• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
টিকে থাকল স্বপ্ন

ছবি : সংগৃহীত

ক্রিকেট

টিকে থাকল স্বপ্ন

  • মোস্তফা তারিক আল বান্না
  • প্রকাশিত ২৫ জুন ২০১৯

শুধু আফগানিস্তানের বিপক্ষেই নয়, বাংলাদেশ খেলল অন্যায়ের বিরুদ্ধেও। টিভি আম্পায়ার আলিম দারের ন্যক্কারজনক ও পক্ষপাতিত্ব সিদ্ধান্তও শেষ পর্যন্ত টলাতে পারেনি বাংলাদেশি অদম্য ক্রিকেটবীরদের। চলমান বিশ্বকাপ ক্রিকেটে সেমিফাইনালের আশা টিকিয়ে রাখতে জয় ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না বাংলাদেশের জন্য। এমনই সমীকরণকে পাত্তা না দিয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৬২ রানের অসাধারণ জয় পেয়ে সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্ন টিকিয়ে রাখল মাশরাফি বাহিনী।

মূল নায়ক সাকিব আল হাসান। তার বীরত্বের সঙ্গী মুশফিকুর রহিম, মোসাদ্দেক হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমানরা। সাকিবের রেকর্ডসম অলরাউন্ডিং নৈপুণ্যেই বাংলাদেশের এমন মধুর জয় নিশ্চিত হয়। ম্যাচসেরা সাকিব হাফসেঞ্চুরি করে এবং পাঁচ উইকেট নিয়ে ভারতের যুবরাজ সিংয়ের আট বছর আগের বিশ্বকাপ রেকর্ড স্পর্শ করেন।  

গতকাল সোমবার সাউদাম্পটনে রোজ বোল স্টেডিয়ামে মুশফিকুর রহিম ও সাকিবের হাফসেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের ৭ উইকেটে ২৬২ রানের জবাবে আফগানিস্তান ২০০ রানে অলআউট হয় ৪৭ ওভারেই।

এই অসাধারণ জয়ে বাংলাদেশ ৭ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে। আফগানিস্তান ৭ ম্যাচের সবগুলোতেই হেরে এখনো কোনো পয়েন্ট লাভ করতে পারেনি। নিউজিল্যান্ড ১১ পয়েন্ট পেয়ে শীর্ষে রয়েছে। আর অস্ট্রেলিয়া ১০ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয়, ভারত ৯ পয়েন্ট সংগ্রহ করে তৃতীয়, স্বাগতিক ইংল্যান্ড ৮ পয়েন্ট পেয়ে চতুর্থ, শ্রীলঙ্কা ৬ পয়েন্টে ষষ্ঠ, পাকিস্তান ৫ পয়েন্টে সপ্তম, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকা সমান ৩ পয়েন্ট করে পেয়ে যৌথভাবে অষ্টম স্থানে আছে। 

২৬৩ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে আফগানিস্তানের দুই ওপেনার গুলবাদিন নাইব ও রহমত শাহ প্রথম ১০ ওভার নির্বিঘ্নেই কাটিয়ে দেন। ১১তম ওভারে এসে বল হাতে নিয়েই এই জুটিটা ভেঙে দেন সাকিব আল হাসান। সাকিবের বলটি মিডঅনে উঁচিয়ে মারতে গিয়ে রহমত শাহ ক্যাচ তুলে দেন তামিম ইকবালের হাতে। ৩৫ বলে তিনি করেন ২৪ রান। দলীয় ৭৯ রানে মোসাদ্দেকের বলে হাসমতউল্লাহ শহীদি স্ট্যাম্প হন। হাসমতউল্লাহ ১১ রান করেন।

দলীয় ১০৪ রানের সময় অধিনায়ক গুলবাদিন নাইব আউট হন সাকিবের বলে লিটন দাসের ক্যাচে পরিণত হয়ে। নাইব করেন ৪৭ রান। সাকিবের একই ওভারে মোহাম্মদ নবী (০) বোল্ড হন। দলীয় ১১৭ রানের মাথায় আসগর আফগান সাকিবের চতুর্থ শিকারে পরিণত হন। তিনি করেন ২০ রান। এরপর দলীয় ১৩২ রানের সময় লিটনের দারুন থ্রোতে রান আউট হন আফগান উইকেটকিপার ইকরাম আলিখিল (১১)।

সপ্তম জুটিতে আফগানিস্তানের সামিউল্লাহ সিনওয়ারি ও নজিবুল্লাহ জারদান বেশ দ্রুত রান করতে থাকেন। ৪১ বলে এ জুটি ৫০ রান তোলেন। দলীয় ১৮৮ রানের সময় সাকিব জুটি ভাঙেন। তার বলে স্ট্যাম্প হন জারদান। জারদান ২৩ বলে ২৩ রান করেন। সেইসঙ্গে ভারতের যুবরাজ সিংয়ের একটি বিশ্বকাপ রেকর্ড স্পর্শ করলেন সাকিব। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের যুবরাজ হাফ সেঞ্চুরি করেন এবং ৫টি উইকেট লাভ করেন।

দলীয় ১৯১ রানে রশিদ খান (২) আউট হন। মোস্তাফিজুর রহমানের বলে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার ক্যাচে পরিণত হন তিনি। মোস্তাফিজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন দাওলাত জারদান (০)। দাওলাতের ক্যাচ লুফে নেন উইকেটকিপার মুশফিক। দলীয় ২০০ রানে শেষ উইকেটটি হারান আফগানরা। সাইফউদ্দিনের বলে বোল্ড হন মুজিব।

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সাকিব ২৯ রানে ৫টি উইকেক লাভ করেন। এছাড়া মোস্তাফিজ ৩২ রানে ২টি এবং সাইফউদ্দিন ৩৩ রানে ও মোসাদ্দেক ২৫ রানে ১টি করে উইকেট পান।

এর আগে ম্যাচের শুরুতেই উইকেট হারায় টস হারা বাংলাদেশ দল। পঞ্চম ওভারে স্পিনার মুজিব উর রহমানের বলে শর্ট কভারে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লিটন দাস। তবে টিভি রিপ্লেতে স্পষ্ট দেখা গেছে বল ফিল্ডার হাসমতউল্লাহ শহীদির হাতে পড়ার আগে মাটি স্পর্শ করে। অথচ টিভি আম্পায়ার আলিম দার আউটের সিগন্যাল দেন। লিটন মাঠ ছাড়েন ১৬ রান করে। তামিমের সঙ্গে তার জুটি ছিল মাত্র ২৩ রানের।

তামিম ও সাকিব আল হাসানের জুটি বেশ জমে ওঠে। কিন্তু তামিমকে বোল্ড করে ৫৯ রানের জুটি বিচ্ছিন্ন করেন অপর স্পিনার মোহাম্মদ নবী। ৫৩ বলে চারটি চারে ৩৬ রান করেন বাঁহাতি ওপেনার তামিম।

এরপর মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ৬১ রানের জুটি গড়েন সাকিব। ৬৯ বলে এক চারে ৫১ রানে সাজঘরে ফেরেন সাকিব মুজিবের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে। এই ইনিংস খেলার পথে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বকাপে এক হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন সাকিব। সাকিবের বিদায়ের পর পাঁচ নম্বরে ব্যাট করেও রানে ফিরতে পারেননি সৌম্য সরকার। ১০ বল খেলে মাত্র ৩ রান করে মুজিবের কাছে এলবিডব্লিউ হন তিনি।

মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকের ৫৬ রানের জুটি ভাঙেন আফগান অধিনায়ক গুলবাদিন নাইব। ৩৮ বলে ২৭ রান করে মিড উইকেটে মোহাম্মদ নবীর ক্যাচে পরিণত হন মাহমুদউল্লাহ। মুশফিক তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে ব্যর্থ হন অল্পের জন্য। ৮৭ বলে চারটি চার ও একটি ছয়ে ৮৩ রান করে দৌলত জাদরানের শিকার হন তিনি। তার ক্যাচ নেন নবী। ইনিংসের শেষ বলে নাইবের কাছে বোল্ড হন মোসাদ্দেক। ২৪ বলে চারটি চারে ৩৫ রান করেন তিনি। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ২ রানে অপরাজিত থাকেন।

আফগানিস্তানের পক্ষে ৩টি উইকেট নেন মুজিব ৩৯ রানে। নাইব ৫৬ রানে লাভ করেন ২টি উইকেট। নবী ৪৪ রানে পান ১টি উইকেট।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads