• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
বাতাস হতে পারে দুর্গম পাহাড়ে সুপেয় পানির উৎস!

ইউরোপ ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশে বাতাস থেকেই সংগ্রহ করা হচ্ছে খাবার পানি

ছবি : ইন্টারনেট

বৈচিত্র

বাতাস হতে পারে দুর্গম পাহাড়ে সুপেয় পানির উৎস!

  • তপু রায়হান
  • প্রকাশিত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

জীবের আদি উপাদান পানি জন্মের পরেও জীবনধারণের জন্য প্রতিনিয়ত প্রয়োজন হয়। প্রকৃতির এই উপাদানটি ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের কারণে কোথাও অযথা অপচয় করা হয়, আবার কোথাও একফোঁটা পানির জন্য শুরু হয় বিদ্রোহ-লড়াই। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, দূষণ, ভূ-রাজনীতি বা ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের কারণে পৃথিবীর অনেক অঞ্চলেই দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সঙ্কট। বিশেষত, চরমভাবাপন্ন বা দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় এ সঙ্কট সবচেয়ে তীব্র। তবে এই সঙ্কট নিরসনে অভিনব এক উপায় পেয়েছেন লোকজ বিজ্ঞানী ও পানি বিশেষজ্ঞরা।

ইউরোপ ও আফ্রিকার কিছু দেশে ইতোমধ্যে এই পদ্ধতির বাস্তবায়নও শুরু হয়েছে। ওইসব এলাকার বাসিন্দারা বাতাস থেকেই সংগ্রহ করছেন প্রতিদিনের খাবার পানি; বাড়তি পানিতে চাহিদা মিটছে গবাদিপশুসহ বন্য পশুপাখিরও। সাধারণত পানির রাসায়নিক উপাদানগুলো মুক্তভাবে প্রকৃতিতে বিরাজমান থাকে। তবে সেই ধারণায় বাতাস থেকে সরাসরি খাবার পানি সংগ্রহ করা হচ্ছে না। লোকজ বিজ্ঞানীরা বাতাস থেকে পানি সংগ্রহের যে উপায়টি উদ্ভাবন করেছেন, তা গবেষণাগারে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের মিশ্রণ ঘটিয়ে পানি তৈরির মতোও কোনো বিষয় নয়। বরং বাতাসের আর্দ্রতা থেকেই তারা পানি সংগ্রহের উপায় উদ্ভাবন করেছেন।

গবেষকদের মতে, মেঘ ছাড়াই বায়ুমণ্ডলের একদম নিচের স্তরের যে আর্দ্রতা থাকে, তাতে প্রায় ১৩ হাজার ঘনকিলোমিটার পানি থাকে। বাতাসের অন্যান্য উপাদানের সঙ্গে মিশে থাকা এই পানি বা জলীয় কণাকে ফাঁদ পেতে আটকে ফেলা হচ্ছে এই পদ্ধতিতে। শীতের শুরু থেকে গ্রীষ্মের মাঝামাঝি পর্যন্ত বৃষ্টি কম হলেও এ সময়ের বাতাস তুলনামূলক বেশি আর্দ্র থাকে। এ সময়ের সকালে দেখা যায়, গাছের পাতায় বা ঘাসের ডগায় বিন্দু বিন্দু শিশির জমা হয়েছে। সারা রাত ধরে পড়া সেই শিশির বিন্দুকে আটকে ফেলা হচ্ছে বিশেষভাবে তৈরি একটি ফাঁদের মাধ্যমে। গবেষকরা এই ফাঁদ বা যন্ত্রের নাম দিয়েছেন ‘ওয়াটার ফরম এয়ার’ বা ডব্লিউএফআর মেশিন।

মেশিনটি তৈরিতেও লোকজ উপাদান ব্যবহার করেছেন বিজ্ঞানীরা। উঁচু গোলাকার বা বেলুনাকার একটি বাঁশের কাঠামোর মধ্যে সূক্ষ্ম জাল জড়িয়ে তৈরি করা হয় এ ধরনের মেশিন বা ফাঁদ। এজন্য দরকার হয় পানি ধরে রাখার জন্য একটি ট্যাংক বা আধার, কিছু পাইপ ও ট্যাপ। এই মেশিন তৈরির জন্য খোলা মাঠ বা পাহাড়ের চূড়ায় প্রথমে বাঁশ দিয়ে উঁচু কাঠামো তৈরি করা হয়। তারপর তার মধ্যে জড়ানো হয় মশারির মতো সূক্ষ্ম জাল। সেই জালে ধরা পড়া শিশির বিন্দু একটু একটু করে জমা হয় কাঠামোটির ভেতরে রাখা একটি আধার বা ট্যাংকে। পরে সেই ট্যাংক থেকে পাইপের মাধ্যমে ব্যবহারের জন্য সংগ্রহ করা হয় পানি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেই পানিতে বাহ্যিকভাবে মেশানো হয় কিছু খনিজ উপাদান, করা হয় পরিশোধনও। কারণ বাতাস থেকে সরাসরি যে পানি সংগ্রহ করা হয় তাতে সব ধরনের খনিজ উপাদান থাকে না; কখনো তা ধুলাবালির কারণে নোংরাও হতে পারে।

বিবিসির এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, রোনাল্ড ওয়াগনার নামে কানাডিয়ান এক পানি বিশেষজ্ঞ ইতোমধ্যে এই আবিষ্কারটি নিয়ে বিশ্বব্যাপী কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনিই প্রথম তার ব্যক্তিগত একটি ওয়েবসাইটে এই প্রযুক্তির বিষয়টি তুলে ধরেন। তার হিসাবমতে, ৬৪টি কোম্পানি ইতোমধ্যে এই প্রযুক্তিটি নিয়ে কাজ শুরু করেছে।

বিবিসি জানায়, ভারতের পানি কোম্পানি ওয়াটার মেকার ইতোমধ্যে এই প্রযুক্তির ক্ষুদ্র সংস্করণ তৈরি করেছে এবং বিপণনও করছে। ইথিওপিয়ায় এ ধরনের একটি মেশিন বসানো হয় ২০১৫ সালে। যন্ত্রটি দিনে প্রায় ২ হাজার লিটার সুপেয় পানি ধরতে পারছে। ইতালির একটি যন্ত্র দেড় হাজার লিটার পানি সংগ্রহ করছে প্রতিদিন।

গবেষকরা বলছেন, যেসব দেশের বাতাসের আর্দ্রতা তুলনামূলক বেশি, সেসব অঞ্চলেই এই পদ্ধতি বেশি কার্যকর। রোনাল্ড ওয়াগনারের হিসাবমতে, ডব্লিউএফআর মেশিনের মাধ্যমে বাংলাদেশেও তুলনামূলক বেশি পানি সংগ্রহ করার সুযোগ রয়েছে। দেশের দুর্গম পাহাড়ি কিছু এলাকার বাসিন্দাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারে এই প্রযুক্তি। কারণ তাদের বসতির পাশেই এমন একটি যন্ত্র বসাতে পারলে কেবল খাবার পানি সংগ্রহ করতে মাইলের পর মাইল পথ পাড়ি দিতে হবে না। এ ছাড়া পানিবাহিত অনেক রোগের হাত থেকেও মুক্তি দিতে পারবে এই প্রযুক্তি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads