• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
ক্রিকেট রোমাঞ্চের আবাহন

ছবি : সংগৃহীত

ক্রিকেট

বিশ্বকাপের পর্দা উঠছে আজ

ক্রিকেট রোমাঞ্চের আবাহন

  • মাহমুদুন্নবী চঞ্চল
  • প্রকাশিত ৩০ মে ২০১৯

পরীক্ষিত ১০ দল, ১১টি নয়নাভিরাম ভেন্যু, ৪৮টি রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচ, ৪৬ দিনের রুদ্ধশ্বাস লড়াই। এ কারণেই হয়তো দ্য ওভালের প্রবেশ পথে বড় করে লেখা, ‘দি ওয়ার্ল্ডস গ্রেটেস্ট ক্রিকেট সেলিব্রেশন।’ বিশ্বকাপ ক্রিকেট; ২২ গজের কমব্যাট জোটে ব্যাট-বলের জমাটি লড়াই। ক্রিকেটের মক্কা খ্যাত দ্য ওভালে আজ থেকেই শুরু সেই ময়দানি লড়াই। স্বাগতিক ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠবে দ্বাদশ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের। দেড় মাসের এই ক্রিকেটযজ্ঞে মেতে উঠবে ভক্ত-অনুরাগীরা। এখন শুধুই ক্রিকেট উপভোগের পালা।

এমন মহাযজ্ঞে আছে বাংলাদেশের নামও। ১০ দলের একটিতে রোমাঞ্চের আবাহন ছোটাতে প্রস্তুত মাশরাফি ব্রিগেড। ধারে-ভারে, পরিসংখ্যানে; এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ এক সমীহজাগানো দল। ওয়ানডে ফরম্যাট বলেই আত্মবিশ্বাসের পারদটা তরতর করে ওপরে উঠছে। কারণ গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ এক বদলে যাওয়া দলের নাম। বিশেষ করে ২০১৫ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পর থেকে। নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় যৌথভাবে আয়োজন করা সেই বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ রচনা করেছিল ইতিহাস। পরাক্রমশালী ইংল্যান্ডকে পরাস্ত করে উঠে গিয়েছিল প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে। সেমির স্বপ্ন অধরা থেকে গেছে। তবু সেটিই এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে সেরা সুখস্মৃতি বাংলাদেশের।

এবারের ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে টাইগারদের নিয়ে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের ক্রিকেটামোদীদের প্রত্যাশা আকাশচুম্বী। কারণটা মাশরাফিদের তেতে ওঠা পারফরম্যান্স। আবার এই ইংল্যান্ডের মাটিও বড় অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে। ২০১৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ খেলেছিল সেমিফাইনাল। ফাইনাল খেলার সৌভাগ্য না হলেও এবারের বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের ট্রফি মাশরাফিদের স্বপ্নের ভিত আরো মজবুত করছে।

১০ দল। রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতি। তার মানে, প্রত্যেক দল সবার সঙ্গে একটি করে ম্যাচ খেলবে। এমন ফরম্যাট আশার পালে জোর হাওয়া দিচ্ছে। নয়টি করে ম্যাচ পাবে সব দল এই রাউন্ডে। শুরুতে হোঁচট খেলেও পুষিয়ে নেওয়ার যথেষ্ট সুযোগ আছে। সব মিলিয়ে ৫টি জয় পেলে সেমিতে খেলার আশা করতে পারে যে কোনো দল। দলীয় শক্তিমত্তা, পরিসংখ্যান আর ইংল্যান্ডের মাটি হিসাব করলে পাঁচটি জয় বাংলাদেশের জন্য বড় কিছু নয়। কারণ বদলে যাওয়া এই টাইগার শিবির প্রবল-দোর্দণ্ড প্রতিপক্ষের চোখেও চোখ রেখে কথা বলার সাহসটা রপ্ত করেছে আগে থেকেই। সব মিলিয়ে সুদূর ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ হলেও এর রোমাঞ্চ প্রতিনিয়ত ছুঁয়ে যাবে এই বঙ্গদেশে।  

ক্রিকেটের এই মহাযজ্ঞকে সফল করতে সব প্রস্তুতিই চূড়ান্ত করেছে ইংল্যান্ড। এবারের আসরটি বিশ্ব ক্রিকেটকেই চমকে দিতে পারে বলে ধারণা সাবেক গ্রেটদের। ইতোমধ্যে বর্ণিল উদ্বোধনী হয়ে গেছে। গত রাতে বাকিংহাম প্যালেসের সামনে বিখ্যাত ‘দ্য মলে’ দেখা মিলেছে জমকালো উদ্বোধনী। নববধূর সাজে দ্য মলে ছিল নানা রকম খেলাধুলা, গান-বাজনা ও আতশবাজির বর্ণিল ছটা। গ্রীষ্মকালের এই বিশ্বকাপ ক্রিকেট নিয়ে শুধু ইংলিশরাই নয়, রোমাঞ্চিত গোটা ক্রিকেট দুনিয়াও।

গত রাতে উদ্বোধনী হলেও ব্যাট-বলের লড়াই আজ থেকে। ওভালে ক্রিকেটযজ্ঞের শুরুর ম্যাচে মাঠে নামবে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশ বছর পর স্বাগতিকের মর্যাদা পাওয়া ইংল্যান্ড র্যাংকিংয়ে এক নম্বর দল হিসেবে খেলতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ। তুঙ্গে থাকা পারফরম্যান্সের সঙ্গে ঘরের মাঠের সুবিধা। রসায়ন বেশ। মাঠে নামার আগেই শিরোপা স্বপ্নে বিভোর যেন ইংলিশ শিবির। যদিও সর্বোচ্চ (তিনবার) ফাইনাল খেললেও এই শিরোপা এখনো অধরা তাদের। ঘরের মাঠে এবার সেই স্বপ্ন পূরণে বেশ মরিয়া ইংল্যান্ড। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য বিশ্বকাপের ফাইনাল এখনো দূরের বাতিঘর। চারবার সেমিফাইনাল খেললেও স্পর্শ করা হয়নি ফাইনালের মঞ্চ। চাকার অপবাদ এখনো গায়ে তাই লেপ্টে আছে বরাবরের মতো। 

ইতিহাস পেছনে ফেলে উদ্বোধনী ম্যাচে পাখির চোখ করে আছে দুই দলই। লক্ষ্য একটাই জয় দিয়ে মিশন শুরু করা। ঘরের মাঠ, সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় আজকের ম্যাচে এগিয়ে আছে ইংল্যান্ড। তবে হেড টু হেডের বিবেচনায় দক্ষিণ আফ্রিকা এগিয়ে। ওয়ানডে ক্রিকেটে দু্ই দল মুখোমুখি হয়েছে ৫৯ বার। তাতে ২৯টি জয় দক্ষিণ আফ্রিকার। ২৬ জয় ইংল্যান্ডের। তিনটি ম্যাচ পরিত্যক্ত, এক ম্যাচ টাই।

আজ থেকে বিশ্বকাপের পর্দা উঠলেও বাংলাদেশের মিশন শুরু হবে আগামী ২ জুন থেকে। লন্ডনের ওভালে টাইগারদের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। উদ্বোধনী ম্যাচের দিকেই তাই মাশরাফিরা পরখ করবে প্রোটিয়াদের পারফরম্যান্স। প্রতিপক্ষের দুর্বলতা খুঁজে বের করাই যেখানে মুখ্য। তবে গোটা বাংলাদেশের আপামর জনগণ তাকিয়ে থাকবে কিন্তু আবার মাশরাফিদের দিকেই। ক্রিকেটারদের সাফল্য কামনায় উন্মুখ গোটা দেশ। মাশরাফিদের কাঁধে ভক্তদের প্রত্যাশার পাহাড়সম চাপ। সব চাপ সামলে ইংল্যান্ডের বুকে দেখা মিলুক তেড়েফুড়ে ওঠা এক বাংলাদেশকে। গর্জে উঠুক টাইগাররা।  সাত সমুদ্দুর তেরো নদীর ওপারে গর্বের সঙ্গে উড়ুক বাংলার লাল-সবুজ পতাকা। এমন প্রার্থনা এখন সবারই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads