• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
ফিরেই সাকিব পাবেন অধিনায়কত্ব?

ছবি : সংগৃহীত

ক্রিকেট

ফিরেই সাকিব পাবেন অধিনায়কত্ব?

  • ক্রীড়া প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করায় গত বছরের অক্টোবর থেকে অভিশপ্ত এক অধ্যায়ের ঠিকানায় তিনি। নিষিদ্ধ এক বছরের জন্য। যা শেষ হতে বাকি দেড় মাসের মতো। আগামী ২৯ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্ত হবেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এরপর তিনি ফিরবেন চিরচেনা সবুজ গালিচায়। 

সব কিছু প্রস্তুতই আছে সাকিবের জন্য। নিষেধাজ্ঞা ফুরানোর কয়েকদিন পরই জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তোলার সুযোগ হতে যাচ্ছে তার। কোয়ারেন্টিন জটিলতায় অনিশ্চয়তায় পড়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কা সফর শেষ পর্যন্ত হলে দ্বিতীয় টেস্ট থেকেই বাংলাদেশ শিবিরে দেখা যাবে সাকিবকে। দলে ফিরতে সাকিব যেমন একটি একটি করে মুহূর্ত গুনছেন, তেমনি তার অপেক্ষায় বাংলাদেশ দলও।

নিষেধাজ্ঞায় থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কোনো সুযোগ-সুবিধা নিতে পারবেন না সাকিব। যে কারণে নিজেকে প্রস্তুত করতে শৈশবের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা বিকেএসপিকে বেছে নিয়েছেন তিনি। গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে শৈশবের দুই কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম ও মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের তত্ত্বাবধানে অনুশীলন শুরু করেছেন সাকিব।

যতই তার দলে ফেরার সময় ঘনিয়ে আসছে, একটি আলোচনা, একটি প্রশ্ন ততই বেগবান হচ্ছে। দলে ফিরেই অধিনায়কত্ব পাবেন সাকিব? এই প্রশ্নের উত্তর এখনই মিলছে না। এ নিয়ে আগ বাড়িয়ে কথা বলার দায়িত্বটি বিসিবির কোনো কর্তাই নিচ্ছেন না। তবে গুঞ্জন আছে, আপাতত সাকিবকে অধিনায়কত্ব দেওয়া নিয়ে ভাবছে না বিসিবি।

তার হারানো রাজ্য টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির নেতৃত্বভার তার কাছেই ফিরবে, তবে সেটা নির্দিষ্ট একটা সময়ের পর। আবার এমনও শোনা গেছে, অধিনায়কত্ব ফিরে পেতে বেশি সময় না-ও লাগতে পারে তার। ওয়ানডেতে তামিম ইকবালই থাকবেন অধিনায়ক। বাকি দুই ফরম্যাট টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে সাকিবকে অধিনায়কত্বে ফেরানো হবে।

অধিনায়ক সাকিবের মেধা নিয়ে কারও মনেই প্রশ্ন নেই। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা শেষে দলে সুযোগ পেয়েই কেউ অধিনায়কত্ব ফিরে পেয়েছেন, বিশ্ব ক্রিকেটে এমন নজির নেই বললেই চলে। আদৌ এমন হয়েছে কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন। তাই সাকিব যদি বাংলাদেশ দলে ফিরেই অধিনায়কত্ব পান, সেটা হবে ক্রিকেট ইতিহাসের বিরল এক ঘটনা।

সামপ্রতিক উদাহরণ হিসেবে স্টিভেন স্মিথের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। বল টেম্পারিংয়ের দায়ে নিষিদ্ধ হওয়া অস্ট্রেলিয়ার এই ব্যাটসম্যান ক্রিকেটে ফিরেছেন অনেকদিন হলো। কিন্তু এখনও ফিরে পাননি অধিনায়কত্ব। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া তাকে এক বছর খেলায় ও দুই বছর অধিনায়কত্বে নিষিদ্ধ করেন। কোনো নিষেধাজ্ঞাই আর নেই তার ওপর। তবু অধিনায়কত্বে ফেরা হয়নি স্মিথের। 

নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরে আসা একজন ক্রিকেটারকে খুব দ্রুতই অধিনায়কত্ব দেওয়ার বিপক্ষে অনেকেই। এই অনেকের তালিকায় আছেন বাংলাদেশের দুজন সাবেক অধিনায়কও। সাকিবের অধিনায়কত্ব নিয়ে তাদের প্রশ্ন না থাকলেও তারা চান না ফিরেই সাকিব নেতৃত্বভার পাক। দলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পর, হারিয়ে ফেলা বিশ্বাস অর্জন করার পর দল যদি তাকে অধিনায়ক করতে চায়, তবেই তাকে অধিনায়ক হিসেবে দেখতে চান তারা।

বাংলাদেশের সাবেক এক অধিনায়ক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাকে কিন্তু বিসিবি নিষিদ্ধ করেনি। তাকে নিষিদ্ধ করেছে আইসিসি। এর মাঝে যদি কাউকে অধিনায়ক করা হয়, তাকে নিশ্চয়ই বলা হয়নি তুমি খণ্ডকালীন অধিনায়ক। কিংবা সাকিব এলে তুমি অধিনায়কত্বে থাকবে না। এটা কিন্তু পরিষ্কার করেনি বিসিবি। পরিষ্কার না করে তাকে বাদ দিলে সেটা অবিচার হবে। 

টেস্টে মুমিনুলের ওপরই ভরসা রাখার কথা বলছেন তিনি, মুমিনুলকে যেহেতু অধিনায়ক করা হয়েছে, তাকে বাদ দেওয়া উচিত হবে না। সাকিব এসেছে বলে সে বাদ, এটা তো আরও হওয়া উচিত নয়। পারফরম্যান্সের কারণে হিসাব করলে সেটা ভিন্ন কথা। কারণ ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে মুমিনুলের নেতৃত্বে খারাপ খেলেছে। তবু হিসাব অনুযায়ী সাকিবকে অধিনায়কত্ব দেওয়া উচিত নয়।

আরেক সাবেক অধিনায়ক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সাকিবকে এখন অধিনায়ক করা হলে আপনি অন্যদেরকে কী বার্তা দিলেন? অধিনায়ক তৈরি করতে হয় একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। সাকিব কতো বড় অধিনায়ক, সে আলোচনা পরে। কিন্তু সে তো এক দিনেই এমন অধিনায়ক হয়নি। তাকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে যারা এখন আছে, তাদেরও সুযোগ দিতে হবে। তাদেরকে হুট করে বাদ দিলে সেটা হবে অনৈতিক।

পরিসংখ্যানে সাকিব বাংলাদেশের অন্যতম সেরা অধিনায়ক। রেকর্ড তার পক্ষেই রায় দেবে। ১৪ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে তিনটি ম্যাচে বাংলাদেশকে জিতিয়েছেন তিনি। অধিনায়ক হিসেবে তার জয়ের গড় ২১.৪২। সাকিবের জয়ে বেশি গড় কেবল মুমিনুল হকের, ২৫ (৪ ম্যাচে একটিতে জয়)।

ওয়ানডেতেও সফল বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার। ৫০ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে ২৩ ম্যাচে জয় (জয়ের গড় ৪৬.৯৩) নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন অধিনায়ক সাকিব। এই ফরম্যাটে তার চেয়ে সফল কেবল মাশরাফি বিন মূর্তজা (৮৮ ম্যাচে ৫০ জয়, গড় ৫৮.১৩)। টি-টোয়েন্টিতেও দারুণ নেতৃত্বে দলকে ঠিক পথেই রেখেছিলেন তিনি। ২১ ম্যাচে দলকে জিতিয়েছেন ৭টি ম্যাচে (জয়ের গড় ৩৩.৩৩)।

অনেকের চোখেই সাকিব অন্যতম সেরা অধিনায়ক। কারও কারও চোখে মাঠে তিনি মাশরাফি বিন মূর্তজার চেয়েও বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়ক। যে কারণেই টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব সাকিবের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। মাশরাফির অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর ওয়ানডেতেও নেতৃত্বভার পেতেন তিনি। দ্বিতীয়বারের মতো তিন ফরম্যাটেই অধিনায়ক হওয়ার খুব কাছাকাছি ছিলেন বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার। কিন্তু তখনই ক্রিকেট থেকে নির্বাসনে চলে যান সাকিব। তবে এবার অপেক্ষার পালা। আর মাত্র কিছুদিন। আবারো জাতীয় দলের জার্সিতে সাকিবকে দেখতে মুখিয়ে আছে কোটি ভক্ত-সমর্থক।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads