• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
 সিরিজ হারলো বাংলাদেশ

সংগৃহীত ছবি

ক্রিকেট

 সিরিজ হারলো বাংলাদেশ

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ২৯ জুলাই ২০১৯

এক ম্যাচ হাতে রেখেই বাংলাদেশকে তিন ওয়ানডে সিরিজ হারের লজ্জা দিলো স্বাগতিক শ্রীলংকা। রোববার সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে লংকানরা। ফলে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের রেকর্ড ধরে রাখলো শ্রীলংকা। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কাছে কখনও সিরিজ হারেনি শ্রীলংকা। সিরিজ জয়ের পাশাপাশি ২-০ ব্যবধানে এগিয়েও গেল শ্রীলংকা।

টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে মুশফিকুর রহিমের অপরাজিত ৯৮ রানের উপর ভর করে কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৩৮ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ। জবাবে ওপেনার আবিস্কা ফার্নান্দোর ৮২ রানের কল্যাণে ৩২ বল বাকী রেখেই ম্যাচ ও সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ফেলে শ্রীলংকা।

অধিনায়ক হিসেবে নিজের অভিষেক ম্যাচে টস ভাগ্যে জিততে পারেননি তামিম ইকবাল। তবে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ঠিকই টস লড়াইয়ে জয় পান তিনি। টস জিতেই প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেন তামিম। ওপেনিং-এ সতীর্থ সৌম্য সরকারকে নিয়ে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দেন তামিম। প্রথম ৫ ওভারে কোন উইকেট না হারিয়ে ১৯ রান যোগ করেন তারা। তবে ষষ্ঠ ওভারে বিচ্ছিন্ন হয় বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি। শ্রীলংকার পেসার নুয়ান প্রদীপের বলে লেগ বিফোর ফাঁদে পড়েন সৌম্য। ১টি চারে ১১ বলে ১৩ রান করেন আগের ম্যাচেও ব্যর্থ হওয়া সৌম্য। বিশ্বকাপ থেকেই রান খড়ায় ভুগছেন তিনি। বিশ্বকাপের মঞ্চে ৮ ইনিংসে ১৬৬ রান করেছিলেন সৌম্য।

আগের ম্যাচে ইনিংসের পঞ্চম ডেলিভারিতে বিদায়ী ম্যাচ খেলতে নামা শ্রীলংকার পেসার লাসিথ মালিঙ্গার বলে বোল্ড হয়েছিলেন তামিম। শূন্য রান করা তামিম আজ নিজের সেরাটা দেয়ার চেষ্টায় ছিলেন। গতকাল বাংলাদেশের অনুশীলন না থাকলেও, রানে ফিরতে একাই ব্যাটিং অনুশীলনে ছিলেন তামিম। কিন্তু তাতে কোন কাজ হলো না। মালিঙ্গার পরিবর্তে খেলতে নামা বাঁ-হাতি পেসার ইসুরু উদানার বলে ব্যক্তিগত ১৯ রানে বোল্ড হন তিনি। ৩১ বল মোকাবেলা করে ২টি চার মারেন তামিম।

৩১ রানে দুই ওপেনারের বিদায়ের পর জুটি বাধেন মোহাম্মদ মিঠুন ও উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম। শুরুর ধাক্কা সামলে উঠার পরিকল্পনায় ছিলেন তারা। বেশ ধীরলয়ে এগুচ্ছিলেন মিঠুন ও মুশফিক। কিন্তু তাদের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান অফ-স্পিনার আকিলা ধনঞ্জয়া। মিঠুনকে ১২ রানেই থামিয়ে দেন তিনি। আগের ম্যাচে ৩০ রানে ফিরেছিলেন বাংলাদেশের উপরের সারির প্রথম তিন ব্যাটসম্যানরা। আজ সেটির ব্যতিক্রম ঘটে। ৫২ রানের মধ্যে ফিরেছেন তারা।

মিঠুনের বিদায়ে ১৫তম ওভারেই ২২ গজে আসেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ৫২ রানে ৩ উইকেট পতনে মুশফিকের সাথে মাহমুদুল্লাহর বড় জুটির স্বপ্ন দেখছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু স্বপ্নকে ভেঙ্গে ফেলেন মিঠুনকে শিকার করা ধনঞ্জয়া। উইকেট ছেড়ে পাশে গিয়ে কাট করতে গিয়ে বোল্ড হন মাহমুদুল্লাহ। ১৮ বলে ৬ রান করেন মিডল-অর্ডারে বাংলাদেশের অন্যতম ভরসা মাহমুদুল্লাহ।
মাহমুদুল্লাহর বিদায়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সেই চাপ আরও বাড়ে কিছুক্ষণ পর আগের ম্যাচের হাফ-সেঞ্চুরিয়ান সাব্বির রহমান আউট হলে। আগের ম্যাচেও চাপের মুখে ব্যাট হাতে নেমেছিলেন সাব্বির। উইকেটে গিয়ে কাউন্ডার অ্যাটাক করেছিলেন তিনি। এবারও বাউন্ডারি দিয়ে নিজের রানের খাতা খুলেন সাব্বির। পরবর্তীতে আরও একটি চারে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেন সাব্বির। তবে নামের পাশে ১১ রান আসার পর মুশফিকের সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউট হন সাব্বির। ডি সিলভার থ্রোটি উইকেট থেকে বেশ দূরে থাকলেও দুর্দান্তভাবে তা ধরে নিয়ে ডান-দিকে ঝাঁপিয়ে সাব্বিরকে রান আউট করেন শ্রীলংকার উইকেটরক্ষক কুশল পেরেরা। ১টি চারে ১৯ বল মোকাবেলা করে আউট হন প্রথম ম্যাচে ৫৬ বলে ৬০ রান করা সাব্বির। দলীয় ১শ’ স্পর্শ করার আগেই পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফিরেন সাব্বির।

ফলে মুশফিকের সাথে শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান হিসেবে ব্যাটিং তালিকায় ছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন। কিন্তু এবারও ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। ২৭ বলে ১৩ রান করে উদানার দ্বিতীয় শিকার হন মোসাদ্দেক। ১১৭ রানে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে মোসাদ্দেকের বিদায় বাংলাদেশকে দ্রুত গুটিয়ে যাবার শংকায় ফেলে দেয়।

কিন্তু সেটি হতে দেননি মুশফিক ও মেহেদি হাসান মিরাজ। দলের বাজে অবস্থায় ধৈর্য্য হারাননি মুশফিক-মিরাজ। উইকেটের সাথে দ্রুত মানিয়ে নিয়ে বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলেন মুশফিক-মিরাজ। তাই দেড়শ’ পেরিয়ে বাংলাদেশের স্কোর দুইশ’ স্পর্শ করে। এমন অবস্থায় শ্রীলংকার সামনে লড়াকু সংগ্রহের আশা জাগে বাংলাদেশের সামনে। কিন্তু দলীয় ২০১ রানে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান তারা। ৬টি চারে ৪৯ বলে ৪৩ রান করা মিরাজকে বিদায় দিয়ে শ্রীলংকাকে দুর্দান্ত ব্রেক-থ্রু এনে দেন প্রদীপ। সপ্তম উইকেটে ৮৩ বলে ৮৪ রান যোগ করেন মুশফিক-মিরাজ। এরমধ্যে ৩৪ বলে ৩২ রান ছিলো মুশফিকের। এই জুটিতে এই রান করার পথে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩৭তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন মুশফিক।

৪৬তম ওভারে মিরাজ ফিরে গেলেও হাল ছাড়েননি মুশফিক। এক প্রান্ত আগলে দলকে লড়াই করার পুঁজি এনে দেয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। ইনিংসের শেষ ২৭ বলে দলকে এনে দেন ৩৭ রান। এরমধ্যে তারই ছিলো ২৯ রান। এতে আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়েন মুশফিক। মাত্র ২ রানের জন্য ওয়ানডে ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি মিস করেন আগের ম্যাচে ৬৭ রান করা মুশফিক। ৯৮ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। তার ১১০ বলের ইনিংসে ৬টি চার ও ১টি ছক্কা ছিলো। তাই মুশফিকের ব্যাটিং নৈপুণ্যে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৩৮ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। শ্রীলংকার পক্ষে প্রদীপ-উদানা-ধনঞ্জয়া ২টি করে উইকেট নেন।

২৩৯ রানের জয়ের লক্ষ্যে ভালো সূচনা করে শ্রীলংকা। দুই ওপেনার আবিস্কা ফার্নান্দো ও অধিনায়ক করুনারতেœ ৬৯ বলে ৭১ রানের সূচনা এনে দেন। সতর্কতার সাথে খেলতে থাকা করুনারত্নকে শিকার করে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন বাংলাদেশের অফ-স্পিনার মিরাজ। ১৫ রান করে মিরাজের বলে বোল্ড হন করুনারত্নে।

করুনারত্নের বিদায়ের পর আবারো বড় জুটি উপহার পায় শ্রীলংকা। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান কুশল পেরেরাকে নিয়ে ৫৮ রানের জুটি গড়েন ফার্নান্দো। ততক্ষণে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়ে নেন তিনি। সেঞ্চুরির পথেই হাটছিলেন ফার্নান্দো। কিন্তু বাংলাদেশের কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান বাঁধা হয়ে দাঁড়ান ফার্নান্দোর সুন্দর মারমুখী ইনিংসটির পথে। ব্যক্তিগত ৮২ রানে ফার্নান্দোকে থামিয়ে দেন ফিজ। ৭৫ বলে ৯টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন ফার্নান্দো।

ফার্নান্দোকে শিকারের কিছুক্ষণ পর পেরেরাকেও তুলে নেন মুস্তাফিজুর। ৩টি চারে ৩৪ বলে ৩০ রান করেন পেরেরা। দলীয় ১২৯ রানে ফার্নান্দো ও ১৪৬ রানে পেরেরার আউটের পর দলের হাল ধরেন কুশল মেন্ডিস ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ। এসময় দলের প্রয়োজন ছিলো ১৫২ বলে ৯৩ রান। হাতে ছিলো ৭ উইকেট।

দলের এই প্রয়োজন স্বাচ্ছন্দ্যে পূরণ করেছেন মেন্ডিস ও ম্যাথুজ। মেন্ডিস ৪টি চারে ৭৪ বলে ৪১ ও ম্যাথুজ ৭টি চারে ৫৭ বলে ৫২ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের মুস্তাফিজ ২টি ও মিরাজ ১টি উইকেট নেন।

আগামী ৩১ জুলাই একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads