• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আবহ

জাতীয় সংসদ নির্বাচন

সংরক্ষিত ছবি

নির্বাচন

ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আবহ

সন্ত্রাসের সুযোগ কম থাকবে, লড়াই হবে ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির থাকছে চমক

  • অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য
  • প্রকাশিত ২০ নভেম্বর ২০১৮

প্রার্থী বাছাই না হলেও এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে সুস্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়াই হবে ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির। লড়াই হবে জোটের সঙ্গে জোটের। কাজের লড়াই। নীতির লড়াই। উন্নয়নের সঙ্গে সুশাসনের লড়াই। আসন্ন ভোটকে ঘিরে ফিরছে নির্বাচনী লড়াইয়ের প্রকৃত আমেজ। উৎসবমুখর আমেজে জমে উঠেছে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য মনোনয়ন প্রক্রিয়া। ভোট উৎসবে সরব হয়েছেন এবার সব ধরনের নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। এতে চায়ের কাপে উঠেছে নির্বাচনী ঝড়। চায়ের দোকানে জমে উঠেছে সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্ক। মনোনয়ন নিয়ে দুই শিবিরের সম্ভাব্য প্রার্থীদের অবস্থান এখন ঢাকায়। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে এবারকার জাতীয় নির্বাচনে মিলছে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোটের আবহ।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের আবহ মিললেও শেষ পর্যন্ত মাঠ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে কিনা, এ নিয়ে দুই দলেই রয়েছে সংশয়। যত সংশয়ই থাকুক না কেন, আসন্ন ভোটে দুই দলের প্রার্থিতায় ব্যাপক চমক আসছে। এতে ভোটের প্রকৃত আনন্দ পাওয়া যাবে। উল্লেখযোগ্য সব দলের প্রার্থীদের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ সাধারণ ভোটাররাও। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন মতে, নির্বাচনে বড় দুই দলের প্রস্তুতি ও প্রার্থী বাছাই দেখে প্রতীয়মান হচ্ছে ভোট হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। এ ধারণা ধরেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি এখন থেকেই মাঠ নিজেদের দখলে রাখতে চাইছে। নির্বাচনে জয়লাভ করতে আওয়ামী লীগ গঠন করেছে মহাজোট। আর গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি গঠন করেছে ঐক্যফ্রন্ট।

নির্বাচন ঘিরে সব দল ও রাজনৈতিক জোট পৃথক দুই মেরুতে অবস্থান নিয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ঘিরে ১৪ দলীয় জোট, জাতীয় পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, যুক্তফ্রন্ট মিলে মহাজোটের আওতায় ভোটে অংশ নেবে। অন্যদিকে, একসঙ্গে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। জোটগতভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তারা সবাই ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবে। প্রায় সব দলই দুই সারিতে অবস্থান নেওয়ায় আসন্ন নির্বাচন ‘নৌকা ও ‘ধানের শীষ’র মধ্যে ভোটযুদ্ধে পরিণত হচ্ছে।

নির্বাচন কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হওয়ার কথা গতকাল সোমবার সাপ্তাহিক মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় উঠে আসে। এ নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রী। বৈঠক শেষে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মন্ত্রী বলেন, মন্ত্রিসভায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে আনীত ‘মাদার অব ইউম্যানিটি সমাজকল্যাণ পদক নীতিমালা-২০১৮’-এর খসড়া চূড়ান্ত করার সময় বেশ কয়েক মন্ত্রী প্রস্তাব করেন, পদকটির নাম হোক ‘মাদার অব ইউম্যানিটি শেখ হাসিনা সমাজকল্যাণ পদক’। প্রধানমন্ত্রী নিজের নামে পদকটির নামকরণে ‘না’ করেন। বৈঠকে তিনি বলেন, এই দেশ স্বাধীন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। স্বাধীনতার তিন বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধু ও তার পুরো পরিবারকে মেরে ফেলা হয়েছে। এখন আমার নামে সমাজকল্যাণ পদক হবে। ভবিষ্যতে অন্য কেউ ক্ষমতায় এসে পদকটিই বাদ দিয়ে দিতে পারে। এর চেয়ে শুধু ‘মাদার অব ইউম্যানিটি’ নামেই পদকটি থাকুক। পরে শেখ হাসিনার নাম ছাড়াই পদকটির নামকরণ হয়। এ সময় আসন্ন নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যারা আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়েছে, বোমা মেরে মানুষ মেরেছে, বহু অবকাঠামো ধ্বংস করেছে, আন্দোলনের নামে দেশকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে তাদের সঙ্গে গিয়ে একশ্রেণির বুদ্ধিজীবী জোট গঠন করেছে। এখন এই জোটকে যদি জনগণ ভোট দেয় তাহলে তারা ক্ষমতায় আসবে। এখানে আমার কী বলার আছে। তবে নির্বাচন যে সহজ হবে না সেটিও তিনি মন্ত্রীদের উদ্দেশে বলে রাখেন।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে, তা খোদ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেই স্পষ্ট হয়েছে। অন্যান্য মন্ত্রীর কথায়ও আসন্ন ভোট প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হওয়ার আভাস পাওয়া গেছে। এবারের নির্বাচনে ভোট কারচুপি করতেও কষ্ট হবে বলে ধারণা রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। এ কারণেই জোটগতভাবে এগোচ্ছে দেশের বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ভোটযুদ্ধে নামার আগে এখন চলছে নিজ নিজ জোট-মহাজোটের শরিকদের মধ্যে আসন বণ্টনের সমীকরণ। এক্ষেত্রে উভয় দলের কৌশল প্রায় অভিন্ন। দল দুটির নীতিনির্ধারকদের মতে, প্রত্যেকটা আসনে বিজয়ী হওয়ার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে সবাই ঐক্যবদ্ধ। কারো দ্বিমত নেই। এক্ষেত্রে শরিকদের সন্তুষ্ট রাখতে সক্ষমতা অনুযায়ী আসন ছাড় দেওয়া হবে।

এ বিষয়টি টেনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মন্ত্রী বলেন, ভোটকে কেন্দ্র করে এখন যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা আগামী ৯ ডিসেম্বর পাল্টে যাবে। তখন নতুন আরেক আবহ তৈরি হবে। ১০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে নির্বচনী প্রচারণা। ঐক্যফ্রন্ট প্রচারণায় এগিয়ে থাকার জন্য মাটির নিচে থেকে হলেও মানুষ নিয়ে আসার চেষ্টা করবে। মহাজোটও প্রচারণায় মানুষের সংখ্যা বাড়াবে। এ ছাড়া আরো কয়েকটি কারণে এবারের নির্বাচন সবচেয়ে কঠিন হবে বলে তিনি মনে করেন। সারা দেশে এক দিনে একযোগে ভোট হওয়ার কারণে প্রকাশ্যে করারও সুযোগ কম থাকবে বলে মনে করেন ওই মন্ত্রী। 

তবে বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কয়েক বছর ধরেই মাঠ পুরোপুরি আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দলটির সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ডে মনে হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠ ক্ষমতাসীন দলের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। অপরদিকে নির্বাচনের আগে মাঠ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে পারবে কি না, তা নিয়ে বিএনপিতেও নানা সংশয় আছে। এক্ষেত্রে ভোটের আগে নির্বাচনী মাঠ যাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে, ফল তাদের পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। কারণ মাঠের পরিস্থিতি ভোটে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। অতীতে এমনটাই ঘটেছে।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও টিআইবির ট্রাস্টি সুলতানা কামাল বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সবাই অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে- কথাটি বলা যায়। কিন্তু নির্বাচনটি সুষ্ঠু হবে কি না তা বলার সময় এখনো আসেনি। কারণ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশনের যা যা ভূমিকা নেওয়া দরকার তা এখনো নেওয়া হয়নি। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা বলতে পারি, নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে হলে কমিশনকে আরো শক্তিশালী ভূমিকা নিতে হবে।

নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৮ নভেম্বর। এ লক্ষ্যে জোটগত সিদ্ধান্ত, প্রার্থী চূড়ান্তসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো। এখন দিন যত এগুবে ভোটযুদ্ধের কৌশল তত পরিষ্কার হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads