• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
জয়ের প্রতিজ্ঞা চাই মাশরাফিদের

ছবি : সংগৃহীত

ক্রিকেট

জয়ের প্রতিজ্ঞা চাই মাশরাফিদের

  • তারিক আল বান্না
  • প্রকাশিত ০২ জুলাই ২০১৯

বাংলাদেশ ১৯৯৭ সালের ১৫ জুন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) কর্তৃক ওয়ানডে স্ট্যাটাস লাভ করে। ভারতের সঙ্গে প্রথম জয় পেতে বাংলাদেশকে দীর্ঘ সাড়ে সাত বছর অপেক্ষা করতে হয়। ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে ১৫ রানের প্রথম জয়ের পর এ পর্যন্ত আর মাত্র চারটি জয় এসেছে ভারতের বিরুদ্ধে। পাশপাশি পরাজয় অনেক বেশি। তবে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমান বাংলাদেশ দল অনেক শক্তিশালী এবং পরিপক্ব। যে কোনো দলকে হারানোর মতো যোগ্যতা রয়েছে মাশরাফি বাহিনীর। এবারের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আফগানিস্তানকে হারিয়ে সে যোগ্যতা দেখিয়েছে লাল-সবুজের দলটি। এখন ভারতের বিপক্ষে সব মিলে ষষ্ঠ এবং এবারের বিশ্বকাপে নিজেদের চতুর্থ জয় পাওয়াটা বাংলাদেশের জন্য আহামরি কঠিন কিছু নয়। অবশ্য জয় এমনিতে আসে না। সুন্দর পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামলে জয় আসবেই। আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা রাখতে হবে, ‘আমরাও পারি, পারবই।’

বাংলাদেশ একটু কৌশল খাটাতে পারলে ভারতকে হারানো খুব কঠিন বিষয় নয়। ভারতের মূল শক্তি ও মূল দুর্বলতাটা মাথায় রাখতে হবে। এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে ব্যালেন্স দল হলো বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া ও স্বাগতিক ইংল্যান্ড।  আর কোনো দলই ততটা ব্যালেন্স নয়। ভারতীয় দলের প্রধান ব্যাটিং শক্তি বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মা। শুধু এই দুজনের ব্যাটিংয়ে রয়েছে দারুণ ধারাবাহিকতা। আর ঐ ধরনের ধারাবাহিকতা না থাকলেও হার্দিক পান্ডিয়া প্রায়ই দ্রুতগতিতে রান তুলছেন। মহেন্দ্র সিং ধোনি ভালোই রান করছেন, তবে তিনি বল নষ্ট করেছেন প্রায় সব ম্যাচেই। টিকে থাকাটাও জরুরি হয়ে পড়ে অনেক সময়। এটাও এক ধরনের পজিটিভ দিক। যেটা বিশ্বকাপজুড়ে করছেন বাংলাদেশের ওপেনার তামিম ইকবাল। এ ছাড়া ভারতের অনেকেই বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কিছু ম্যাচে রান তুলেছেন। কিন্তু সেটা আহামরি কিছু নয়। আর বোলিংয়ে সবচেয়ে বিপজ্জনক হলেন পেসার মোহাম্মদ শামি। জসপ্রিত বুমরাহর বল অনেকটা অবৈধ হলেও তা আইসিসির নজরে আসছে না রহস্যজনক কারণে। বুমরাহ হাত ঘুরিয়ে স্পষ্টভাবে বল ছুড়ে মারেন, যা অনেকটাই অবৈধ ডেলিভারি। কিন্তু যেহেতু তা আইসিসির চোখে পড়েনি এবং তিনি খেলছেন, তাই তাকে এড়ানোও যাবে না। বুমরাহর বলও বিপজ্জনক। ভুবনেশ্বর ভালো বোলিং করলেও তা একটু ঠান্ডা মাথায় খেললে মোকাবেলা করা কঠিন নয়। অবশ্য স্পিনার চাহালের বল খুবই কার্যকর। মোটকথা ভারতের বোলিং খুব মারাত্মক নয়। তাই বাংলাদেশের পক্ষে ভালো স্কোর করা সম্ভব। অবশ্য মনের বল ঠিক রাখতে পারলেই সেটা সম্ভব। মাশরাফি অধিনায়ক হিসেবে যথেষ্ট ট্যালেন্ট। তিনি ভারতের কোন জায়গা শক্তিশালী, কোন জায়গা দুর্বল তা ভালোই জানেন। এখন সেটা তিনি কতটা প্রমাণ করতে পারবেন, দেখার বিষয় সেটাই। এই ভারতকেই ২০০৭ বিশ্বকাপে হারিয়ে বিদায় করে বাংলাদেশ শেষ আটে জায়গা করে নিয়েছিল। এবারো লিগপর্বে আমরা চেষ্টা করলে ভারতকে হারাতে পারব।

ভারতীয় ক্রিকেট কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে প্রতি আইপিএল আসরে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের এড়িয়ে যাচ্ছে। এর কারণ হলো, ভারত মনে করে আইপিএলে খেললে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা তাদের খেলোয়াড়দের কৌশল রপ্ত করে ফেলতে পারে। তারা সাকিব আল হাসানের মতো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে সাইড লাইনে বসিয়ে রাখার মতো জঘন্য কাজ করতেও দ্বিধাবোধ করে না। অথচ ভারতের ‘বস্তাপচা’ খেলোয়াড়দের লাইন ধরিয়ে মাঠে নামিয়ে দেয়। শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের অনেক হালকা মানের খেলোয়াড়কে দেখা গেছে আইপিএলে বিভিন্ন দলের হয়ে খেলতে। পাকিস্তানের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধ না থাকলে তাদের দেশের খেলোয়াড়দেরও হয়তো নিয়মিত আইপিএলে খেলতে দেখা যেত। অতএব দেখা যাচ্ছে, ভারত এখন এশীয় অঞ্চলের ক্রিকেটে বাংলাদেশকেই প্রধান প্রতিপক্ষ মনে করে। তাই বাংলাদেশ যাতে ক্রিকেটে ওপরে না উঠতে পারে সেই চেষ্টা থাকে তাদের। সে যাহোক, বিশ্বকাপে আজ মঙ্গলবার ভারতের সঙ্গে মরণ লড়াই বাংলাদেশের। জয়ের কোনো বিকল্প নেই মাশরাফিদের সামনে। 

ভারত শেষ চার প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে। পুরোপুরি নিশ্চিত করতে ভারত কোনো প্রকার ছাড় দেবে না। তারা পুরো শক্তি নিয়েই আজ মাঠে নামবে। আর সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে বাংলাদেশকে শেষ দুই ম্যাচেই জয় পেতেই হবে। ভারত ম্যাচের পর ৫ জুন পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের খেলা। তবে স্বপ্নের শুরুটা করতে হবে আজ ভারতকে হারিয়ে। আশপাশের দেশগুলোর মধ্যে একটি বিষয়ে বাংলাদেশের ধারেকাছেও নেই কেউই। এই উপমহাদেশে একমাত্র যুদ্ধ করে স্বাধীন হওয়া, আন্দোলন করে অধিকার আদায় করা দেশ হলো বাংলাদেশ। তাই আমাদের খেলোয়াড়দের মনোভাব থাকতে হবে সেরকমই। আমরা জয়ের জাতি, আমরা হারতে শিখিনি, ১৯৭১ সাল পর্যন্ত হাজার বছরের ইতিহাস বলে দেয় আমাদের বীরত্বগাথা, গৌরবের কথা। ক্রিকেটও এ জাতির রক্তের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে আছে। বিশ্বকাপ তারই অংশ। বিশ্বকাপে দেশের স্বপ্নপূরণকে আজ একধাপ এগিয়ে নেবে মাশরাফি-সাকিবরা, এটাই সবার প্রত্যাশা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads