• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
লড়াকু হার মাশরাফিদের

ছবি : সংগৃহীত

ক্রিকেট

লড়াকু হার মাশরাফিদের

  • মোস্তফা তারিক আল বান্না
  • প্রকাশিত ২১ জুন ২০১৯

অপরাজিত সেঞ্চুরিম্যান মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ পঞ্চম জুটিতে যেভাবে চমৎকার বোঝাপড়াতে রান তোলেন, তাতে একটাই আফসোস। যদি আর কিছু রান কম করত অস্ট্রেলিয়া, যদি আরো কিছু ওভার থাকত বাংলাদেশের! গত বিশ্বকাপে শেষ আটে উঠেছিল বাংলাদেশ। এবার আশা ছিল সেমিফাইনালের। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে কঠিন হয়ে গেল মাশরাফিদের শেষ চারে ওঠার স্বপ্ন। নটিংহ্যামের ট্রেন্টব্রিজে ডেভিড ওয়ার্নারের ঝড়োগতির সেঞ্চুরি আর উসমান খাজা ও অ্যারন ফিঞ্চের হাফসেঞ্চুরিতে অজি দল ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ৩৮১ রান তোলে। জবাবে বাংলাদেশ বেশ লড়াকু মনোভাব নিয়ে ব্যাটিং করেও টার্গেট বড় থাকায় তা অতিক্রম করতে ব্যর্থ হয়। তারা ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩৩৩ রান করে। শেষ পর্যন্ত মাত্র ৪৮ রানে হার মানে স্টিভ রোডসের শিষ্যরা।

বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৬ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট পেয়ে পঞ্চম স্থানেই রইল। সেমির আশা জিইয়ে রাখতে হলে বাংলাদেশকে বাকি তিন ম্যাচে জিততেই হবে। সেই সঙ্গে অন্য সব ম্যাচের ফলাফলের দিকে নজর রাখতে হবে মাশরাফিদের। অস্ট্রেলিয়া সমান সংখ্যক ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে চলে এসেছে। নিউজিল্যান্ড ৯ পয়েন্ট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে, ইংল্যান্ড ৮ পয়েন্টে তৃতীয়, ভারত ৭ পয়েন্টে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। এছাড়া শ্রীলঙ্কা ৪, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তান ৩ পয়েন্ট করে পেয়েছে। আফগানিস্তান কোনো পয়েন্টের মুখ দেখেনি। 

৩৮২ রানের টার্গেট নিয়ে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ দল। দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার বেশ স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে রান তুলতে থাকেন। কিন্তু তামিমের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির কারণে সৌম্য সরকার রান আউট হন। তিনি ৮ বলে ২টি চারে ১০ রান করেন। তামিমের সঙ্গে জুটি বাঁধেন সাকিব আল হাসান। তারা দ্বিতীয় জুটিতে ৮৯ রান যোগ করেন। দলীয় ১০২ রানের সময় সাকিব স্টোনিসের বলে ওয়ার্নারের হাতে ধরা পড়েন। সাকিব ৪১ বলে ৪১ রান করেন ৪টি চারের সাহায্যে। দলীয় ১৪৪ রানের মাথায় বাংলাদেশের অন্যতম ভরসা তামিম আউট হয়ে যান। তিনি স্টার্কের বলে সরাসরি বোল্ড হওয়ার আগে ৭৪ বলে ৬টি চারে ৬২ রান করেন। দলের ১৭৫ রানের সময় লিটন দাস জাম্পার বলে এলবিডব্লিউ হন। লিটন ২০ রান করেন ১৭ বলে ৩টি চারে। মুশফিক আর মাহমুদউল্লাহ পঞ্চম জুটিতে মূল্যবান ১২৭ রান যোগ করেন। তাদের জুটি চলাকালে বাংলাদেশ কিছুটা হলেও জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। যদিও সেটা ছিল কঠিন থেকে কঠিনতর। দলীয় ৩০২ রানের সময় ভেঙে যায় এ জুটি। সেই সঙ্গে শেষ আশাও ফিকে হয়ে যায়। মাহমুদউল্লাহ ৫০ বলে ৫টি চার ও ৩টি ছয়ে ৬৯ রান করে নাইলের বলে কামিন্সের হাতে ধরা পড়েন। এরপর সাব্বির (০) এক বল মোকাবেলা করে নাইলের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন। দলীয় ৩২৩ রানের সময় মিরাজ (৬) আউট হন স্টার্কের বলে ওয়ার্নারের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে। মুশফিক ৯৫ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। তিনি শেষ পর্যন্ত ৯৭ বলে ১০২ রান করেন ৯টি চার ও ১টি ছয়ে। মাশরাফি ৫ বলে ৬ রান করে স্টোনিসের বলে ম্যাক্সওয়েলের হাতে ধরা পড়েন।

অস্ট্রেলিয়ার নাইল ৫৮ রানে, স্টার্ক ৫৫ রানে ও স্টোনিস ৫৪ রানে ২টি করে উইকেট লাভ করেন। আর জাম্পা পান ১টি উইকেট।

এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বেশ সতর্কতার সঙ্গে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। দুই ওপেনার অ্যারন ফিঞ্চ আর ওয়ার্নার বাংলাদেশি বোলারদের দেখেশুনে খেলছিলেন। তখন ইনিংসের পঞ্চম ওভার চলছিল। মাশরাফির বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ তুলে দেন ওপেনার ওয়ার্নার। সাব্বির রহমান সেটি তালুবন্দি করতে পারলেন না। ব্যক্তিগত ১০ রানের মাথায় জীবন পেয়ে যান ওয়ার্নার। সেই জীবন ফিরে পাওয়াকে কাজে লাগিয়েই ব্যাটে ঝড় তোলেন ওয়ার্নার। কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। ফ্রন্টলাইন বোলাররা অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংকে বিপদে ফেলতে পারছিলেন না। অবস্থা বেগতিক দেখে ২১তম ওভারে পার্টটাইমার সৌম্য সরকারের হাতে বল তুলে দেন বাংলাদেশের দলনেতা মাশরাফি বিন মুর্তজা। অধিনায়কের এমন বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত কাজে লেগে যায় সঙ্গে সঙ্গেই। নিজের প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে এসে অ্যারন ফিঞ্চকে শর্ট থার্ড ম্যানে রুবেল হোসেনের ক্যাচ বানান সৌম্য। ফিঞ্চ ৫১ বলে করেন ৫৩ রান।

ওপেনিং জুটিতে আসে ১২১ রান। এরপর ওয়ার্নার ও উসমান খাজা দ্বিতীয় জুটিতে রানের পাহাড় গড়ে তোলেন। তাদের জুটিতে আসে ১৯২ রান। দলীয় ৩১৩ রানের সময় ফিরে যান ম্যাচসেরা ওয়ার্নার। তিনি  ১৪৭ বলে ১৪টি চার ও ৫টি ছয়ে ১৬৬ রান করেন। চলতি বিশ্বকাপে এটা তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। এর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ার্নার করেন ১০৭ রান। দলীয় ৩৫২ রানে ম্যাক্সওয়েল রান আউট হন। তিনি মাত্র ১০ বলে ৩২ রান করেন ২টি চার ও ৩টি ছয়ে। দলীয় ৩৫৩ রানের মাথায় খাজা সৌম্যের বলে উইকেটকিপার মুশফিকুর রহিমের হাতে ধরা পড়েন। খাজা ৭২ বলে ১০টি চারে ৮৯ রান করেন। দলের রান আর ১ যোগ হতেই সাবেক অধিনায়ক স্টিভেন ম্মিথ (১) মোস্তাফিজুর রহমানের শিকারে পরিণত হন। স্টোনিস ১৭ ও কোরে ১১ রানে অপরাজিত থাকেন। অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের ৪৯ ওভার শেষে বৃষ্টি নামলে কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ থাকে।

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল সৌম্য সরকার। তিনি ৫৮ রানে ৩টি উইকেট লাভ করেন। মোস্তাফিজ ১টি উইকেট পান ৬৯ রান দিয়ে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads