• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯

ক্রিকেট

স্মলির চোখে ব্যর্থতার কারণ

  • স্পোর্টস রিপোর্টার
  • প্রকাশিত ২২ মার্চ ২০১৯

পুরুষরা যেখানে টানা ব্যর্থ, সেখানে বাংলাদেশের মেয়েরা বয়সভিত্তিক পর্যায়ে সাফ কিংবা এশিয়া অঞ্চলে দারুণ সাফল্য দেখিয়ে আসছে। কিন্তু সিনিয়র পর্যায়ে দল ছোটে উল্টো পথে। মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের পঞ্চম আসরে সেমিফাইনাল থেকে বাংলাদেশ বাদ পড়ার পর ব্যর্থতার কারণ হিসেবে বাফুফের টেকনিক্যাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক ডিরেক্টর পল স্মলি জানালেন, বয়সভিত্তিক দলে সাফল্য পাওয়া তরুণ খেলোয়াড়দের ওপর জাতীয় দলের অতি নির্ভরতার কথা।

নেপালে এবারের নারীদের সাফে বাংলাদেশ দলের ২০ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে নয়জন ছিল অনূর্ধ্ব-১৬, ১০ জন অনূর্ধ্ব-১৮ দলের। কুড়ি পার হওয়া একমাত্র খেলোয়াড় সাবিনা খাতুন। স্মলির হিসাব অনুযায়ী জাতীয় দল গড়তে বাংলাদেশের সঞ্চয় মোটে ৪০ থেকে ৪৫ জন খেলোয়াড় এবং বেশিরভাগই বয়সভিত্তিক দলের।

দক্ষিণ এশিয়ার মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৫ প্রতিযোগিতায় দলের সাফল্য চোখে পড়ার মতো। ২০১৭ সালের প্রথম আসরে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন; ২০১৮ সালে ভারতের কাছে হেরে রানার্সআপ। অনূর্ধ্ব-১৮ বিভাগে ২০১৮ সালে হওয়া একমাত্র আসরে নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল দল। কিন্তু জাতীয় দলে আর সাফল্যের খোঁজ মেলে না। সাফের পাঁচ আসরে তিনবার সেমিফাইনাল, একবার গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ। সেরা সাফল্য ২০১৬ সালে রানার্সআপ হওয়া। এবার নেপালে গ্রুপ পর্বে এক জয় ও এক হারের পর সেমিফাইনালে ভারতের কাছে ৪-০ গোলে হার। তিন ম্যাচে ২ গোল দিয়ে ৭ গোল খেয়েছে দল। আড়াই বছর ধরে বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে কাজ করা স্মলি তাই সমস্যার কারণ খুঁজে পেলেন। ‘শুরুর একাদশে আমাদের চারজন ছিল অনূর্ধ্ব-১৬ দলের। সাবিনা ছাড়া বাকিরা অনূর্ধ্ব-১৮ দলের। আমি মনে করি, জাতীয় পর্যায়ে নেপাল ও ভারতের সঙ্গে তাই বাংলাদেশের তুলনা করা ঠিক নয়। কেননা তাদের বয়সভিত্তিকের বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক খেলোয়াড় আছে। অথচ বাংলাদেশের একটা গ্রুপ বয়সভিত্তিকের একাধিক পর্যায়ে খেলে। বয়সভিত্তিকের প্রতিটি দলে আমাদের অনেক খেলোয়াড় পেতে হবে। জাতীয় দলের জন্য থাকতে হবে পর্যাপ্ত সিনিয়র খেলোয়াড়, যাদের বয়স এবং অভিজ্ঞতা দলে ভারসাম্য আনবে। কেননা তারা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, চাপ নিতে এবং পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে। যেটা তরুণরা পারে না।’

চলতি সাফে খেলা ভারতের খেলোয়াড়দের গড় বয়স ২১ বছর ৪ মাস; নেপালের আরেকটু বেশি। বাংলাদেশের গড় বয়স ১৭ বছর ৪ মাসের কাছাকাছি। গ্রুপ পর্বে দুর্বল ভুটানের বিপক্ষে তেমন কোনো পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়নি রক্ষণভাগকে। কিন্তু সাফের চারবারের চ্যাম্পিয়ন ভারত এবং তিনবারের রানার্সআপ নেপালের মুখোমুখি হতেই বার বার ভেঙে পড়লেন মাসুরা-শিউলি-আঁখিরা। মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণহীন মনিকা-কৃষ্ণারা। আক্রমণভাগে ব্যর্থ হলেন সাবিনা-স্বপ্নারা।

বয়সভিত্তিক পর্যায়ে আক্রমণাত্মক খেলার অভ্যাস বাংলাদেশের। সাফল্যও মেলে ওই ছকে। অভ্যাস না থাকায় জাতীয় দলে এসে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে রক্ষণে খাবি খান শিউলি-মাসুরারা। রক্ষণ নিয়ে সাফের আগে কাজ হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে স্মলি জানালেন, বয়সের পার্থক্য সমস্যার অন্যতম কারণ। ‘দেখুন তিন-চার বছরের ব্যবধানও স্থানভেদে অনেক। ইউরোপের যে খেলোয়াড়টির বয়স ১৭-১৮ বছর, তার টেকনিক্যাল এবং ট্যাকটিক্যাল জ্ঞান এই উপমহাদেশের ১৭-১৮ বছরের বয়সীদের চেয়ে বেশি। তাছাড়া জাতীয় দলে আসার একটা পদ্ধতি আছে; আপনাকে বয়সভিত্তিক বিভিন্ন পর্যায় পেরিয়ে আসতে হবে। একটা নির্দিষ্ট জাতীয় দল থাকলে আপনি আন্তর্জাতিক ম্যাচ, প্রীতি ম্যাচ এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় খেলে উন্নতি করতে পারবেন। এই মেয়েরা বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলে খেলবে আবার সাফে এবং আমি যদি আশা করি, তারা ভারত, নেপালের সঙ্গে লড়াই করবে, এটা খুবই অন্যায্য চাওয়া। এই দলের গোলরক্ষক রুপনা চাকমা, আঁখি, শামসুন্নাহার অনূর্ধ্ব-১৬ দলের। মাসুরা, শিউলি অনূর্ধ্ব-১৮ দলের। এরা বয়সভিত্তিকের ওই পর্যায়ে পারফর্ম করতে পারে। এ কারণে আমরা এএফসি অনূর্ধ্ব-১৯ প্রতিযোগিতায় সমস্যায় পড়েছিলাম; তারা ভুল করেছিল। তাছাড়া জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ না খেলাটাও অন্যতম কারণ।’

তিনি বলেন, ‘সিনিয়র পর্যায়ে ভালো করতে হলে আমাদের নির্দিষ্ট একটা দল থাকতে হবে। প্রচুর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে হবে। মেয়েদের জন্য লিগ থাকাটাও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads