• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
বিউটি সার্কাসের টিজারটি ঠিক যেন হাওয়াই মিঠাই

জয়া আহসান

ছবি : সংগৃহীত

ঢালিউড

বিউটি সার্কাসের টিজারটি ঠিক যেন হাওয়াই মিঠাই

  • রাফিউজ্জামান রাফি
  • প্রকাশিত ১৩ মার্চ ২০১৯

সার্কাস গ্রামবাংলার একটি ঐতিহ্য। আর ঐতিহ্য মানেই শত বছরের পুরনো কোনো জিনিস। কিন্তু পুরনো জিনিসও যে এমন আধুনিকভাবে উপস্থাপন করা যায়, বিউটি সার্কাস নামক চলচ্চিত্রটির টিজার না দেখলে বিশ্বাসই হতো না। টিজারটিতে সার্কাসের পরিষ্কার ও রুচিসম্মত উপস্থাপন দেখে মনে হয়ছে সার্কাস বিংশ শতাব্দীতে আবিষ্কৃত কোনো আয়োজন। হলফ করে বলা যায়, এমন উপস্থাপন সার্কাস না দেখা নতুন প্রজন্মের মাঝে সার্কাসের প্রতি নতুন করে আগ্রহ বাড়িয়ে দিতে বাধ্য।

টিজার সাধারণত তৈরি হয় একটি কন্টেন্টের চুম্বক অংশগুলো দিয়ে। সেক্ষেত্রে নির্মাতারা টিজার তৈরিতে ব্যবহার করেন কন্টেন্টের টানটান উত্তেজনাপূর্ণ অংশগুলো। কখনো কখনো সেগুলোকে অতিরঞ্জিতও মনে হয়। বিউটি সার্কাসের টিজারও সম্ভবত তেমন টানটান অংশগুলো দিয়েই তৈরি। কিন্তু সেগুলো মোটেও অতিরঞ্জিত মনে হয়নি আমার। বরং দৃশ্যগুলো অসাধারণ দৃষ্টিনন্দন লেগেছে এবং চোখ জুড়িয়ে গেছে। বিশেষ করে টিজারে শৈল্পিক সৌন্দর্যের অধিকারী জয়া আহসানের উপস্থাপনটির কথা না বললেই নয়। জাদুকরি পোশাকে মোহনীয় ভঙ্গিতে হাজার হাজার দর্শকের সামনে পায়রা উড়িয়ে ‘আই লাভ ইউ’ ছুড়ে দিয়ে জয়ার হাজির হওয়াটা ছিল যেন এক অনন্য জাদুকরি ব্যাপার। দৃশ্যটি দেখে মনে হয়েছে, সাদা পায়রার এমন দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য যেন এমন দৃষ্টিনন্দন ও নান্দনিক অভিনেত্রীর সঙ্গেই যায়।

এ ছাড়া টিজার ভরা অভিজ্ঞ অভিনেতাদের পদচারণা দেখে যে কেউ বলবে নির্মাতা অভিনেতা-অভিনেত্রী বাছাইয়ে সর্বোচ্চ পরিপক্বতার পরিচয় দিয়েছেন। শতাব্দী ওয়াদুদ, এবিএম সুমন, ফেরদৌস ও জয়ারা টিজারে একবার করে হাজির হলেও মনে হচ্ছিল পুরো সময়জুড়েই তারা রয়েছেন। টিজারজুড়ে জাঁকালো গোঁফের সমাজতান্ত্রিক চাহনির ফেরদৌস, রাগী ও ক্ষেপাটে ভূমিকায় এবিএম সুমন এবং অভিজ্ঞ শতাব্দী ওয়াদুদ ও তৌকীর আহমেদের মতো অভিনেতাদের ঘোরাফেরা সম্পূর্ণ টিজারকেই যেন নিয়ে গেছে অন্য উচ্চতায়।

শুনেছি সিনেমাটির নির্মাতা মাহমুদ দিদারের এই সিনেমার মাধ্যমেই পরিচালনায় হাতেখড়ি হয়েছে। অথচ টিজারটি দেখে মনে হয় এমন অসাধারণ অসংখ্য কাজ নির্মাণ করে অভিজ্ঞতার ঝুলি ভরে জহুরী হওয়া কোনো নির্মাতার কাজ। মনেই হয় না এটি কোনো নবীন নির্মাতার হাতেখড়ি। এ জন্য প্রতিভাবান নির্মাতা মাহমুদ দিদারকে ধন্যবাদ দেওয়া অবশ্যকর্তব্য। বর্তমানে যখন নির্মাতারা বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে মিডল ক্লাসকে টার্গেট করে আঁতিপাতি টাইপের চলচ্চিত্র নির্মাণ করে পুঁজি ফেরাতে গিয়ে তিন ঘণ্টাব্যাপী চলমান সিনেমার একটি দৃশ্যেও আধুনিকতার ছোঁয়া রাখেন না। সেখানে নবীন নির্মাতার নির্মাণ বিউটি সার্কাস চলচ্চিত্রের টিজার বলে দেয় সিনেমাটির পরতে পরতে রয়েছে আধুনিকতা ও রুচিবোধের যথাযোগ্য ব্যবহার যা পূর্ণদৈর্ঘ্য বিউটি সার্কাসেও অব্যাহত থাকবে বলে আশা রাখা যায়। এমন একটি চলচ্চিত্র প্রযোজনার মাধ্যমে ইমপ্রেস টেলিফিল্মও আবার জানান দিল তারা জোয়ারে গা ভাসান না, তারা জোয়ার তৈরির চেষ্টায় ব্রত।

সবশেষে বলব, বিউটি সার্কাসের টিজারটি নিয়ে লিখতে বসে আমার বার বার হাওয়াই মিঠাইর কথা মনে পড়ছে। হাওয়াই মিঠাইর নাম আশা করি সবারই জানা। গোলাপি রঙের, গোল গোল, মিষ্টি মিষ্টি এই খাবারটি যেন এক জাদুকরি খাবার। দেখতে কী দারুণ বড় বড় অথচ মুখে দিলেই নাই হয়ে যায়! তবে তার স্বাদ ও রেশ স্নায়ুতে খোঁচা দিয়ে যায় দীর্ঘ সময়ের জন্য।

আর তাই এক সেকেন্ডে চুপসে যাওয়া এই আবেদনময়ী খাবার খাওয়ার পর যে আফসোসটি সবার মাথায়ই ঘোরে তা হলো, ‘ইশ, আরেকটু সময় যদি থাকত!’ সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া বিউটি সার্কাস নামক চলচ্চিত্রটির টিজারও আমাকে ঠিক হাওয়াই মিঠাইর মতো স্বাদই দিয়েছে। সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত এই চলচ্চিত্রটির ৫৬ মিনিটের টিজারটি চোখ ও স্নায়ুকে পরতে পরতে আরাম দিয়ে মুহূর্তেই যখন ৫৬ সেকেন্ড অতিক্রম করে, তখন সেই হাওয়াই মিঠাই ফুরিয়ে যাওয়ার পর যেমন আফসোস হতো তেমন আফসোস করে বলতে হয়- ‘ইশ, আরেকটু যদি থাকত!’ 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads