• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
প্রশংসায় ভাসছে আকবর ব্রিগেড

সংগৃহীত ছবি

ক্রিকেট

প্রশংসায় ভাসছে আকবর ব্রিগেড

  • ক্রীড়া প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

সিনিয়রদের ব্যর্থতায় দেশের ক্রিকেট যখন শোকে মুহ্যমান, তখনই যুবারা দেখাল আলোর পথ। তারা প্রমাণ করল পরিশ্রম, অধ্যবসায়, একাগ্রতা থাকলে স্পর্শ করা যায় দূরের স্বপ্নকে। জয় করা যায় বিশ্বকেও। বয়সভিত্তিক বলে তাতে কমে না সাফল্যের গুরুত্ব, বরং তা উজ্জীবনী মন্ত্র হিসেবে ধরা দেয় ক্রিকেটের অলিগলিতে। অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে পরাক্রমশালী ভারতকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের তকমা এখন আকবর আলীদের গায়ে। দেশের ক্রিকেটে যা সৃষ্টি করেছে নব জোয়ারের। যুবাদের এমন সাফল্যে গোটা দেশই আজ তৃপ্ত, রোমাঞ্চিত। প্রশংসার বৃষ্টিতে স্নাত হচ্ছে আকবর আলী ব্রিগেড। শুধু দেশেই নয় বাংলার মানচিত্র ছাড়িয়ে বিশ্ব পরিমণ্ডলেও যুবারা ভাসছে অপার স্তুতিতে।

কবে দেশের মাটিতে পা রাখবে যুব দল। অধীর অপেক্ষায় ১৬ কোটি মানুষ। জাঁকালো সংবর্ধনা দিতে প্রস্তত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সংবর্ধনা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বর্তমান সরকারও। পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী দেশে ফেরার জন্য বুধবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে

 টাইগার যুবাদের। এদিন সকাল ৮টা ১০ মিনিটে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। আজ রাতে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে যুবারা। প্রায় ১২ ঘণ্টার যাত্রা শেষে দেশের মাটিতে পা রাখবে ইমন, হূদয়, শরিফুলরা।

বাংলাদেশ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় অভিনন্দনের জোয়ার বইছে। প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে বিসিবি, জাতীয় দলের বর্তমান ও সাবেক ক্রিকেটার রয়েছেন এ তালিকায়। দেশের বাইরেও অনেক ক্রিকেটার সাধুবাদ জানিয়েছে যুবাদের। যাদেরকে হারিয়ে এই শিরোপা সেই ভারতও পিছিয়ে নেই। দেশটির ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআইও টুইটের মাধ্যে অভিনন্দন জানিয়েছে। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ভালো লড়াই করেছো টিম ইন্ডিয়া। বিশ্বকাপের ফাইনালে রোমাঞ্চকর সমাপ্তি, অভিনন্দন বাংলাদেশ।’

বাংলাদেশের বিশ্বজয় কীভাবে দেখছে ভারতীয় মিডিয়া। এ জয়কে ভিন্নভাবে দেখছে না ভারতীয় মিডিয়া। স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছে তারা। যদিও কিছু সংবাদমাধ্যম ম্যাচ শেষে টাইগার যুবাদের অতিরিক্ত উদযাপন এবং ক্ষণিকের হাতাহাতির বিষয়টি উল্লেখ করেছে। কয়েকটি আবার সেটিকে লিড করেছে।

আনন্দবাজার নিজেদের অনলাইন সংস্করণে যেমন লিখেছে, ‘প্রায় হাতাহাতিতে শেষ হলো দ্বৈরথ’। হিন্দুস্তান টাইমস শিরোনাম করেছে, ‘বৃথা গেল বিষ্ণের নায়কোচিত প্রচেষ্টা, ভারতকে হারিয়ে প্রথম শিরোপা জয় বাংলাদেশের’। ইন্ডিয়া টুডে টাইগার যুবাদের দুর্দান্ত জয়ের চেয়ে বেশি হাইলাইট করেছে ঝগড়া-বিবাদের বিষয়টি। তারা শিরোনাম করেছে, ‘ফাইনাল শেষে হাতাহাতির জন্য বাংলাদেশ খেলোয়াড়দের দুষেছেন ভারত অধিনায়ক’।

এ নিয়ে একাধিক খবর ছাপিয়েছে দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। তারা এক প্রতিবেদনের শিরোনাম করেছে, ‘প্রতিবেশী নায়কেরা’। আরেকটি শিরোনাম করেছে, ‘বাংলা ক্রিকেটের বিস্ময়কর গল্প’। ভারতের দ্য টেলিগ্রাফ লিখেছে, ‘হূদয় ভাঙল ভারতের ছেলেদের’।

তবে বাস্তবতা ভিন্ন। ম্যাচে বেশি স্লেজিং করেছে আসলে ভারতের যুবারাই। হূদয় ভেঙেছে বলেই অভদ্রতার শেষটা করেছে তারা। বিজয়োল্লাসের সময় বাংলাদেশিদের দিকে মারার জন্য তেড়ে এসেছিল একজন। একজনের হাত থেকে বাংলাদেশের পতাকা কেড়ে নিয়ে ফেলেও দেওয়া হয়। কয়েকজন গালিগালাজও করেন। শুরু হয় কিছুটা হাতাহাতি। এমন ঘটনায় উল্টো বাংলাদেশ অধিনায়ক আকবর আলীই সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি জানি না কী হয়েছিল। জিজ্ঞেস করেছিলাম, কী ঘটেছিল। আমি মনে করি, কোনো জায়গাতেই এমনটা হওয়া উচিত নয়। প্রতিপক্ষকে আমাদের সম্মান করা উচিত। খেলাটাকে সম্মান করা উচিত। ক্রিকেটকে বলা হয় জেন্টলম্যানদের গেম। অনভিপ্রেত এ ঘটনার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমার দলের হয়ে আমি ক্ষমা চাচ্ছি।’

যুবাদের সাফল্যে রোমাঞ্চিত বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘অভিনন্দন বাংলাদেশ, বিশেষত আমার শহরের অভিষেক দাসকে। রাকিবুল, শরিফুল, ইমন এবং দলের সব খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফকে শুভেচ্ছা। আকবর তুমি দুর্দান্ত। শুধু আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শেখ। কী দুর্দান্ত অর্জন। বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষের জন্য কী সুন্দর মুহূর্ত। অনেক দূর যেতে হবে ছোট ভাইয়েরা। ভবিষ্যৎ সাফল্যের জন্য আশীর্বাদ রইল। মাহেন্দ্রক্ষণটা উপভোগ করো।’

আকবররা জাতিকে গর্বিত করেছে বলে উল্লেখ করেছেন মুশফিকুর রহিম। তিনি লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি, বাংলাদেশের ক্রিকেটার হিসেবে এটি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। ছেলেরা আমাকে গর্বিত করেছে। অভিনন্দন সুপারস্টার।’

ভারতের জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার এবং ক্রিকেট বিশ্লেষক হার্শা ভোগলেও মেতেছেন আকবরদের বন্দনায়। সোশ্যাল মিডিয়া টুইটারে বাংলাদেশকে যোগ্য দল হিসেবে অভিহিত করেন তিনি। টুইট বার্তায় হার্শা বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য অসাধারণ এক মুহূর্ত এটি। যুব বিশ্বকাপ জিতল তারা। এটি তাদের প্রাপ্য।’ অস্ট্রেলিয়ান সাবেক ক্রিকেটার টম মুডি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের টাইগারদের জন্য দারুণ একটা মুহূর্ত। তারাই এটার প্রাপ্য।’ একসময়ের দুর্ধর্ষ ক্যারিবীয় পেসার ইয়ান বিশপ বলেন, ‘প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়ে বাংলাদেশকে শুভেচ্ছা। এটা তোমাদের প্রাপ্য।’ ভারতের ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ আকাশ চোপরা লিখেছেন, ‘অভিনন্দন বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথমবার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতলে। দুই বছরের কঠোর পরিশ্রম ও প্রস্তুতির ফসল। আমাদের প্রতিবেশীরা প্রথমবার আইসিসির কোনো ইভেন্ট তাদের কেবিনেটে রাখল। শুভেচ্ছা।’ 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads