞ্চাশ ছুঁয়েছে টেস্ট ইতিহাসে কেবল আর একবারই। ১৯৯৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা এটি পেরেছিল গ্যারি কারস্টেন ও হার্শেল গিবসের জুটিতে।

শেষ পর্যন্ত জুটি ভাঙেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। স্পেলের ষষ্ঠ ওভারে অ্যাঙ্গেল বদলে রাউন্ড দ্য উইকেটে এসে সাদমানকে ফেরান ২৭ রানে। আগের টেস্টে ৫৭ ও ৮৮ রানের পর এবার বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটিতে এসেছে ৭৫ রান।

সঙ্গীকে হারিয়েও তামিমের ছন্দপতন হয়নি। শুরুতে একটু নড়বড়ে মনে হলেও পরে সামলে নেন তিনে নামা মুমিনুল হক। গড়ে উঠছিল আরেকটি সম্ভাবনাময় জুটি।

কিন্তু লাঞ্চের আগে সব এলোমেলো করে দেন নিল ওয়াগনার। কিউই অধিনায়ক লম্বা সময় আস্থা রেখেছিলেন সুইং বোলারদের ওপর। প্রথম ৩০ ওভারে তাই বোলিং পাননি ওয়াগনার। শেষ পর্যন্ত তার শর্ট বলই হয়েছে কার্যকর।

আগের টেস্টের মতোই লেগ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বল ছাড়তে গিয়ে গ্লাভস ছুঁইয়ে দিয়েছেন মুমিনুল। ভেঙেছে ৪৪ রানের জুটি। লাঞ্চের ঠিক আগের বলে অফস্টাম্পের বাইরের শর্ট বলে ব্যাট ছুঁইয়ে দিয়েছেন মোহাম্মদ মিঠুন।

লাঞ্চের পর দ্বিতীয় ওভারে ওয়াগনার দিয়েছেন সবচেয়ে বড় ধাক্কা। শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে সহজ ক্যাচ তুলে দিয়েছেন তামিম। ১০ চারে ১১৪ বলে ৭৪ রানের দারুণ ইনিংসের শেষটি হতাশার।

দলের হতাশা পরে বেড়েছে আরো। আগের টেস্টের দুই সেঞ্চুরিয়ান সৌম্য সরকার ও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও ফিরেছেন উইকেট উপহার দিয়ে। ম্যাট হেনরিকে মাথার ওপর দিয়ে দুর্দান্ত ছক্কায় উড়িয়েছিলেন সৌম্য। আউটও হয়েছেন দলে ফেরা এই পেসারের শর্ট বলে। ওয়াগনারের লেংথ বল শর্ট ভেবে বিভ্রান্ত হয়ে উইকেট দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। লাঞ্চের পর টানা ১০ ওভারের স্পেলে বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দেন ওয়াগনার।

এরপর কিছুটা লড়েছেন লিটন দাস। তাইজুল ইসলামও চেষ্টা করেছেন সাধ্যমতো। সপ্তম উইকেটে ৩৮ রানের জুটি গড়েছেন দুজন। কিন্তু শেষ দিকে ছোবল দেন বোল্ট। এক ওভারে ফেরান তাইজুল ও মোস্তাফিজুর রহমানকে।

লিটনকে ৩৩ রানে ফিরিয়ে সাউদি নিয়েছেন প্রথম উইকেট। ৫ রানের মধ্যে শেষ ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ থমকে গেছে চা বিরতির আগেই।

ব্যাটিংয়ের মতো বোলিংয়ের শুরুতেও বাংলাদেশ ছিল দাপুটে। সহায়ক উইকেটে নতুন বলের উপযুক্ত ব্যবহারে আবু জায়েদ ও ইবাদত হোসেন ছাপিয়ে যান বোল্ট-সাউদিকে। বাংলাদেশের দুই পেসারই ছিলেন অসাধারণ। দারুণ লাইন-লেংথ-সুইংয়ে ভোগান জিত রাভাল ও টম লাথামকে।

নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনারকেই ফেরান আবু জায়েদ। দুই পেসারের প্রথম ৮ ওভার শেষে কিউইদের রান ছিল ৮। ৪ ওভারে ৩ রান দিয়েছিলেন ইবাদত, ৪ ওভারে ৫ আবু জায়েদ।

রস টেইলর নেমে শুরু করেন পাল্টা আক্রমণ। ৪টি চারে ১৯ করে ফেলেন ১৩ বলে। লড়াইটা যখন জমে উঠছে, বৃষ্টি হানা দেয় আবার। ২৫.২ ওভার আগেই শেষ হয় দিনের খেলা।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads