নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিরুদ্ধে সরকারপ্রীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বিএনপি এবং তাদের জোট সতীর্থরা নির্বাচনী এ সংস্থাকে সরকারের আজ্ঞাবহ বলে অভিযোগ করে আসছে। সেই ইসির তৎপরতা কিছুটা দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। তাদের করা অভিযোগের প্রতিকার খুব একটা না মিললেও, বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের সুরাহা হচ্ছে অনেকটা ইতিবাচক পন্থায়। বিশেষ করে স্কাইপিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের দলীয় মনোনয়ন প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণে বাধা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত, ব্যানার-পোস্টারে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা না দেওয়া, নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সংঘর্ষের ঘটনায় কাউকে অহেতুক হয়রানি না করতে আইজিপিকে নির্দেশনা সুষ্ঠু ভোট আয়োজনেরই ইঙ্গিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারেকের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নয় : ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে লন্ডন থেকে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করায় বিএনপির লন্ডন প্রবাসী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেবে না ইসি। গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত নির্বাচন কমিশন বৈঠকে তারেকের এই কার্যক্রম নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে না বলেই মত দেন কমিশনাররা। বৈঠকের পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, তারেক রহমানের অনলাইন কার্যক্রম আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে না। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কিছু করণীয় নেই।

গত রোববার থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন তারেক রহমান। দণ্ডিত ব্যক্তির এ ধরনের কার্যক্রমকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন দাবি করে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল ওই দিনই বিকালে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ করেন। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমসহ একাধিক নেতা তারেক রহমানের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান ইসির কাছে। এ বিষয়ে বৈঠকের আগে কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তারেক রহমানের বিষয়ে কোনো অভিযোগ পেলে কমিশন বৈঠক করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইসি সচিব বলেন, আওয়ামী লীগের অভিযোগের বিষয়ে সোমবার আলোচনা করা হয়েছে। তারেক রহমান বিদেশ থেকে অনলাইনে কথা বলেছেন। তার এটি আচরণবিধির মধ্যে পড়ে না। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনেরও কিছুই করার নেই।

নয়াপল্টনে সংঘর্ষের ঘটনায় অহেতুক হয়রানি নয়

মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের সময় নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের বিষয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন বলেন, গত ১৪ নভেম্বর অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার অডিও, ভিডিও ও স্টিল ছবিসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন আইজিপির কাছে চাওয়া হয়েছিল। তিনি প্রতিবেদন দিয়েছেন। এতে দেখা যায়, পল্টনের ঘটনায় ফৌজদারি অপরাধ হয়েছে। এ ঘটনার তদন্ত চলতে আপত্তি নেই। এতে বাধা দেবে না ইসি। তবে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় এমন ব্যক্তিদের অহেতুক হয়রানি না করতে আইজিপিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

পোস্টারে খালেদা-তারেকের ছবিতে বাধা নেই

দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সাজা হয়েছে। তাদের ছবি দলীয় প্রধান হিসেবে প্রার্থীরা পোস্টারে ব্যবহার করতে পারবেন কি না জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, ব্যবহার করতে চাইলে পারবেন। এটা রাজনৈতিক দলের দলীয় সিদ্ধান্ত। আইনে কোনো সমস্যা নেই। এ সময় বিএনপির দেওয়া মামলা- গ্রেফতারের তালিকার বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপির তালিকায় ৮ নভেম্বরের আগের কিছু ঘটনা রয়েছে। সেগুলোর বিষয়ে ইসির কিছু করার  নেই। তবে তফসিলের পরেরগুলো সম্পর্কে বিএনপি বিস্তারিত বর্ণনা না করায় এ বিষয়ে  কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পরে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে।

৯০ শতাংশ প্রচারণা সামগ্রী সরেছে

আগাম নির্বাচনী প্রচারণা অপসারণের বিষয় নিয়ে ইসি সচিব বলেন, সারা দেশ থেকে এরই মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ আগাম নির্বাচনী প্রচারণা সরানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি। যারা এখনো সরাননি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সেগুলো সরাতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী আচরণবিধি মানা হচ্ছে কি না তা দেখার জন্য এরই মধ্যে প্রতি উপজেলায় একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।