• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
মনোনয়ন ঝুঁকিতে ৮৯ মন্ত্রী এমপি

আওয়ামী লীগের দলীয় পতাকা

সংগৃহীত ছবি

নির্বাচন

মনোনয়ন ঝুঁকিতে ৮৯ মন্ত্রী এমপি

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য মিলিয়ে ৮৯ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নাও পেতে পারেন। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বিতর্কিত, তৃণমূল থেকে বিচ্ছিন্ন, দলে কোন্দল সৃষ্টি, নিজস্ব বলয় গড়ে তৃণমূলে নেতাকর্মীদের বিভক্ত করে রাখা, স্বজনপ্রীতি ও অযোগ্যদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া এবং বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের দলে ভেড়ানোর কারণে এসব নেতা এমন ঝুঁকিতে পড়েছেন।

১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ১৫টি জেলার বিভিন্ন আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে ধারাবাহিকভাবে জয়ী হয়েছেন- এমন কিছুসংখ্যক নেতাও এবার মনোনয়ন না পাওয়ার ঝুঁকিতে আছেন। ২০১৭ সালে ৭ মে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় কমিটির সভায় তাদের পরবর্তী নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের তাগিদ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। অনেককে ডেকে এনে সাবধানও করেন তিনি। এরপরও যারা নিজেদের সংশোধন করেননি বলে শীর্ষপর্যায় মনে করছে, তাদের এবার মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানায় দলের নীতিনির্ধারণী সূত্র। এ ছাড়া রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে থাকা জোটের পরিধি বাড়লে মনোনয়ন হারানোর তালিকায় যোগ হতে পারেন আরো কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী।

বিশেষ সংস্থা ও প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন নেতাদের চালানো জরিপে এসব নেতার নিজের সংসদীয় আসনে জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার তথ্য উঠে এসেছে। বেশ কিছু আসনে আরো যোগ্য ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির প্রার্থী থাকায় তাদের এবার সুযোগ দিতে চায় আওয়ামী লীগ। কারণ জয়ের বিকল্প কিছুই ভাবছে না ক্ষমতাসীন দলটি। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্তত চার হাজার জনের তালিকা থেকে পরিচ্ছন্ন নেতাদের বাছাই করছেন।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র জানায়, দলীয় সভাপতি সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে আসন ধরে ধরে নেতাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছেন। প্রতি ছয় মাস পরপর তথ্য হালনাগাদ হচ্ছে। যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সমীক্ষা চালানো হয়েছে। সরকারি সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে সংসদ সদস্য, প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রী মিলিয়ে অন্তত ৮৯ জনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষসহ দলীয় নেতাকর্মীদের বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য উঠে এসেছে।

এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়ার ঝুঁকির তালিকায় আছেন ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ (পাবনা-৮), ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান (ময়মনসিংহ-৪), জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদিক (যশোর-৬), যশোর-২ আসনের এমপি মনিরুল ইসলাম, টাঙ্গাইল-৩-এর আমানুর রহমান খান রানা, কক্সবাজার-৪ আসনের আবদুর রহমান বদি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য ফায়জুর রহমান, নরসিংদী-৫ আসনের রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, খুলনা-৬ আসনের শেখ নুরুল হক, বরিশাল-২ আসনের তালুকদার ইউনুস, বরিশাল-৪ আসনের পঙ্কজ দেবনাথ, কুষ্টিয়া-৩ আসনের মাহবুব-উল আলম হানিফ, চট্টগ্রাম-১৪ আসনের নজরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৫ আসনের আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী, চট্টগ্রাম-১৬-এর মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, বাগেরহাট-৪ আসনের মোজাম্মেল হোসেন, নাটোর-৪ আসনের আবদুল কুদ্দুস, শরীয়তপুর-২-এর কর্নেল (অব.) শওকত আলী, পিরোজপুর-১-এর একেএমএ আউয়াল, মেহেরপুর-১-এর ফরহাদ হোসেন, মাগুরা-১ আসনের এটিএম আবদুল ওহাব, দিনাজপুর-১ আসনের মনোরঞ্জন শীল গোপাল, সিরাজগঞ্জ-৩-এর গাজী ম ম আমজাদ হোসেন মিলন, জামালপুর-২ আসনের ফরিদুল হক খান দুলাল, নেত্রকোনা-৩ আসনের ইফকিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু, নেত্রকোনা-৪ আসনের রেবেকা মোমিন প্রমুখ।

কারো কারো বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ না থাকলেও তৃণমূল থেকে তারা বিচ্ছিন্ন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন যশোর, চাঁদপুর, পাবনা, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, খুলনা, ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের একাধিক আসনসহ আরো কয়েকটি জেলার সংসদ সদস্য।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয়রাই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে এগিয়ে থাকবেন। এ ক্ষেত্রে নবীন ও প্রবীণ কোনো বিষয় নয়। মনোনয়ন পাচ্ছেন- এমন নিশ্চয়তা এখনো কাউকে দেওয়া হয়নি।’

সূূত্র জানায়, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে আওয়ামী লীগের সর্্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে জানানো হয়, দলে কোন্দল সৃষ্টিকারীদের এবার মনোনয়ন দেওয়া হবে না। বৈঠকে উপস্থাপিত কয়েকটি প্রতিবেদনে বিভিন্ন সংসদীয় আসনে দলীয় কোন্দলের জন্য প্রভাবশালী এমপি, মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী মিলিয়ে অন্তত ১০ জনকে দায়ী করা হয়।

এসব আসনে দল থেকে গড়ে ৮-১০ করে এবার মনোনয়ন প্রার্থী। বৈঠকে শেখ হাসিনা কোন্দল নিরসনে সাংগঠনিক কর্মসূচি নেওয়ার পাশাপাশি অভিযুক্তদের মনোনয়ন না দেওয়ার কথা স্পষ্ট করেন।

সূত্র জানায়, মনোনয়ন কারা পাচ্ছেন না, তা তফসিল ঘোষণার পরই স্পষ্ট হবে। তার আগে বিষয়টি প্রকাশ করা হবে না। দলের শীর্ষ নেতারা মনোনয়নের বিষয়ে বলছেন, বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া আর কেউ জানেন না। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে শামীম ওসমানের নাম চূড়ান্ত হয়েছে বলে নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে গত মঙ্গলবার ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এ ধরনের তথ্য শেখ হাসিনা ছাড়া আর কেউ জানেন না।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads