• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
পরাজয়েও উজ্জ্বল সাকিব

ছবি : সংগৃহীত

ক্রিকেট

পরাজয়েও উজ্জ্বল সাকিব

  • মাহমুদুন্নবী চঞ্চল
  • প্রকাশিত ০৯ জুন ২০১৯

কঠিন লক্ষ্য। পাহাড়সম চাপ। জিততে হলে করতে হবে বিশ্বরেকর্ড। ৬৩ রানের মধ্যে দুই ওপেনার যখন সাজঘরে, আশার প্রদীপ তখন থেকেই কাঁপছে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে চোখে চোখ রেখে তাও কথা বললেন সাকিব। উপহার দিলেন ঝলমলে এক সেঞ্চুরি। কিন্তু তার বিদায়ে ছন্দপতন। স্বপ্নটা জেঁকে ধরে তখন ফিনিশারের তকমা লাগানো মাহমুদউল্লাহ-মোসাদ্দেক জুটির ওপর। এ দুজন একটু আশা জাগালেও পূর্ণতা পায়নি কঠিন লক্ষ্য স্পর্শ করা। গড়া হয়নি দুরূহ রেকর্ডও। কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে অনুমিতভাবে ইংল্যান্ডের কাছে ১০৬ রানে হেরেছে বাংলাদেশ।

টস-ভাগ্য ছিল বাংলাদেশেরই। ইংল্যান্ডকে মাশরাফির ব্যাটিং আমন্ত্রণ। টাইগার বোলারদের তুলোধুনো করে বিশ্বকাপে নিজেদের সর্বোচ্চ স্কোর গড়ে ইংল্যান্ড, ৬ উইকেটে ৩৮৬। জবাবে ইংলিশ পেসারদের বাউন্সেই নাকাল বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। বাউন্স মোকাবেলা করে যা লড়াই করেছেন একমাত্র সাকিব। বাকিদের কারো নেই উল্লেখযোগ্য স্কোর। পুরো ৫০ ওভারও খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। সাত বল বাকি থাকতে ২৮০ রানে অলআউট মাশরাফি ব্রিগেড।

জিততে হলে করতে হবে ৩৮৭ রান। এমন টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে কার্যত ব্যর্থ বাংলাদেশের দুই ওপেনার সৌম্য ও তামিম। দলীয় ৮ রানে সবার আগে বিদায় সৌম্য (২)। তামিম বেশি বল খেলে থিতু হতে চেয়েও পারেননি (২৯ বলে ১৯)। তৃতীয় উইকেট দলের বিপর্যয় সামাল দেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। এই জুটিতে আসে ১০৬ রান, যা বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ছয়টি শতরানের জুটি।

ক্রমেই দাঁড়িয়ে যাওয়া এই জুটি ভাঙেন প্লাংকেট। ৬৫ বলে ৪৪ রানে বিদায় মুশফিক। এই জুটি বিচ্ছিন্নের পরই জয়ের ক্ষীণ আশাটুকু যেন শেষ হয়ে যায়। তারপরও শেষ লড়াইটা ছিল পরাজয়ের ব্যবধানে যত কমানো যায়। আবার অনেকে তাকিয়ে ছিলেন সাকিবের সেঞ্চুরির দিকে। সাকিব হতাশ করেননি। বিশ্বকাপে ৯৫ বলে করেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি, ওয়ানডেতে অষ্টম। সাকিবকে শেষ পর্যন্ত আউট করেন অলরাউন্ডার বেন স্টোকস। ইয়র্কারে বোল্ড। সাজঘরে ফেরার আগে সাকিবের নামের পাশে ১১৯ বলে ১২১ রানের দ্যুতিময় ইনিংস। যার ইনিংসে ছিল ১২টি চার ও একটি ছক্কার মার।

মুশফিকের বিদায়ের পর মিঠুন রানের খাতাই খুলতে পারেননি। ষষ্ঠ উইকেটে মাহমুদউল্লাহ ও মোসাদ্দেক একটু লড়াইয়ের চেষ্টা করেছেন। আসে ৪৯ রানের জুটি। ১৬ বলে ২৬ রানে দারুণ ব্যাট করা মোসাদ্দেকও আউট স্টোকসের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে। ২৮ রান করা মাহমুদউল্লাহকে ফেরান উড। এই জুটির বিদায়ের পর শেষের দিকের ব্যাটসম্যানরা যেন এলেন আর গেলেন।

এর আগে টসে হেরে উদ্বোধনী জুটিতেই ইংল্যান্ডকে বড় স্কোরের ভিত গড়ে দেন জেসন রয় ও জনি বেয়ারস্টো। রান আসে ১২৮। শেষ পর্যন্ত এই জুটি বিচ্ছিন্ন করেন মাশরাফিই। ১৯.১ ওভারে ওপেনারের ব্যাটের কানায় লেগে কাভারে আসা ক্যাচ কিছুটা এগিয়ে ঝাঁঁপিয়ে মুঠোয় জমান মিরাজ। ভাঙে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে যেকোনো উইকেটে ইংল্যান্ডের সেরা ১২৮ রানের জুটি।

বেয়ারস্টো থামলেও ব্যাট হাতে অবিচল ছিলেন রয়। জো রুটকে সঙ্গে নিয়ে শুরু হয় তার পথচলা। দ্বিতীয় উইকেটে দুজন রান যোগ করেন ৭৭। এরই মধ্যে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথম ও ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরি তুলেন নেন রয়। ৯২ বলে ১২ চার ও এক ছক্কায় স্পর্শ করেন তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার। এই জুটি ভাঙেন অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিন। স্লোয়ার বল ঠিকমতো খেলতে পারেননি জো রুট। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল এলোমেলো করে দেয় স্ট্যাম্পস। পরের বলে রিভিউ নিয়ে নতুন ব্যাটসম্যান জস বাটলারকে ফেরাতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা যায় লেগ স্ট্যাম্প মিস করত বল। তাতে শেষ হয়ে যায় একমাত্র রিভিউ।

সেঞ্চুরি করা জেসন রয় ততক্ষণে আরো মারমুখী। মিরাজের করা ৩৫তম ওভারে হাঁকান তিন ছক্কা। এর পরই তিনি আউট। অফ স্ট্যাম্পের বেশ বাইরের বলে টাইমিং করতে পারেননি। এক্সট্রা কাভারে ক্যাচ মুঠোয় জমান মাশরাফি। ১২১ বলে ১৪ চার ও তিন ছক্কায় ১৫৩ রান করে ফেরেন রয়। দারুণ ইনিংসের সুবাদে ম্যাচসেরার পুরস্কারও গেছে রয়ের শোকেসে।

চতুর্থ উইকেটে বাংলাদেশের হতাশা বাড়ান অধিনায়ক মরগান ও বাটলার। ব্যাট হাতে ঝড় তুলে ফিফটি আদায় করেন বাটলার। শেষ পর্যন্ত এই বাটলারকে ফেরান সাইফ। ভাঙে ৯৫ রানের জুটি। প্রথম বল ছক্কা হজম করেছিলেন সাইফ। পরের বলে ফ্লিক করে আবার ছক্কা হাঁকাতে চেয়েছিলেন বাটলার। ডিপ স্কয়ার লেগে চমৎকার এক ক্যাচ নেন সৌম্য সরকার। ৪৪ বলে দুই চার ও চার ছক্কায় ৬৪ রান করে ফেরেন বাটলার। দলীয় রান তখন ৩৩০।

ফিফটির আগেই মরগানকে ফেরান মিরাজ। ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টায় লং অনে ক্যাচ দেন তিনি। কিছুটা দৌড়ে এসে ঝাঁপিয়ে চমৎকার ক্যাচ নেন নেন সৌম্য সরকার। ৩৩ বলে এক চার ও দুই ছক্কায় ৩৫ রান করে ফেরেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। স্টোকস (৬) ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেননি। তিনি মোস্তাফিজুরের শিকার। সপ্তম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন থেকে রানের গতি বাড়ান দুই বোলার ওকস (১৮) ও প্লাংকেট (২৭)।

বল হাতে সাইফ ও মিরাজ নিয়েছেন দুটি করে উইকেট। সাইফ ৯ ওভারে রান দিয়েছেন ৭৮। মিরাজ ১০ ওভারে দেন ৬৭। শুরুতে সাকিব ভালো করলেও শেষটা মার খেয়েছেন। ১০ ওভারে ৭১ রান দিয়ে থাকেন উইকেটশূন্য। ১০ ওভারে ৬৮ রানে মাশরাফি পান এক উইকেট। ৯ ওভারে ৭৫ রান দিয়ে হতাশ মোস্তাফিজ। তবে পেয়েছেন একটি উইকেট।

তিন ম্যাচে দুই জয়ে টুর্নামেন্টে ঘুরে দাঁড়াল ইংল্যান্ড। অন্যদিকে তিন ম্যাচে মাত্র একটি জয়ে ব্যাকফুটে বাংলাদেশ। ব্রিস্টলে ১১ জুন শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে মাশরাফিরা। সেই ম্যাচে জয় দিয়ে কক্ষপথে ফিরবে দল, প্রত্যাশা সবার।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads