• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
‘সবার আগে চাই নিরাপত্তা’

সুজন

ছবি : সংগৃহীত

ক্রিকেট

‘সবার আগে চাই নিরাপত্তা’

  • স্পোর্টস রিপোর্টার
  • প্রকাশিত ১৭ মার্চ ২০১৯

পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে আইসল্যান্ডের পরই অবস্থান নিউজিল্যান্ডের। সেখানেও ঘটল মর্মান্তিক ঘটনা। বর্ণবাদের জের ধরে মসজিদে নামাজ পড়া অবস্থায় জীবন দিতে হলো অর্ধশতাধিক মুসল্লিকে। ক্রাইস্টচার্চের সেই ঘটনায় অল্পের জন্য বেঁচে যায় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলও। প্রেসমিটে মাহমুদউল্লাহকে বাড়তি কয়েকটি প্রশ্ন করায় হয় সময় ক্ষেপণ, যা হয়ে দাঁড়ায় শাপেবর। মিনিট পাঁচেক আগে মসজিদে ঢুকলেই করুণ পরিণতি হতো ক্রিকেটারদের। ভাগ্য ভালো তা হয়নি। শেষ টেস্ট না খেলেই দেশের পথে রওনা দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহরা।

বাংলাদেশে খেলা হলে বিদেশি দলগুলোর প্রবল আপত্তি থাকে নিরাপত্তা নিয়ে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগে দেখানো হয় দলগুলোকে। তারপর হয় খেলা। বাংলাদেশের বেলায় হয়তো তা উল্টো। বিদেশ সফরের সময় নিরাপত্তা নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা থাকে না। বিষয়টি এমন, নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের ঘটনা বাঁক বদলে দিয়েছে। এখন কোনো দেশেই নিশ্চিন্তে সফর করা বোকামি। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য তো আরো ভয়াবহ। আর তাই শান্তির দেশ হিসেবে যত তকমাই থাকুক না কেন, বিদেশ সফরের আগে সবার আগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তারপর খেলা। এমন দাবিই করেছেন বিসিবির ডিরেক্টর ও সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন। 

গতকাল সুজন বলেন, ‘এখানে যখন ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া কিংবা নিউজিল্যান্ড আসে তখন পুরো সিকিউরিটি দল আসে। আমাদের হোটেল চেক করে, রাস্তাঘাট দেখে। কোন রাস্তা দিয়ে বাস আসবে এবং কোন দিক দিয়ে হোটেলে যাবে প্রত্যেকটি জিনিস দেখে। এমনকি প্রত্যেকটি ভেন্যুতেই যায়। আমার মনে হয় বাংলাদেশেরও এমন করা উচিত। কারণ ওরাও আন্তর্জাতিক দল, আমরাও আন্তর্জাতিক দল। আর আপনি কোথাও বলতে পারবেন না নিরাপদ। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে যদি এমন একটি ঘটনা ঘটতে পারে তাহলে বলা যায় বিশ্বের কোথাও এখন নিরাপত্তা নেই আসলে। সেক্ষেত্রে প্রতিটি সফরের আগেই আমাদের নিরাপত্তা দল যাওয়া উচিত বলে আমার মনে হয়। কোথায় কী আছে সব দেখা উচিত।’

ক্রাইস্টচার্চের সেই ভয়াল ঘটনার পর ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা হয়েছিল সুজনের। সবার কণ্ঠ ছিল ভীতসন্ত্রস্ত। তিনি বলেন, ‘দ্রুতই সবার সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। রিয়াদ, তামিম, তাইজুল, পাইলটের সঙ্গে কথা হয়। তখনই ওরা বেশ ভীত, বাস থেকে নামার পরই আমাকে ওরা ফোন করেছিল। তখন কাউকে পাচ্ছিল না, সকাল ছিল অনেক। কথা হয়েছে এবং আমি তাদের কণ্ঠ শুনেই বুঝেছি কতটা ভীত তারা। স্বাভাবিকভাবেই আপনি যদি চোখের সামনে এমন কিছু দেখেন এবং আপনি জানেন যে যদি এক মিনিট পরে ঘটনাটি ঘটত তাহলে কিছু হতে পারত। তাই স্বাভাবিকভাবেই ভীতবিহ্বল থাকার কথা। খেলতে গিয়ে এমন একটি ঘটনা দেখা- অবশ্যই ভালো কিছু নয়।’

নিরাপত্তা নিয়ে বাংলাদেশের আরো সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়োজন বলেও মনে করেন সুজন। তিনি বলেন, ‘অন্য দেশগুলো নিরাপত্তার ব্যাপারে যেভাবে সচেতন থাকে আমাদের দেশেরও সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। সেটি যেখানেই খেলা হোক, ইংল্যান্ড কিংবা অস্ট্রেলিয়া হোক, আমাদের বাংলাদেশে যে নিরাপত্তা দল আছে তারা যাবে এবং নিরাপত্তা নিয়ে আলাপ করবে। কারণ আপনি দেখেন যে আমাদের সরকারও আমাদের দারুণভাবে সাহায্য করে এখানে। এর আগেও যখন আমাদের বাংলাদেশের খেলা নিয়ে একটি সংশয় দেখা দিয়েছিল তখন সরকার কিন্তু সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিরাপত্তা দিয়েছিল। আমার মনে হয় প্রত্যেকটি দেশের সরকারকেই এমনটা দেওয়া উচিত। বাংলাদেশ কিন্তু সফরকারী দলগুলোকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাটাই দেয়।’

বিদেশ সফরের সময় দলের সঙ্গে নিরাপত্তা দল পাঠানো যায় কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে সুজন বলেন- ‘নিরাপত্তা আরোহী নিয়োগ দেওয়া পুরোপুরি বিসিবির ব্যাপার। তারাই আসলে সিদ্ধান্ত নেবে যে কে যাবে বা যাবে না। মিডিয়া ম্যানেজার যাবে কি না সেটি বোর্ড ঠিক করবে। প্রেসিডেন্ট আছেন, উনি বলবেন এটি। অবশ্যই আমার মনে হয় যেহেতু এমন একটি ঘটনা ঘটেছে এবং অহরহ ঘটছে এখন সেক্ষেত্রে প্রথমত নিরাপত্তা ঠিক করাটা আমি মনে করি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আর আমাদের এখানে একজন সিকিউরিটি ম্যানেজার আছেন। যেমন বিদেশ থেকে যিনি আসেন তিনি কতটাই বা ওয়াকিবহাল আমাদের সম্পর্কে। কোথায় আমাদের ডেঞ্জার জোন বা কোথায় কী এগুলো সম্পর্কে তো তিনি জানবেন না। মূল কথা হলো বাংলাদেশ থেকে যদি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হয় তাহলে কিন্তু ম্যানেজার দরকার নেই।’

শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে নিউজিল্যান্ড সম্পর্কে সুজন বলেন, ‘আমরা সব সময় নিউজিল্যান্ডকে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে দেখেছি। ওখানে রাস্তায় যখন-তখন হেঁটেছি। মনে হয়নি এমন কিছু ঘটতে পারে। আবার যখন জিম্বাবুয়েতে যাই, তখন নিরাপত্তা সমস্যাটি থাকে। আমরা সেখানে সন্ধ্যার পর বের হতে পারব না সেটি জানি। যারাই সফর করেছে তারাই জানে। আমরা বলে দিতাম যে রাত হওয়ার পর আর একা যাওয়া যাবে না কোথাও। দশ কিংবা পাঁচজনের গ্রুপও যাওয়া যাবে না। আমরা অনুমতি দিতাম না দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গেও। কারণ এখানে সন্ধ্যার পর অনেক কিছু ঘটে। দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ড থেকে আমাদের ক্লিয়ারেন্স দেয়। তারা অনেক নিরাপত্তা দেয়। ওখানে প্রয়োজন বলেই সেটি করে তারা। কিন্তু নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড বা সরকার মনে করেছে সেখানে এত নিরাপত্তা দেওয়ার দরকার নেই এবং এমন কিছু হয়নি কোনো সময়। এই কারণে নিরাপত্তা শিথিল ছিল হয়তোবা। তবে এখন থেকে আমাদের নিজেদের তাগিদেই বলতে হবে যে আমরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা চাই আমাদের দলের জন্য সেটি যত শান্তিপূর্ণ দেশই হোক না কেন।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads