• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
উৎসবের আমেজেও চাপা শঙ্কা

আওয়ামী লীগ মেয়র প্রাথী তালুকদার আবদুল খালেক এবং বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু

সংরক্ষিত ছবি

নির্বাচন

খুলনায় কে হাসবেন শেষ হাসি!

উৎসবের আমেজেও চাপা শঙ্কা

  • এ কে হিরু, খুলনা
  • প্রকাশিত ১৫ মে ২০১৮

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে চলছে ভোটগ্রহণ। উৎসবের আমেজেও রয়েছে চাপা শঙ্কা। তারপরও চারদিকে উৎসবের আমেজ। খুলনা নগর জুড়ে একটিই আলোচনা- কে হবেন ‘নগর পিতা’। শুধু অপেক্ষা ভোট গণনা পর্যন্ত। ইতোমধ্যে কেসিসি নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যার মধ্যেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে ভোটগ্রহণের সব মালামাল।

কেসিসি নির্বাচনে সকাল ৮টা থেকে শুরু হবে ভোটগ্রহণ। চলবে একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত। এবারের নির্বাচনে ৫ জন মেয়র প্রার্থী, সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডে ৩৯ জন এবং ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৪৮ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এদিকে প্রথমবারের মতো দলীয় ভিত্তিতে কেসিসির মেয়র পদে নির্বাচন হওয়ায় প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। আওয়ামী লীগ মেয়র পদে মনোনয়ন দিয়েছে তালুকদার আবদুল খালেককে (নৌকা প্রতীক)। এ পদে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু (ধানের শীষ প্রতীক)। একদিকে খালেকের খুলনার ‘উন্নয়ন’, অন্যদিকে মঞ্জুর ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন’ এবারের নির্বাচনে প্রধান এ দুটি ইস্যুর কোনটির পক্ষে রায় দেবেন ভোটাররা, সেদিকেই তাকিয়ে আছেন খুলনার ১৬ লাখ মানুষ।

এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে অন্য যে ৩ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারা হলেন জাতীয় পার্টি মনোনীত এসএম শফিকুর রহমান মুশফিক (লাঙল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক (হাতপাখা) এবং সিপিবি মনোনীত মো. মিজানুর রহমান বাবু (কাস্তে)।

৩১ মার্চ কেসিসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরপর ২৩ এপ্রিল মেয়র পদসহ সংরক্ষিত ও কাউন্সিলর পদে প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর শুরু হয় প্রচারণা। লম্বা সময় ধরে প্রার্থীদের গণসংযোগ চললেও নগরীতে তেমন কোনো বিশৃঙ্খলা হয়নি। এতে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেওয়ার প্রত্যাশা করছেন ভোটাররা।

অবশ্য ভোটগ্রহণের ক’দিন আগ থেকে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেক ও বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জুর পরস্পরবিরোধী অভিযোগ বেড়েছে। ভোটগ্রহণের এক দিন আগে তারা পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক এদিন বলেন, অবৈধ অস্ত্র ও সন্ত্রাসীদের নিয়ে নির্বাচনের দিন মাঠে থাকার পাঁয়তারা করছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী মঞ্জু। আর বিএনপির মঞ্জু অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগ বহিরাগতদের এনে শহরের হোটেল, রেস্ট হাউজ ও আবাসিক কোয়ার্টারসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাগ ভাগ করে রেখেছে। এসব বহিরাগত বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ঢুকে নিজেরা নিজেরা সংঘর্ষ বাধাবে। এতে ভয়ে ভোটাররা কেন্দ্র ত্যাগ করলে তারা ব্যালট কেটে বাক্সে ঢুকাবে।

প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দুই মেয়র প্রার্থীর এসব পাল্টাপাল্টি অভিযোগের কারণে নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে খানিকটা শঙ্কাও তৈরি হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, কেসিসি নির্বাচনে মোট ভোটার রয়েছেন ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯৮৬ ও নারী ২ লাখ ৪৪ হাজার ১০৭ জন। ভোটকক্ষ ১ হাজার ১৭৮টি। ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষে দায়িত্ব পালন করবেন ৪ হাজার ৯৭২ জন কর্মকর্তা। এর মধ্যে প্রিজাইডিং অফিসার রয়েছেন ২৮৯ জন, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ১ হাজার ৫৬১ জন এবং পোলিং এজেন্ট রয়েছেন ৩ হাজার ১২২ জন। এ নির্বাচনে ২৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে স্থায়ী ভোটকক্ষ রয়েছে ১ হাজার ৫৬১টি। আর অস্থায়ী ভোটকক্ষ রয়েছে ৫৫টি। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) তথ্য মতে, ২৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৩৪টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ)।

নির্বাচন কমিশনের যুুগ্ম সচিব এসএম আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়- সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কেসিসি নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে ২২ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২৪ জন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রতি ওয়ার্ডে পুলিশের মোবাইল ফোর্স এবং প্রতি তিন ওয়ার্ডের জন্য একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে মোবাইল টিম টহল দিচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের ২০ জন পর্যবেক্ষক ও ৯ জন পর্যবেক্ষক সহায়ক নিয়োগ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৬০ জন এক্সিকিউটিভ এবং ১০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে কন্ট্রোল রুম খোলা হচ্ছে, যেখান থেকে সার্বক্ষণিক নির্বাচনী এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ ও নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

র্যাব-৬-এর পরিচালক খোন্দকার রফিকুল ইসলাম ও খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) মুখপাত্র সোনালী সেন সন্ধ্যায় জানান, নির্বাচনে ৩ হাজার ৪৩৭ জন পুলিশ, ১৬ প্লাটুন বিজিবি ও ৩০০ এপিবিএন সদস্য এবং আনসারের ৪ হাজার ৮৪৫ জন দায়িত্ব পালন করছেন।

নির্বাচন কমিশনের যুুগ্ম সচিব এসএম আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে আরো জানানো হয়, ভোট উপলক্ষে খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকায় আজ মঙ্গলবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কেসিসি নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত সব অধস্তন আদালত সাধারণ ছুটির আওতায় থাকবে বলে হাইকোর্ট রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জানানো হয়েছে।

খালেক ও মঞ্জু কে কোথায় ভোট দেবেন : আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তিনি আজ সকাল ৮টায় পাইওনিয়ার গার্লস স্কুলে ভোট দেবেন। বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তিনি সকাল সাড়ে ৮টায় রহিমা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দেবেন।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ নাগরিক ফোরামের প্রার্থী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত নাগরিক কমিটির প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেককে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন।

ফিরে দেখা : ১৮৮৪ সালের ১ জুলাই খুলনা মিউনিসিপ্যালিটির জন্ম হয়। ওই বছরের ১২ ডিসেম্বর পৌরসভা হিসেবে যাত্রা শুরু হলে ১৩ ডিসেম্বর প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করেন রেভারেন্ড গগন চন্দ্র দত্ত। এরপর ১৯৮৪ সালের ডিসেম্বরে মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন এবং সবশেষ ১৯৯০ সালের ৬ আগস্ট সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয় খুলনা।

মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে পৌরসভা থাকাকালীন সময়ে তিনজন চেয়ারম্যান এবং মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন ও সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও মেয়র হিসেবে শেখ সিরাজুল ইসলাম প্রশাসক, কাজী আমিনুল হক আমিন মনোনীত মেয়র এবং শেখ তৈয়েবুর রহমান, তালুকদার আবদুল খালেক ও মনিরুজ্জামান মনি নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া আজমল আহমেদ তপন ও মনিরুজ্জামান মনি মনোনীত এবং খুলনা বিভাগীয় কমিশনার একেএম ফজলুল হক মিয়া ও মো. আনিছুর রহমান বিশ্বাস ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads