• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
নির্বাচনী প্রচারণায় জামায়াত

লোগো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম

নির্বাচন

নির্বাচনী প্রচারণায় জামায়াত

স্বতন্ত্র প্রার্থী ধরেই ৬০ আসনের প্রস্তুতি

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ২২ অক্টোবর ২০১৮

সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরই নির্বাচন। নভেম্বরে তফসিল। রাজনৈতিক দলগুলো প্রচারণাসহ নানামুখী প্রস্তুতি নিচ্ছে। মিত্রসহ আওয়ামী লীগের প্রচারণা চলছে উন্নয়নের মোড়কে। বিপরীতে আন্দোলনের মোড়কে প্রচারে নেমেছে বিএনপি ও তাদের সমমনারা। বসে নেই ২০-দলীয় জোটের শরিক জামায়াতও। গত নির্বাচন বর্জন করলেও আগামী নির্বাচনে যেকোনো উপায়ে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত। আদালতের আদেশে নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক হারিয়েছে দলটি। তবে কি ভোটের মাঠে লড়তে চায় স্বতন্ত্র হয়েই? তাদের আশা আদালতের মাধ্যমে হারানো নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পাবে। দলটির একাধিক সূত্রের তথ্য মতে দশম সংসদ নির্বাচনে ৪৩ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি ছিল জামায়াতের। এবার অন্তত ৬০টি আসনে প্রার্থী দেবে। অভ্যন্তরীণ জরিপসহ প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করেছেন নীতিনির্ধারকরা। তবে ২০-দলীয় জোটের হিসাব-নিকাশের ওপর নির্ভর করছে সংখ্যা। কেন্দ্রের নির্দেশেই তৃণমূলে ভোটের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে কয়েক শীর্ষ নেতার ফাঁসি এবং কারাবন্দি হওয়ায় হেভিওয়েট প্রার্থী নেই বললেই চলে। বিভিন্ন দিবসে পোস্টার-ব্যানার সাটাচ্ছে, মোবাইল ফোনে ভয়েস রেকর্ড পাঠিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন ভোটারদের। গত আগস্টে ঈদুল আজহায় জামায়াত নেতারা নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ করেন। যেখানে নেতারা যেতে পারেননি সেখানে দলের তরফ থেকে ঈদসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে ৩৯টি আসনে ভোটে লড়েছিল জামায়াত। একটিতে শেষ সময়ে বিএনপিকে সমর্থন দেয়। ৩৩টিতে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন না। জামায়াতের প্রার্থীরা ছিলেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থী। বাকি পাঁচটিতে বিএনপি ও জামায়াত দুই দলেরই প্রার্থী ছিলেন। ৩৯ আসনের মাত্র দুটি আসনে জয়ী হয় জামায়াত। ২০০১ সালের নির্বাচনে ১৭টি, ৯৬-এ তিনটি, ৯১-এ ১৮টি এবং ৮৬-তে ১০টি আসন পেয়েছিল জামায়াত। ২০০১ সালে জয়ী হওয়া ১৭টি আসনের ১৬টিই হারায় ২০০৮ সালে। ২০০১ সালে ৩১টি আসনে লড়েছিল জামায়াত। ৩০টিতে জোটের সমর্থন পেয়েছিল।

জামায়াতের একজন নায়েবে আমির বাংলাদেশের খবরকে জানান, ৬০ আসনে লড়ার মতো সক্ষমতা রয়েছে তাদের। কোন কোন আসনে জামায়াত লড়বে তা অনেক আগে থেকেই চূড়ান্ত। আসন নিয়ে আলোচনা হবে নির্বাচনের আগে। কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে, কেমন নির্বাচন হবে, তার ওপর নির্ভর করবে অনেক কিছু।

যেসব আসনে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত এবং প্রার্থী ঠিক করেছে সেগুলো হলো- এমএ হাকিম ঠাকুরগাঁও-২, মোহাম্মদ হানিফ দিনাজপুর-১, আনোয়ারুল ইসলাম দিনাজপুর-৬, মনিরুজ্জামান মন্টু নীলফামারী-২, আজিজুল ইসলাম নীলফামারী-৩, হাবিবুর রহমান লালমনিরহাট-১, গোলাম রব্বানী রংপুর-৫, নুরুল আলম মুকুল কুড়িগ্রাম-৪, নজরুল ইসলাম গাইবান্ধা-৩, আবদুর রহিম সরকার গাইবান্ধা-৪, নুরুল ইসলাম বুলবুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২, মো. লতিফুর রহমান চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩, মজিবর রহমান রাজশাহী-৩, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান সিরাজগঞ্জ-৪, আলী আলম সিরাজগঞ্জ-৫, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান চুয়াডাঙ্গা-২, মতিয়ার রহমান ঝিনাইদহ-৩, আজিজুর রহমান যশোর-১, আবু সাইদ মুহাম্মদ সাদাত হোসাইন যশোর-২, অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ বাগেরহাট-৩, শহীদুল ইসলাম বাগেরহাট-৪, মিয়া গোলাম পারওয়ার খুলনা-৫, শাহ মুহাম্মদ রহুল কুদ্দুছ খুলনা-৬, ইজ্জতউল্লাহ সাতক্ষীরা-১, মুফতি রবিউল বাশার সাতক্ষীরা-৩, গাজী নজরুল ইসলাম সাতক্ষীরা-৪, শফিকুল ইসলাম মাসুদ পটুয়াখালী-২, অধ্যাপক জসিমউদ্দিন ময়মনসিংহ-৬, ফরীদউদ্দিন সিলেট-৫, মাওলানা হাবিবুর রহমান সিলেট-৬, ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের কুমিল্লা-১১, শামসুল ইসলাম চট্টগ্রাম-১৪, হামিদুর রহমান আযাদ কক্সবাজার-২, শাহজালাল চৌধুরী কক্সবাজার-৪। এ আসনগুলোর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২, সিরাজগঞ্জ-৫, ময়মনসিংহ-৬, সাতক্ষীরা-১, পটুয়াখালী-২, কক্সবাজার-৪ এ ছয়টি আসনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী ছিলেন না। ময়মনসিংহ-৬ আসনে ২০০১ সালে জামায়াত প্রার্থী জোটের মনোনয়ন পেয়েও পরাজিত হন। পঞ্চগড়-২, রাজশাহী-২, রাজশাহী-৫, বগুড়া-২, চট্টগ্রাম-৭ আসনেও ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত। বিগত উপজেলা নির্বাচনে এসব এলাকায় বিজয়ী হয়েছেন জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা।

২০০৮ সালে জামায়াত যে আসনগুলোতে লড়েছিল এর মধ্যে পাবনা-১, পাবনা-৫, রংপুর-৩, গাইবান্ধা-১, সাতক্ষীরা-২, শেরপুর-১, পিরোজপুর-১ আসনে প্রার্থী বদল হবে। পাবনা-১-এর প্রার্থী ছিলেন মতিউর রহমান নিজামী। মানবতাবিরোধী অপরাধে তার ফাঁসি হয়েছে। শেরপুর-১ আসনের প্রার্থী মুহাম্মদ কামরুজ্জামান, ফরিদপুর-৩-এর প্রার্থী আলী আহসান মো. মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করছেন পিরোজপুর-১-এর প্রার্থী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। পাবনা-৫-এর প্রার্থী আবদুস সুবহান ও রংপুর-৩-এর প্রার্থী এটিএম আজহারুল ইসলামের ফাঁসির রায় রয়েছে। মুজাহিদের ফরিদপুর-৩ বাদে বাকি দণ্ডিত নেতাদের আসনে নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত।

গাইবান্ধা-১-এর সাবেক এমপি আবদুল আজিজ ও সাতক্ষীরা-২ আসনের সাবেক এমপি আবদুল খালেক মণ্ডলের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে মামলা চলছে। তাই তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, তা ধরেই নিয়েছে জামায়াত। এ দুই আসনে নতুন প্রার্থী দেওয়া হবে। প্রার্থী বদল হতে পারে মেহেরপুর-১ আসনেও। ২০০৮ সালে এ আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন ছমিরউদ্দিন। ২০১৩ সালে তার ছেলেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়, পরে লাশ মেলে। এরপর থেকে তিনি আর রাজনীতিতে সক্রিয় নন বলে জানা গেছে।

তবে নিবন্ধন হারানো জামায়াতকে আগামী নির্বাচনে বিএনপি কয়টি আসনে ছাড় দেবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। এ বিষয়ে কোনো আলোচনাও হয়নি। তবে দলটির নেতারা মনে করেন, ২০১৩ ও ২০১৪ সালের আন্দোলনে জামায়াতের ‘অবদান’ ছিল সবচেয়ে বেশি। সরকারের দমন-পীড়নও বেশি সইতে হয়েছে তাদের। তাই তাদের আগের তুলনায় বেশি আসন পাওয়া উচিত। তবে অনেক কিছুই নির্ভর করছে নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার পর। ২০১৩ সালের ৩১ আগস্ট হাইকোর্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়। তিনজন বিচারকের দুজন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের পক্ষে মত দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে জামায়াত। তবে সাড়ে তিন বছরেও আদালতে যায়নি তারা।

জামায়াত নেতাদের অভিমত, বর্তমান পরিস্থিতিতে আদালতের রায় তাদের পক্ষে আসবে না। একাদশ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে। জামায়াত নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একজন আইনজীবী জানান, তখনই এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সুপ্রিম কোর্টের ফুল বেঞ্চের সিদ্ধান্তে নির্বাচন কমিশন প্রতীকের তালিকা থেকে ‘দাঁড়িপাল্লা’ বাদ দিয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দল এ প্রতীক ব্যবহার করতে পারবে না। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও আদালতে যায়নি জামায়াত। তফসিল ঘোষণার পর এ বিষয়েও আইনি লড়াইয়ে নামবে জামায়াত।

নিবন্ধন বাতিলের পর জামায়াতের সামনে দুটি বিকল্প ছিল- হয় অন্য দলের প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া। দ্বিতীয় বিকল্পই বেছে নিয়েছে দলটি। বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিলেও দলটির প্রতীক ব্যবহার করেনি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হন জামায়াত নেতারা। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও তাই। আগামী সাধারণ নির্বাচনেও একই ধারা বজায় থাকবে বলে দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads