• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচন

সংরক্ষিত ছবি

নির্বাচন

কেসিসি নির্বাচন

পাল্টাপাল্টি অভিযোগে বাড়ছে উত্তাপ

  • এ কে হিরু, খুলনা
  • প্রকাশিত ১১ মে ২০১৮

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রধান দুই দলের মধ্যে উত্তাপ-উত্তেজনাও বাড়ছে। একে অপরকে ঘায়েল করতে প্রতিদিনই চলছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের খেলা।  বৃহস্পতিবারও পৃথক সংবাদ সম্মেলনে একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেন বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের নেতারা।

১৪ দলের অন্যতম নেতা ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, নিশ্চিত পরাজয় জেনে বিএনপি এখন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের পথ বেছে নিয়েছে। তবে দল-মত নির্বিশেষে খুলনার উন্নয়নে এবার তালুকদার আবদুল খালেককে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করবে। তিনি বলেন, খুলনায় এসে আমরা দেখতে পেয়েছি একটি উৎসবমুখর পরিবেশ। প্রত্যেক প্রার্থীই সমানভাবে কাজ করছে।

নগরীতে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে সকালে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির প্রধান গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সংবাদ সম্মেলনের পর খুলনা প্রেস ক্লাবে আওয়ামী লীগের ডাকা সংবাদ সম্মেলনে এসব বলেন আম্বিয়া। এতে গয়েশ্বরের বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ক এসএম কামাল বলেন, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও রংপুর সিটির নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। এসব নির্বাচনের আগে বিএনপি নানা প্রশ্ন তুলেছে। কিন্তু নির্বাচনের পর আর কোনো কথা বলেনি।

বিএনপিকে ‘নালিশ পার্টি’ আখ্যা দিয়ে কামাল বলেন, প্রতীক বরাদ্দের আগে বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে গণসংযোগ করেছেন, আমরা কিন্তু নালিশ করিনি। মাদক ব্যবসায়ী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করায় তিনি প্রচারণা থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দেন। পরে দেখেন একাধিক মাদক মামলার আসামি মোতালেব এর আগে তিনবার গ্রেফতার হয়েছে। তখন তিনি বুঝতে পারেন যে, খুলনার জনগণকে ধোঁকা দেওয়া যাবে না। ফের প্রচারণায় নেমে মঞ্জুর বলা ‘কাফনের কাপড় পরে কেন্দ্র পাহারা দেওয়া হবে’ মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এসএম কামাল বলেন, কারা বাধা দিচ্ছে যে কাফনের কাপড় পরতে হবে? বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নিশ্চিত পরাজয় জেনে এখন গয়েশ্বর রায় আবোল-তাবোল বকছেন।

কামাল আরো বলেন, রিটার্নিং অফিসার ছাত্রদলের মহসীন হলের সভাপতি ছিলেন, সহকারী রিটার্নিং অফিসার বিএল কলেজের শিবির ক্যাডার ছিলেন। আমাদের অভিযোগের পরও প্রত্যাহার না করে তাকে সহযোগিতা করতে একজন যুগ্ম সচিবকে দেওয়া হয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলনেতা রফিকুল হক খোকন, জাসদ নেতা খালিদ হোসেন, ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা দেলোয়ার উদ্দিন দিল, এসএম সোলায়মান, গোলাম নবী মাসুম প্রমুখ।

এর আগে কেসিসি নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত দলীয় নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার, পুলিশের হয়রানি, ক্ষমতাসীন দল কর্তৃক হামলা-মামলা, হুমকি-ধমকি এবং ধানের শীষের প্রচারণায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকার অভিযোগ এনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বেলা সাড়ে ১১টায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গয়েশ্বর বলেন, সরকার গাজীপুর সিটি করপোরেশন (জিসিসি) নির্বাচন বন্ধ করে আদালতের মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করেছে। খুলনা সিটিতেও একই ধরনের প্রক্রিয়া করে রেখেছে তারা। তবে, নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ দলীয় কর্মীদের ব্যবহার করে ফলাফল আয়ত্ত করতে পারলে বন্ধের প্রক্রিয়ায় যাবে না। ভোটাররা ভোট দিক আর না দিক, তাদের জিততেই হবে- এ ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে আওয়ামী লীগ খুলনায় নির্বাচন করছে।
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ উল্লেখ করে গয়েশ্বর বলেন, কেসিসি নির্বাচন পরিচালনায় রিটার্নিং অফিসারই হচ্ছেন সর্বোচ্চ কর্মকর্তা। কিন্তু সরকারের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন একজন যুগ্ম সচিবকে খুলনায় পাঠিয়ে তাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি জাতীয় নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মনোনীত কেসিসির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু অভিযোগ করেন, খুলনা মহানগরীতে এ পর্যন্ত বিএনপির ৩৫ এবং জেলায় ৫৫ নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তারা সবাই নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত ছিল। পুলিশ বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করেছে। কর্মীরা নির্বাচনী মাঠে থাকতে পারছে না। অথচ শহরে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের ধরছে না। গ্রেফতারকৃতদের সবাই রাজনৈতিক মামলায় জামিনে রয়েছে এবং বর্তমানে কারো বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই বলে দাবি করেন মঞ্জু। 

যতই গ্রেফতার আর ও বাধা আসুক বিএনপি নির্বাচনের মাঠ ছাড়বে না- উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচনে কোনো কারচুপি হলে জনগণ মেনে নেবে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দাবি করে ভোটারদের সময়মতো কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান মঞ্জু। একই সঙ্গে তিনি সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, ভীতিমুক্ত পরিবেশ, নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগে দলীয়করণ না করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, মশিউর রহমান, মো. শাজাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, হাবিবুর রহমান হাবিব, শ্যামা ওবায়েদসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads