• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
ক্রিকেটে ব্যর্থতার দায় বোর্ডেরও

সংগৃহীত ছবি

ক্রিকেট

ক্রিকেটে ব্যর্থতার দায় বোর্ডেরও

  • তারিক আল বান্না
  • প্রকাশিত ০৩ এপ্রিল ২০২১

বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যতটুকু খ্যাতি অর্জন করেছে, তার সিংহভাগজুড়ে রয়েছে ক্রিকেট। ক্রিকেটাররা ব্যাটে-বলে সাফল্য পেয়েছে বলেই ওই খ্যাতি। আর সাফল্যের খ্যাতিকে নিজেদের কর্মগুণ বলে বিবেচনায় এনে তাকে সেলিব্রিট করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এখন যখন জাতীয় দল ব্যর্থ হলো নিউজিল্যান্ড সফরে, তখন এরও দায়ভার শুধু খেলোয়াড়দের নয়, নিশ্চয়ই বিসিবির কাঁধেও বর্তায়।

১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ আইসিসি ট্রফি জিতে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ক্রিকেটের চূড়ান্ত পর্বে খেলার টিকিট লাভ করে। সেই সঙ্গে সত্যিকার অর্থে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। আর তখন থেকেই জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা ‘টাইগার’ খ্যাতি লাভ করে সারা বিশ্বের কাছে। বাংলাদেশের ক্রীড়ামোদীরা কমবেশি অনেকেই জানে, এর আগে ১৯৯৬ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) যোগসাজশে একটি চক্র বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের ক্রিকেট পিচ খুঁড়ে ফেলেছিল। আইসিসি ট্রফির অনুশীলনে ব্যাঘাত ঘটেছিল দারুণভাবে। মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, আকরাম খান, আমিনুল ইসলাম বুলবুল, নাইমুর রহমান দূর্জয়রা তখন তার প্রতিবাদে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ব্যাট-বল নিয়ে প্রতীক অনুশীলন করেছিলেন। আইসিসি ট্রফি আসরের আগে তারা তেমন কোনো অনুশীলনের সুযোগ পাননি। শুধু নিজেদের দেশপ্রেম, ঐকান্তিক চেষ্টাকে পুঁজি করে আইসিসি ট্রফি জিতে দেশে ফেরেন নান্নু-আকরামরা। সারাদেশের মানুষের কাছে ‘জাতীয় বীর’ বনে যান ট্রফি জয়ীরা। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব উদ্যোগে খেলোয়াড়দের বিপুল সংবর্ধনা প্রদান করে তাদেরকে সামনে আরো ভালো করার উৎসাহ দেন। ঠিকই বাংলাদেশ পরবর্তী সময়ে আরো ভালো করে। বিশ্বকাপে এসেই পরাজিত করে সাবেক বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন শক্তিশালী পাকিস্তান দলকে। ধীরে ধীরে বিশ্ব ক্রিকেটে একটা স্থায়ী অবস্থান তৈরি করে নেয় বাংলাদেশ। কিন্তু বোর্ডের কর্মকর্তারা দলের কৃতিত্বকে নিজেদের সাফল্য ভাবতে শুরু করে। কৃতিত্বটাও অন্য কাউকে ভাগ দিতে ছিলেন নারাজ কর্মকর্তারা, এমনকি খেলোয়াড়দেরও নয়। যার প্রমাণ দেখা গেছে, বিশ্বকাপের (১৯৯৯) জন্য দল বাছাই করতে গিয়ে আইসিসি ট্রফি জয়ী অন্যতম নায়ক নান্নুকে প্রাথমিক তালিকাতেও রাখেনি বিসিবি। যদিও শেষ পর্যন্ত পত্র-পত্রিকায় লেখালেখির চাপে নান্নুকে প্রাথমিক দলে না নিলেও বিশ্বকাপ চূড়ান্ত দলে নিতে বাধ্য হয় বিসিবির তৎকালীন নির্বাচকরা। সেই বঞ্চনার কথা হয়তো বর্তমান প্রধান নির্বাচক হয়ে আজ নান্নু নিজেই ভুলে গেছেন। বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাকে নিউজিল্যান্ড সফরের জন্য ঘোষিত প্রাথমিক দলে না রাখায় নান্নুর আচরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যাহোক, আইসিসি ট্রফি জয়ের পর থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেটভাগ্য খুলে যায়। বোর্ড কর্মকর্তাদের তো চেনাই যায় না। বোর্ডের সদস্যপদ পেতে যে দৌড়ঝাঁপ ওই সময় শুরু হয়েছে, তা এখনো চলছে। সেটা হোক, কিন্তু ক্রিকেটকে পূর্ণতা দেওয়ার জন্য যা কিছু করা দরকার, তার সিকিভাগও করছে না বোর্ড। ফলে বিশ্ব ক্রিকেটে চমক সৃষ্টিকারী বাংলাদেশ দল বর্তমানে একের পর এক ব্যর্থতা দেখাচ্ছে। যে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সর্বশেষ আসরে সেমিফাইনালে উঠেছিল, সেই বাংলাদেশ যেন অচেনা দলে পরিণত হয়েছে। নিউজিল্যান্ডে তারা ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির ছয় ম্যাচেই হেরেছে এবং বড় ব্যবধানে।

প্রথমত, বিসিবির নির্বাচকমণ্ডলীর দল গঠন নিয়ে কথা উঠছে। প্রতিভাবান তরুণদের সঙ্গে অভিজ্ঞদের সমন্বয় করে দল গঠন না করার পেছনে তাদের যুক্তিটা কী, তা স্পষ্ট নয়। নির্বাচকরা বলছেন, মাশরাফির সঙ্গে নাকি তারা কথা বলেই দল গঠন করেছেন। অথচ মাশরাফি কয়েকদিন আগে জানালেন, তার সঙ্গে এ ব্যাপারে কারো কোনো কথাই হয়নি। দ্বিতীয়ত, শক্তিশালী ব্যাটিং ও বোলিং লাইনআপ কী সেটা নির্বাচকরা জানেন কি-না সন্দেহ রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, যাকে ওয়ানডের জন্য দলে (বোলিং কিংবা ব্যাটিং) নেওয়া হলো, তিনি আসলে ছোট ফরম্যাটের অযোগ্য। আবার অনেক যোগ্য খেলোয়াড় আছেন, যারা প্রাথমিক দলেই ডাক পান না। তৃতীয়ত, প্রাথমিক দল যেমনই হোক, একটা বড় আসরে অংশগ্রহণের জন্য যে ন্যূনতম সময় অনুশীলনের দরকার, তা কিন্তু খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় না। ফলে তড়িঘড়ি করে একটি চূড়ান্ত দল গঠন করেই বিগ আসরে অংশ নিতে হয় টাইগারদের। তাতে হতাশা ছাড়া আর কিছু জোটে না। চতুর্থত, যারা দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন, তারা কী ম্যাচে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন  করেছেন, নাকি শপিং নিয়েই ব্যস্ত থাকছেন? এসব কি নির্বাচকদের দেখার দায়িত্ব নয়?  

বিসিবি নিশ্চয়ই নির্বাচকদের এসব কর্মকাণ্ড দেখছেন। কিন্তু তারা কি কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন? আজ পর্যন্ত আমরা তা দেখিনি। বিসিবির কাজটা কী সেটাই হয়তো এই সংস্থার কর্মকর্তারা জানেন না। তারা তো দেশের ক্রিকেটের বড়চেয়ে বড় সমন্বয়ক। বিসিবির প্রধান প্রধান কর্মকর্তারা তো নির্বাচক, খেলোয়াড়, আম্পায়ার, গ্রাউন্ডসম্যান, কোচ, ফিজিও ও ট্রেইনারদের কাজকর্ম দেখভাল করবেন। বিশ্বের কোনো দেশের ক্রিকেট বোর্ড কর্মকর্তারা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলান না, যেটা আমাদের এখানে নিয়মিত হচ্ছে। আসলে বিসিবির কর্মকর্তারা ভুলেই যান, দেশের ক্রিকেটের মূল অভিভাবক তারা। এখন উচিত, এবারের নিউজিল্যান্ড সফর কেন ব্যর্থ হলো, তার সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত করা। আর এটা করতে হবে বিসিবিকেই। সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে বাংলাদেশের ক্রিকেট আবারো সেই স্বপ্নের জায়গায় পৌঁছাতে সক্ষম হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।    

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads