• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

ক্রিকেট

দাবি এগারো দফা

ধর্মঘটে জাতীয় ক্রিকেট দল

  • ক্রীড়া প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২২ অক্টোবর ২০১৯

চাপা ক্ষোভ ছিল দীর্ঘদিন ধরেই। প্রকাশ হয়নি তেমনভাবে। তবে এবার হঠাৎই বিস্ফোরণ। ১১ দফা দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। সরগরম ক্রিকেটাঙ্গন। নড়েচড়ে বসেছে বিসিবি। শঙ্কায় আসন্ন ভারত সফর ও চলমান জাতীয় ক্রিকেট লিগ। 

গতকাল দুপুরে মিরপুর একাডেমি মাঠে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ধর্মঘটের ঘোষণা দেন সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমসহ আরো অনেক ক্রিকেটার। ১১ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে-ক্রিকেটারদের বেতন বৃদ্ধি, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো, কোয়াবের সংস্কারসহ অনেক কিছুই। দাবি মানা না হলে ঘরোয়া কিংবা আন্তর্জাতিক সব ধরনের ক্রিকেট থেকে দূরে থাকবেন ক্রিকেটাররা। সাকিবের এ ঘোষণার সময় তুমুল করতালি দিয়ে স্বাগত জানান উপস্থিত ক্রিকেটাররা। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সামনে যেহেতু বিশ্বকাপ আছে, তাদেরকে তাই এ ধর্মঘটের আওতায় রাখা হয়নি।

বিসিবির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা সাকিবের। তবে দাবি মানতে হবেই, সেটিও জানিয়ে রাখলেন দৃঢ় চিত্তে। বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন সুজন অবশ্য ক্রিকেটারদের ধর্মঘটের ব্যাপারে বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি মূলত মিডিয়ার মাধ্যমেই।

আমাদের সাথে কথা হয়নি। আমি আবারো বলছি প্লেয়াররা আমাদের বড় সম্পদ। প্লেয়ারদের বিভিন্ন দাবি আমরা গুরুত্বের সাথে দেখে থাকি। বিভিন্ন সময় সে সব দাবি মানার চেষ্টাও করা হয়েছে; কিন্তু আজ যা বলা হলো, তা আমরা আজকেই জেনেছি। তা-ও আপনাদের মানে মিডিয়ার কাছ থেকে। আমরা চেষ্টা করব বিষয়টি সমাধান করতে।’

১১ দফা দাবি মোট ১০ জন বিশদভাবে তুলে ধরেন মিডিয়ার সামনে। শুরুটা করেন নাঈম ইসলাম। মাঝে দুটি দাবি জানান সাকিব। শেষটাও করেন টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। ক্রিকেটারদের ১১ দফা দাবি সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।  

দাবিসমূহ:

নাঈম ইসলাম (১): ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কারা হবেন সে সিদ্ধান্ত খেলোয়াড়দের নিতে দেওয়া হোক। বর্তমানে সেক্রেটারি ও সভাপতিকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।

মাহমুদউল্লাহ (২): ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে কে কোথায় খেলবে, পারিশ্রমিক কত হবে সে সিদ্ধান্ত খেলোয়াড়দের নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে।

মুশফিকুর রহিম (৩): বিশেষ বিপিএলে পূর্ণ সম্পত্তি আছে, তবে আগামী বছর থেকে ফ্র্যাঞ্চাইজি পদ্ধতিতে খেলাতে হবে। বিদেশি ও দেশি খেলোয়াড়দের মধ্যে দামের তারতম্য ঠিক করতে হবে। বাইরের লিগগুলোর মতো ড্রাফটে কোন গ্রেডে রাখা হবে, সে সিদ্ধান্ত খেলোয়াড়কে নিতে দেওয়া হোক।

সাকিব আল হাসান (৪-৫): প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের বেতন ভাতা বাড়াতে হবে। ম্যাচ ফি অন্তত ৫০ ভাগ বাড়াতে হবে তবে তাদের সবার ধারণা এটা এক লাখ টাকা করা হোক। খেলোয়াড়দের অনুশীলন, জিম করার মাঠ ও সুযোগ বাড়াতে হবে। সারা বছরই কোচ, ফিজিও এবং ট্রেনার নিয়োগ দিতে হবে। এবং তারা যে পরিকল্পনা দেবেন, সেটা যেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারেরা অনুসরণ করতে পারে। এসব সুযোগ-সুবিধা এ মৌসুমে নিশ্চিত করা সম্ভব নয় সেটা তারা জানেন, তবে আগামী মৌসুম থেকে এটা নিশ্চিত করতে হবে। অনুশীলন সুবিধা যেন শুধু ঢাকায় দেওয়া না হয়, সব বিভাগের দল যেন নিজেদের মাঠেই সে সুবিধা পায়। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে মানসম্মত বল দিতে হবে। জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের এ বলে মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলতে গেলে যে আবাসিক হোটেলে রাখা হয়, তা যেন উন্নত হয়, খাবারের মান যেন ভালো হয়। যাতায়াত ভাতা হিসেবে ‘প্লেন ফেয়ার’ নিশ্চিত করতে হবে। যে হোটেলে রাখা হবে তাতে জিম ও সুইমিং পুল যেন থাকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

এনামুল জুনিয়র (৬): জাতীয় দলের চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড় সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০ করতে হবে। তিন বছর ধরে বেতন বাড়ানো হচ্ছে না, সেটা বাড়াতে হবে।

তামিম ইকবাল (৭): বাংলাদেশি কোচদের গুরুত্ব দিতে হবে। বিদেশি কোচ ও দেশি কোচের মধ্যে বেতনের বৈষম্য দূর করতে হবে। আম্পায়ারিংয়ের মান বাড়াতে হলে তাদের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। দেশি ফিজিও ও ট্রেনারদের ক্ষেত্রেও তাই। মাঠ কর্মীদের বেতনও বাড়াতে হবে।

এনামুল হক বিজয় (৮): ৫০ ওভার ও টি-টোয়েন্টিতে লিগ বাড়াতে হবে। বিপিএলের আগে আরেকটি টি-টোয়েন্টি লিগ হওয়া জরুরি। জাতীয় লিগে আগে প্রথম শ্রেণির ম্যাচের সঙ্গে একটি এক দিনের ম্যাচ খেলা হতো, সেটা চালু করা উচিত।

নুরুল হাসান (৯): ঘরোয়া ক্রিকেটের একটি নির্দিষ্ট দিনপঞ্জিকা থাকতে হবে, যেন আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া যায়।

জুনায়েদ সিদ্দিক (১০): প্রিমিয়ার লিগের বকেয়া টাকা যেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাওয়া যায়।

ফরহাদ রেজা (১১): দুটির বেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি খেলতে না দেওয়ার বিধিনিষেধ তুলে দিতে হবে। যদি জাতীয় দল বা জাতীয় লিগে ব্যস্ত না থাকলে তাদের যেন অন্য কোথাও খেলার সুযোগ দেওয়া হয়।

সবার দাবি উত্থাপন শেষে আরেকবার মিডিয়ার সামনে কথা বলেন সাকিব। তুলে ধরেন ঘরোয়া ক্রিকেটের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। তিনি বলেন, ‘এখানে যেহেতু আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে বেশি কথা হচ্ছে, আমাদের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বিভাগের মান আমরা সবাই জানি। বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমে এসেছে। ম্যাচে যাওয়ার আগেই অনেক দল জেনে যায় যায় যে কোন দল জিতবে, কোন দল হারবে। এটা খুবই দুঃখজনক। এটি ঠিক করা খুবই জরুরি।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads