• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
হোয়াইটওয়াশ ওয়েস্ট উইন্ডিজ

সংগৃহীত ছবি

ক্রিকেট

হোয়াইটওয়াশ ওয়েস্ট উইন্ডিজ

  • মাহমুদুন্নবী চঞ্চল
  • প্রকাশিত ২৫ জানুয়ারি ২০২১

টানা দুই ম্যাচে বাজে হার। চট্টগ্রামে পৌঁছে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছিলেন সিমন্স। ব্যাটসম্যানদের প্রতি উইন্ডিজ কোচের উদাত্ত আহ্বান, ‘রান করো একটু বেশি’। গুরুর দেখানো পথে হাঁটার প্রানান্তকর চেষ্টা ছিল শিষ্যদের। ব্যাটিংয়ে তা ফুটে উঠল হালকা, কিন্তু বোলিংয়ে ছন্নছাড়া। সব মিলিয়ে দিন শেষে ক্যারিবীয়দের গায়ে লেপ্টেই গেল হোয়াইটওয়াশের কালিমা। তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে ১২০ রানে হেরে গেছে জেসন মোহাম্মদ শিবির।

টানা দুই ম্যাচে পরে ব্যাট করেছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে চিত্র বদল। আগে করতে হলো ব্যাটিং, টস হেরে। আর সেটা হলো মনের মতোই। তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ পেলেন ফিফটির দেখা। তাতে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ালো ৬ উইকেটে ২৯৭। এমন টার্গেট ছুঁতে পারবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভাবেনি কেউ। হয়নিও তা। তারপরও আগের দুই ম্যাচের তুলনায় ক্রিজে একটু বেশিই আকড়ে থাকল দলটি, শেষ মেষ ৪৪.২ ওভারে ১৭৭ রানে অল আউট ক্যারিবীয় শিবির।

নিজেদের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ। প্রথম হোয়াইটওয়াশ ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতেই। ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টানা আট ম্যাচে জিতল বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে সবশেষ ১০ ওয়ানডে সিরিজের নয়টিতেই জয় বাংলাদেশের। এই জয়ে আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগে পেল আরও ১০ পয়েন্ট। এর সঙ্গে পয়েন্ট তালিকায় উঠে এলো দুই নম্বরে।

বড় টার্গেটে খেলতে নেমে শুরু থেকেই ধুঁকেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বল হাতে সফরকারী শিবিরে বরাবরের মতো প্রথম আঘাত হানেন বাংলাদেশের মোস্তাফিজুর রহমান। শেষটা করেন দলে ফেরা তাসকিন। মাঝে ছিল সাইফউদ্দিন আর মিরাজ ঝলক।

মিডল অর্ডারে সবাই চেষ্টা করেছেন ক্রিজে টিকে থাকতে। যেখানে জয় নয়, দলটির লক্ষ্য ছিল ৫০ ওভার খেলা। তারপরও ধারাবাহিক বিরতিতে উইকেট পড়েছে উইন্ডিজের। এদিন অবশ্য সাকিব আল হাসান নিজের পুরো বোলিং কোটা পূরুণ করতে পারেননি। কুচকিতে টান পড়ে মাঠের বাইরে চলে যান ৩০তম ওভারে। সাকিবের ওভার পূরুণ করতেই বাংলাদেশ ক্যাপ্টেন বোলার চেঞ্জ করেছেন একের পর এক। আটজন বোলার বল করেছেন ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধে।

শেষ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস শেষ হয় ১৭৭ রানে, ৪৪.২ ওভার। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেন রভম্যান পাওয়েল। ৩১ রান করেন বনার। অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদ ১৭, রেইফার ২৭ রান করেন। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সফল সাইফউদ্দিন। ৯ ওভারে ৫১ রানে তিনি নেন তিন উইকেট। মোস্তাফিজ ও মিরাজ দুটি, তাসকিন ও সৌম্য সরকার নেন একটি করে উইকেট।

এর আগে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল বাজেই। রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন লিটন দাস। নাজমুল হোসেন শান্তকে সঙ্গে করে দলের প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। দলীয় ৩৮ রানে দ্বিতীয় উইকেট জুটি ভাঙেন কাইল মায়ার্স। ৩০ বলে ২০ রান করে সাজঘরে ফেরেন শান্ত। সাকিবের তিন নম্বর জায়গায় ব্যাট করতে নেমে তিন ম্যাচেই শান্ত দিলেন ব্যর্থতার পরিচয়।

চারে নামা সাকিব ব্যাট হাতে সামর্থের পরিচয় দিয়েছেন এদিন। অধিনায়ক তামিমের সঙ্গে ম্যাচের সবচেয়ে বড় জুটি গড়েন তিনি। যদিও রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফিরতে পারতেন সাকিব। ভাগ্য ভালো তার দেয়া ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি উইন্ডিজ বোলাররা। জীবন পাওয়া সাকিব এরপর থেকে ছিলেন বেশ সতর্ক।

এই জুটি দলকে নিয়ে যান ১৩১ রান পর্যন্ত। এরই মধ্যে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৪৯তম ফিফটির দেখা পান তামিম। টানা তিন ম্যাচে রান পাওয়া তামিমের দিকে এদিন অনেকেই তাকিয়ে ছিলেন। দেখার বিষয় ছিল তিন অঙ্কের রানের দেখা পান কি না। তবে না। তিনি থেমে যান ব্যক্তিগত ৬৪ রানে। জোসেফের বলে হোসেনের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। জোসেফের শর্ট বল লেগে ঘুরিয়েছিলেন তামিম। ঠিক মতো খেলতে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। ধরা পড়েন মিডউইকেটে। ৮০ বলের ইনিংসে তামিম হাকান তিনটি চার ও একটি ছক্কা।

তামিমের বিদায়ের পর দলের হাল ধরেন সাকিবের সঙ্গে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহীম। এই জুটিতে আসে ৪৮ রান। ফিফটি করার পরই বিদায় নেন সাকিব। মিডিয়াম পেসারের বল লেগে ঘুরিয়ে নিতে চেয়েছিলেন সিঙ্গেল। কিন্তু অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে ভেতরে ঢোকা বল ব্যাটেই খেলতে পারেননি। আঘাত হানে মিডল স্টাম্পে। ৮১ বলে ৫১ রানে তিনি রেইফারের বলে বোল্ড। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে সাকিবের এটি ৪৮তম ফিফটি। দেখেশুনে খেলা সাকিব তার ইনিংসে হাকিয়েছেন মাত্র তিনটি চার। নেই কোন ছক্কা।

সাকিবের বিদায়ের পর জমে যায় মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর জুটি। এই জুটি থেকে আসে ৭২ রান। দলীয় ২৫১ রানে এই জুটি ভাঙেন রেইফার। ৫৫ বলে ৬৪ রান করে সাজঘরে ফেরেন মুশফিক। আগের বলে ছক্কা হাঁকান রেমন রিফারকে। পরের বলে খেলতে চাইলেন ইনসাইড আউট। কিন্তু পার করতে পারলেন না কাভার। আলজারি জোসেফের হাতে ধরা পড়েন মুশি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে মুশফিকের এটি ২৯তম ফিফটি। মুশফিকের ইনিংসে ছিল চারটি চার ও দুটি ছক্কার মার।

দুই ম্যাচ পর প্রথম ব্যাট করার সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি সৌম্য সরকার। সাতে নেমে করেছেন ঠিক সাত রান। এরপর হয়েছেন রান আউট। সিরিজে প্রথম মাঠে নেমে সাইফউদ্দিন ২ বলে থাকেন ৫ রানে অপরাজিত। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৪৩ বলে থাকেন ৬৪ রানে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ। তার ইনিংসে ছিল সমান তিনটি করে চার ও ছক্কা। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে মাহমুদউল্লাহর এটি ২২তম ফিফটি।

ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন মুশফিকুর রহীম। বল ও ব্যাট হাতে দারুণ করায় সিরিজ সেরার পুরস্কার গেছে সাকিব আল হাসানের শোকেসে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads