• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
বিএনপিকে চ্যালেঞ্জ জামায়াতের

সিটি নির্বাচনকে ঘিরে অবস্থান জানান দিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী

সংরক্ষিত ছবি

নির্বাচন

তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন

বিএনপিকে চ্যালেঞ্জ জামায়াতের

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৭ জুলাই ২০১৮

জমে উঠেছে রাজশাহী, সিলেট ও বরিশালে সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ২০ দলীয় জোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিন সিটি করপোরেশনে জোটের একক প্রার্থী থাকবে। কিন্তু নির্বাচনের আর দুই সপ্তাহ বাকি থাকলেও সিলেটে বিএনপি ও জামায়াতের দুজন প্রার্থী সমানতালে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর জোটের প্রার্থী হিসেবে রাজশাহীতে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও বরিশালে মজিবর রহমান সরোয়ার জামায়াতকে ছাড়াই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। জোটের প্রার্থী হওয়ার পরও কেন জামায়াত নির্বাচনী ময়দানে নামেনি তা নিয়ে রাজশাহী ও বরিশালে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মী এবং সচেতন মহলে নানা গুঞ্জন চলছে। অনেকেই প্রশ্ন করছেন, তাহলে কি সিলেটে একক প্রার্থীর ফয়সালা হওয়ার পর মাঠে নামবে জামায়াত?

এদিকে রাজনীতির মাঠের ঘাত-প্রতিঘাত সয়ে বিগত কয়েক বছর ধরে নিষ্প্রভ থাকা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দলীয় ব্যানারে নিজেদের প্রতীকে নির্বাচন করার আইনি বাধা থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে বিএনপিকে চ্যালেঞ্জ করে দলটি সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনের মাঠে রয়েছে। তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের একক প্রার্থী রাখার সিদ্ধান্তও মানছে না দলটি। তাই অনেকের ধারণা নিজেদের শক্তি যাচাইয়ের জন্য সিটি নির্বাচনে এ অবস্থান নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।

আমাদের সিলেট ব্যুরোপ্রধান আবু তাহের চৌধুরী জানিয়েছেন, সিলেটের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একসময় শক্তিশালী অবস্থানে ছিল জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবির। এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সিলেটে নিজেদের বড় ভোটব্যাংক রয়েছে বলে বর্তমানে প্রচার করছে জামায়াত। তবে সিলেট নগরীতে জামায়াতে ইসলামী আগে কখনোই এককভাবে নির্বাচন করেনি। এবারই প্রথম সিসিক নির্বাচনে জামায়াত প্রার্থী করেছে দলের সিলেট মহানগর আমির অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরকে।

নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করায় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জুবায়ের। ২০ দলীয় জোটের প্রধান শরিক বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর পাশাপাশি প্রার্থী হয়েছেন তিনি। ফলে এবারের সিলেট সিটি নির্বাচন কেবল মেয়র-কাউন্সিলর নির্বাচনের নয়, সিলেটে জামায়াতের শক্তি জানারও নির্বাচন এটি।

সিলেট সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল করিম কিম বলেন, এই সিটি নির্বাচন কেবল মেয়র-কাউন্সিলর নির্বাচনেরই নয়। বরং এটা জামায়াতের শক্তি জানান দেওয়ারও নির্বাচন। তিনি বলেন, জামায়াত বিভিন্ন সময় সিলেটকে তাদের শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে দাবি করেছে। এই নির্বাচন থেকেই বোঝা যাবে নগরীতে জামায়াতের কেমন ভোট রয়েছে।

এদিকে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠে পুনরায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে জামায়াতে ইসলামী। বার বার জোটের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানোর পরও মেয়র পদে সিলেটে প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করায় বিএনপির পাশাপাশি জোটের শরিকরাও এখন জামায়াতের ওপর ক্ষুব্ধ। এমন ‘সঙ্কটকালীন মুহূর্তে’ জামায়াতের এই সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন জোটের শরিক দলের নেতারা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে মেয়র প্রার্থী দেওয়া জামায়াতের একটি কৌশল। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে দরকষাকষির সুযোগ করে নিতেই জামায়াত সিলেটে আলাদা প্রার্থী দিয়েছে। এই নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী ভালো ভোট পেলে বা বিএনপির প্রার্থী পরাজিত হলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে জামায়াত অনেকগুলো আসন দাবি করতে পারে বলে ধারণা তাদের।

এ ব্যাপারে মেয়র প্রার্থী ও মহানগর জামায়াতের আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, গত নির্বাচনের আগে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল আগামী নির্বাচনে জামায়াতকে সিলেট সিটি ছেড়ে দেওয়া হবে। এই শর্তে আমি গত নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিই। কিন্তু বিএনপি এবার কথা রাখেনি। তাই দল আলাদা প্রার্থী হিসেবে আমাকে দাঁড় করিয়েছে। সিলেট নগরীতে জামায়াতের একটি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভোট রয়েছে বলেও দাবি করেন জুবায়ের।

তবে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসেইন বলেন, জামায়াতের যে পরিমাণ ভোট সিলেট নগরীতে আছে সে পরিমাণ ভোট আমাদের বিজয়ে খুব একটা প্রভাব ফেলবে না। জামায়াতের এককভাবে সিটি নির্বাচন করার ব্যাপারটায় জাতীয়ভাবে জোটের ওপর কোনো চাপও পড়বে না।

জামায়াতের প্রার্থী দেওয়া প্রসঙ্গে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদুল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহিন মনে করেন, সিলেটে সিটি নির্বাচনে জামায়াতের এককভাবে প্রার্থী দেওয়াটা ২০ দলীয় জোটের নিজেদের ভেতরের দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ। আবার অনেকে এটাও ধারণা করছেন, সুবিধাভোগীদের কাছ থাকে জামায়াত এমন কোনো আশ্বাস পেয়েছে যাতে তাদের নিজেদের লাভ হতে পারে।

জামায়াতের ভোটার সম্পর্কে শাহিন বলেন, সবাই এখন অপেক্ষায় রয়েছে যে জামায়াত সিটি নির্বাচনে তার প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে, এটা কি তারা কোনো ফাঁকিবাজি করছে না তাদের শক্তির জানান দেওয়ার জন্যই সেটা করেছে। জামায়াত যদি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য ভোট পায় তাহলে বুঝে নিতে হবে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে একটা অনৈক্যের সৃষ্টি হবে। তখন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে দরকষাকষিতে যাওয়ার মতো একটা শক্তি অর্জন করতে পারবে জামায়াত।

এদিকে রাজশাহী ও বরিশাল সিটি নির্বাচন সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে এখনো প্রচারে নামেননি জামায়াতে ইসলামীর নেতারা। রাজশাহীতে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল জামায়াতকে ছাড়াই প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনী মাঠে জামায়াতকে দেখা না যাওয়ায় রাজশাহীর রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মী এবং সচেতন মহলে নানা কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে।

এসব বিষয়ে জানতে রাজশাহীর জামায়াত নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কয়েক জন বলেন, রাজশাহীতে বুলবুলের পক্ষে নামা না নামা কোনো বিষয় না। কারণ এখানে আমাদের কোনো প্রার্থী নেই। আর  কেন্দ্রীয়ভাবে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী আছেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। রাজশাহীতে আমাদের নেতাকর্মীরা বাড়িতেই থাকতে পারছে না। কীভাবে নির্বাচনের মাঠে থাকবে? কাউন্সিলর পদে যারা দাঁড়িয়েছেন তারাও তো প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারছেন না। তাহলে মেয়র পদে কীভাবে মাঠে নামবে? বিএনপি যেভাবে ওয়ার্ক করছে তা দেখে এখনো তো বলা যাবে না উনারা (বিএনপি) নির্বাচনী ওয়ার্ক করছে। অথচ ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে জামায়াতকে যদি রাজশাহীতে ছেড়ে দেওয়া হতো তাহলে কীভাবে নির্বাচনের কাজ করতে হয় তা পরিকল্পনা করে করতে পারতাম। কিন্তু এখন কোনোটাই হচ্ছে না।

সিলেটের ব্যাপারে জামায়াতের এক নেতা বলেন, ওখানকার বিষয় নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। তবে আমরা চাইব একজনকে যেন দেওয়া হয়। একজনকে দিলে ভালো হয়। সারা দেশে ১২টি সিটি করপোরেশনের ১১টিতে আমরা তাদেরকে (বিএনপি) সমর্থন দিয়ে দিলাম। একটাতে তারা দেবে না? বিএনপি যদি মনে করে জামায়াতের এতগুলো ভোট আছে, তাহলে তাদের (বিএনপি) দায়িত্ব একটাতে ছাড় দেওয়া। এখানে অনুরোধ করার কিছু নেই।

একই অবস্থা বরিশালেও। কাউন্সিলর পদে ২০টি ওয়ার্ডে নিজেদের প্রার্থী দেওয়ার শর্তে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারকে সমর্থন দিয়েছে জামায়ত। তবে এখন পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে দেখা যায়নি তাদের। অবশ্য বরিশাল জামায়াতের একটি সূত্র জানিয়েছে, শিগগিরই দলীয় বৈঠক করে দলটির নেতারা বিএনপি প্রার্থী সরোয়ারের সঙ্গে মাঠে নামবেন। একই আভাস পাওয়া গেছে রাজশাহীতেও।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads