• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
পাবনায় প্রার্থী নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব

মানচিত্রে পাবনা

সংগৃহীত ছবি

নির্বাচন

পাবনায় প্রার্থী নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব

  • কানু সান্যাল, পাবনা  
  • প্রকাশিত ১৫ নভেম্বর ২০১৮

জোট আর ভোটের জটিল সমীকরণে পাবনায় মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে ২০ দলীয় জোটে। সম্প্রতি, পাবনার ৩টি আসনে চুড়ান্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে জামায়াত। শুধু তাই নয়, বুধবার  জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী অধ্যক্ষ ইকবাল হোসাইন পাবনা-৫ সদর আসন থেকে স্বতন্ত্র  প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্রও তুলেছেন। তবে, আসন ভাগাভাগির প্রশ্নে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে জামায়াতকে ছাড় না দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। নির্বাচনে প্রার্থীতায় ২০ দলীয় জোটের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করলেও নিবন্ধন না থাকায় পাবনায় স্বতন্ত্র নির্বাচনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত। যুদ্ধাপরাধের রায় পরবর্তী বাস্তবতায় ধানের শীষের প্রার্থীর প্রশ্নে বিএনপি নেতারা ছাড় না দিলে, জোটের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা জানান, স্বাধীনতার পর ১৯৮০ দশকে ধর্মীয় ও সামাজিক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে পাবনায় প্রকাশ্য রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করে জামায়াত। দলটির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার বাড়ী এ জেলায়। সে প্রভাব কাজে লাগিয়ে নিজস্ব কৌশলে শক্ত অবস্থানও তৈরী করেন দলটির নেতারা।

১৯৯১ সালে এককভাবে এবং ২০০১ এ চারদলীয় জোটের ব্যানারে পাবনা ১ (সাঁথিয়া-বেড়া)  ও পাবনা ৫ (সদর) আসনে জয় পান জামায়াতের প্রার্থীরা। এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনে এ দুটি আসন ছাড়াও পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘড়িয়া) আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে জামায়াত।

১৯৯১ ও ২০০১ এর নির্বাচনে পাবনা-১ (সাঁথিয়া-বেড়া) আসনে নির্বাচিত হন যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী। একাদশ সংসদ নির্বাচনে  বেড়া উপজেলা আমির ডা. আব্দুল বাসেদকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াত। পাবনা-৫ সদর আসনে একাধিকবার নির্বাচিত হয়েছেন যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত জামায়াতের আরেক প্রভাবশালী নেতা মাওলানা আব্দুস সুবহান। শক্ত ঘাঁটি দাবী করে আসনটিতে এবার জেলা সেক্রেটারী অধ্যক্ষ ইকবাল হোসাইনকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াত। বুধবার  জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী অধ্যক্ষ ইকবাল হোসাইন পাবনা-৫ সদর আসন থেকে স্বতন্ত্র  প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্রও তুলেছেন।

বিএনপির কোন্দলে পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘড়িয়া) আসন একাধিকবার হাতছাড়া হয়েছে দাবী করে আসনটিতে জামায়াতের জেলা আমীর আবু তালেব ম্ললের প্রার্থীতা ঘোষণা করেছে ২০ দলের অন্যতম প্রধান শরীক দলটি।

এ বিষয়ে পাবনা জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা জহুরুল ইসলাম খান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে আমরা পাবনার ১, ৫,ও ৪ আসনে আমাদের প্রার্থী চুড়ান্ত করেছি। নিবন্ধন বাতিলের প্রেক্ষিতে আমরা কিভাবে নির্বাচনে অংশ নেব সে কৌশল এখনো নির্ধারিত না হলেও, আমাদের প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠে কাজ করছেন’।

মাওলানা জহুরুল বলেন, ‘অতীত নির্বাচনী পরিসখ্যান প্রমান দেয় পাবনা ১ ও ৫ আসন জামায়াতের শক্ত ঘাঁটি। আমাদের সাবেক আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী পাবনা-১ আসনে এবং মাওলানা আব্দুস সুবহান পাবনা-৫ সদর আসন থেকে বার বার নির্বাচিত হয়েছেন। চারদলীয় জোটগতভাবেও এ দুটি আসন আমাদের দেয়া হয়েছিল। নির্বাচনে জয় পেতে এ আসনগুলিতে জামায়াতের প্রার্থীর বিকল্প নেই’। পাবনা-৪ ( ঈশ্বরদী- আটঘড়িয়া) আসনে এখনো বিএনপির প্রকাশ্য কোন্দল রয়েছে। সে বাস্তবতায় এ আসনে কেবল জামায়াতের প্রার্থীর পক্ষেই আসনটি দখলে নেওয়া সম্ভব।

তবে, পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জামায়াতকে আসন ছাড়তে রাজি নন স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাহবুব মোর্শেদ জ্যোতি বলেন, ‘মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর জন্য জোটগত সিদ্ধান্তে নেত্রীর নির্দেশে আমরা আসন জামায়াতকে ছেড়ে দিয়েছিলাম। তবে, তার অনুপস্থিতিতে এখানে জামায়াতের সংগঠন দূর্বল হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে, আসনটি আবারও জামায়াতকে ছেড়ে দিলে বিএনপির নেতা কর্মীরা হতাশ হবে। আমরা মনে করি বিএনপিতেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার জন্য একাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। আমরা এবার বিএনপি থেকেই প্রার্থী মনোনয়নের দাবী জানাচ্ছি’। 

এদিকে, আসন ভাগাভাগির প্রশ্নে আগামী নির্বাচনে পাবনা সদর-৫ এবং পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী- আটঘড়িয়া) আসনে জামায়াতকে ছাড় দেয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে জেলা বিএনপি। সদর আসনে তারা একক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন দলীয় চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের নাম। পাবনা-৪ আসনেও একাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছে বলে দাবী করেছেন বিএনপির নেতারা।

পাবনা জেলা বিএনপির সহসভাপতি এডভোকেট মাসুদ খন্দকার বলেন, ‘পাবনা বিএনপির দূর্গ। জেলার সকল আসনেই বিএনপির শক্ত অবস্থান ও যোগ্য প্রার্থী রয়েছে। জনসমর্থন ও সাংগঠনিক শক্তিতে বিএনপি এখন অনেক বেশী শক্তিশালী। অতীতে এককভাবে নির্বাচনেও প্রমাণ হয়েছে পাবনায় অন্যান্য যেকোনো দলের চেয়ে বিএনপির ভোট বেশী। সদর আসনে আমাদের একক প্রার্থী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, অন্যান্য আসনেও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি প্রার্থীদের বিজয় সুনিশ্চিত। আমরা এবার পাঁচটি আসনেই বিএনপির প্রার্থী চাই’।

আসন ভাগাভাগির প্রশ্নে পাবনায় বিশ দলের এই বড় দুই শরিকের অনঢ় অবস্থান আর ভোটের হিসেব নিকেষের শেষ পরিণতি জানতে  আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে সাধারন ভোটাদের।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads