দেখতে দেখতে চলে যাচ্ছে আরো একটি বছর। নতুন বছর শুরু হচ্ছে এ সপ্তাহেই। কর্মচঞ্চল এ বছরটির মাঝেও ঘটে গেছে নানা ঘটনা। চলতি বছরের চলচ্চিত্রের দিকে দৃষ্টি দিলে হতাশার চিত্রই বেশি চোখে পড়ে। হতাশা দিয়েই শুরু হয় চলচ্চিত্রের ২০১৯। বছরের শেষ পর্যন্ত তা বহাল থাকে।
যদিও এই চিত্র কয়েক বছর ধরেই বিদ্যমান। কোনোভাবেই বিপর্যয় থেকে কাটিয়ে উঠতে পারছে না দেশের সবচেয়ে বড় এই বিনোদন মাধ্যমটি। ২০১৮ সালে বাণিজ্যিক ও বিকল্প ধারার ছবি মিলিয়ে মোট ৫৬টি ছবি মুক্তি পেয়েছিল। নতুন বছরের চিত্র আরো করুণ। গত কয়েক দশকের চেয়ে এবারই সবচেয়ে কম সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে।
এখন পর্যন্ত ৪০টি ছবি মুক্তি পেয়েছে। এ বছর মাত্র একটি ছবি ব্যবসাসফল কিংবা হিটের তালিকায় রয়েছে। বাকি সব ছবিই পড়েছে ব্যর্থতা অথবা ফ্লপের কাতারে।
বছরের শুরুতেই বহুল বিতর্কিত সেই সাফটা চুক্তির মাধ্যমে আমদানি করা বিদেশি ছবি দিয়েই যাত্রা শুরু হয় চলচ্চিত্রের বছর। ২০১৯ সালের প্রথম সপ্তাহেই মুক্তি পায় ভারতের ‘বিসজর্ন’ সিনেমাটি। যদিও ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের জয়া আহসান। ছবিটি কলকাতায় আলোচিত হলেও বাংলাদেশে এসে মুখ থুবড়ে পড়ায় হতাশায় ভোগেন চলচ্চিত্র ব্যবসায়ীরা। একই মাসে মুক্তি পায় এম আজাদ পরিচালিত ‘আই অ্যাম রাজ’ দিয়ে। রাজ ইব্রাহিম, সাবরিনা মামিয়া, সাদেক বাচ্চু, আমির সিরাজী অভিনয় করেছেন ছবিটিতে। ছবিটি দর্শকের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়।
ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে মুক্তি পায় ‘আমার প্রেম আমার প্রিয়া’ ও ‘দাগ হূদয়ে’ নামের দুটি ছবি। ধারণা করা হয়েছিল ছবি দুটি হয়তো প্রত্যাশা অনুযায়ী ব্যবসা করবে। পরের সপ্তাহে মুক্তি পায় ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে নির্মিত ছবি ‘ফাগুন হাওয়ায়’। একই সময়ে মুক্তি পায় হাবিবুল ইসলাম হাবিব পরিচালিত ‘রাত্রির যাত্রী’। ফেব্রুয়ারির পরের দুই সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া ‘হূদয়ের রংধনু’ ও যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘প্রেম আমার ২’ সিনেমা দুটিও ব্যবসায়িক দিক থেকে ব্যর্থ হয়।
মার্চ মাসে মুক্তি পায় মোট পাঁচটি ছবি। ছবিগুলো হলো ‘বয়ফ্রেন্ড’, ‘যদি একদিন’, ‘বউ বাজার’ ‘কারণ তোমায় ভালোবাসি’ এবং ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’।
এপ্রিলে মুক্তি পায় মাত্র দুটি সিনেমা। মোহাম্মদ আসলাম পরিচালিত ‘প্রতিশোধের আগুন’। ছবিটিতে অভিনয় করেন জায়েদ খান, মৌ খান, শাহরিয়াজ, নাজসহ অনেকে। আরো মুক্তি পায় নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত ছবি ‘আলফা’। ছবিটিতে এ টি এম শামসুজ্জামান, আলমগীর কবির, দোয়েল ম্যাশ অভিনয় করেন। এটি বিদেশি চলচ্চিত্র বিভাগে অস্কারের জন্যও মনোনীত হয়েছিল। মে মাসে একটি সিনেমাও মুক্তি পায়নি।
জুনে মুক্তি পায় মোট ছয়টি চলচ্চিত্র। এগুলো হলো ‘আবার বসন্ত’, ‘আলোয় ভুবন ভরা’, ‘দি ডিরেক্টর’, ‘নোলক’, ‘পাসওয়ার্ড’, ‘ভালোবাসার উত্তাপ’।
বছরের মাঝামাঝিতে ঈদের সময় মালেক আফসারী পরিচালিত ‘পাসওয়ার্ড’ ছবিটি আলোচিত হয়। নকলের অভিযোগ উঠলেও এ ছবিটিই এ বছরের একমাত্র ব্যবসাসফল ছবি। এতে অভিনয় করেন শাকিব খান, শবনম বুবলী, মামনুন হাসান ইমন ও মিশা সওদাগর। ঈদের পর আবার ব্যর্থ যাত্রা।
একই মাসে মুক্তি পাওয়া ‘আলোয় ভুবন ভরা’ ছবিটি মুক্তির দুদিন পরেই মুথ থুবড়ে পড়ে। ‘দি ডিরেক্টর’, ‘ভালোবাসার উত্তাপ’ ছবিটিও ফ্লপ হয়।
জুলাইয়ে মুক্তি পায় মাত্র তিনটি সিনেমা। এর মধ্যে সাইফ চন্দন পরিচালিত ‘আব্বাস’ ছবিতে অভিনয় করেন নিরব, সোহানা সাবা, সূচনা আজাদ, জয়রাজ, শিমুল খান, আলেকজান্ডার বো, শিবা শানু, ডন, ইলোরা গওহর, আইরিন সুলতানা। এ সিনেমার মাধ্যমে নিরবকে ভিন্নরূপে দেখেছেন দর্শকরা। এ মাসেই মুক্তি পায় তাপস কুমার দত্ত পরিচালিত ছবি ‘অনুপ্রবেশ’। মুক্তি পায় কবি নির্মলেন্দু গুণের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ছবি ‘কালো মেঘের ভেলা’। এর বাইরে তিনটি কলকাতার আমদানি করা ছবি মুক্তি পায়। ছবি তিনটি হচ্ছে ‘কিডন্যাপ’, ‘শেষ থেকে শুরু’ ও ‘বিবাহ অভিযান’।
আগস্টে মুক্তি পায়, ‘আকাশ মহল’, ‘ভালোবাসার রাজকন্যা’, ‘ভালোবাসার জ্বালা’, ‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না’ মোট চারটি ছবি।
সেপ্টেম্বরে মুক্তি পায় ‘অবতার’, ‘মায়াবতী’, ‘পাগলামী’ ও ‘সাপলুডু’। এর বাইরে মুক্তি পায় আমদানির ছবি ‘প্যানথার’। অক্টোবরে মুক্তি পায় ‘ডনগিরি’ এবং ‘বচ্চন’ নামের কলকাতার একটি আমদানি ছবি মুক্তি পায়।
নভেম্বর মাসে মুক্তি পায় মোট ৬টি ছবি। এর মধ্যে দেশি ছবি ৪টি, আমদানি ছবি ৩টি। দেশি ছবিগুলো হলো,‘পদ্মার প্রেম’, ‘বেগমজান’, ‘ইতি তোমারই ঢাকা’, ‘ন ডরাই’। আমদানি ছবিগুলো হলো ‘কণ্ঠ’, ‘জানবাজ’ ও ‘পাসওয়ার্ড’।
চলতি মাসে মুক্তি পেয়েছে পাঁচটি সিনেমা। ছবিগুলো হলো ‘প্রেম চোর’, ‘গার্মেন্টস শ্রমিক জিন্দাবাদ’, ‘ফরায়েজি আন্দোলন ১৮৪২’ এবং ‘গহীনের গান’, ‘মায়া: দ্য লস্ট মাদার’। মাসুদ পথিক পরিচালিত সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত এই ছবিটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন জ্যোতিকা জ্যোতি।