• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
দেশিদের চাপে রেখে বিদেশিদের খোঁজে ইসি

লোগো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

নির্বাচন

দেশিদের চাপে রেখে বিদেশিদের খোঁজে ইসি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২১ নভেম্বর ২০১৮

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য প্রমাণে তৎপর হয়ে উঠেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে দেশের তুলনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি আদায় করাটাকেই গুরুত্ব দিচ্ছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। যে কারণে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে দেশি পর্যবেক্ষকদের চাপে রাখা হলেও বিদেশিদের কাছে রীতিমতো ধরনা দিচ্ছে কমিশন। দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ ও সর্বজনগ্রাহ্য নির্বাচন আয়োজনের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া ইসি যে করেই হোক বহির্বিশ্বে সরকার ও নিজেদের ইমেজ প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু সেই উদ্দীপনায় ভাটা পড়ে যায় নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পর্যবেক্ষণে না আসার ঘোষণা দেওয়ায়। এ নিয়ে অনেকটাই বিপাকে পড়ে কমিশন। এরই মধ্যে সরকারের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ নিয়ে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকও করেছে ইসি। শিগগিরই করণীয় নির্ধারণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পাসপোর্ট অধিদফতর ও ইমিগ্রেশন সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আবারো বৈঠকে বসবে কমিশন। কী প্রক্রিয়ায় বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নিয়ে আসা যায়, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ওই বৈঠকে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নই সবচেয়ে বেশি পর্যবেক্ষক পাঠায়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সহিংসতার কারণ দেখিয়ে সংস্থাটি প্রথম মুখ ফিরিয়ে নেয়। এরপর এদের পথ ধরে অন্যরাও সে বছর নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসেনি। অথচ ২০০৮ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে এই সংস্থাটিই সব থেকে বেশি পর্যবেক্ষক পাঠিয়েছিল। ইইউ ‘না’ বলার কারণে কমিশন বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আনতে জোর প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। যদিও বিষয়টি নির্ভর করছে সংশ্লিষ্ট সংস্থার ওপর। কেননা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য বিদেশিদেরই আবেদন করতে হয়। কেউ আবেদন করলে যেন সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দিয়ে এ বিষয়ে ত্বরিত ব্যবস্থা নেওয়া হয় তা ঠিক করতেই মূলত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকটি ডেকেছে কমিশন।

সূত্রমতে, সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে মাত্র ৪ জন বিদেশি পর্যবেক্ষণ করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে ৫৯৩ জন বিদেশি, ২০০১ সালে অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ২২৫ জন বিদেশি, ১৯৯৬ সালে সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ২৬৫ জন বিদেশি ও ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ৫৯ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন।

এ বিষয়ে ইসির যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবারো পর্যবেক্ষণে আসবে না বলে জানিয়েছে। তাই তাদেরসহ অন্যদের পর্যবেক্ষণে আনতে করণীয় নির্ধারণে ২৫ নভেম্বর একটি বৈঠক হবে। এতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পাসপোর্ট অধিদফতর ও ইমিগ্রেশন সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত থাকবেন।

এদিকে বিদেশি পর্যবেক্ষকের ভোট পর্যবেক্ষণে নিয়ে আসতে ইসি যতটা তৎপর তার বিপরীত ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে দেশি পর্যবেক্ষকদের ক্ষেত্রে। ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনের ক্ষেত্রে নানা বিধিনিষেধ আরোপ এমনকি গণমাধ্যমে কোনো ধরনের বক্তব্য না দেওয়ার জন্যও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে তাদের। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে গতকাল মঙ্গলবার দেশি পর্যবেক্ষকদের ডেকে এনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের নিয়মাবলি ব্রিফ করেন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন।

ভোটের দিন কোনো পর্যবেক্ষক মিডিয়ায় কোনো কথা বা মন্তব্য করতে পারবেন না বলে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, পর্যবেক্ষকদের মূর্তির মতো থাকতে হবে। ভোটকেন্দ্রের ভেতরে পর্যবেক্ষকরা মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না। কোনো ধরনের ছবি তোলা যাবে না। গোপন ভোটকক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না। ভোটকেন্দ্রের ভেতরে যাই হোক না কেন তা নিয়ে মিডিয়ায় বক্তব্য দেওয়া যাবে না। একটি ভোটকেন্দ্রে মাত্র দুটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে, একটি পুলিশের ইনচার্জ অপরটি প্রিসাইডিং অফিসার ব্যবহার করবেন।

হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে যে, নির্বাচন আর পেছানো হবে না। এবারের নির্বাচন একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নির্বাচন। বাংলাদেশের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এবারের নির্বাচনে সংসদ বহাল থাকবে, সরকার থাকছে এবং সকল রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যার ফলে এবারের নির্বাচন হবে অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। নির্বাচনে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, আনসার-ভিডিপি ও কোস্টগার্ডের সদস্যদের নিয়োগ করা হবে উল্লেখ করে ইসি সচিব বলেন, এবার প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিছু কিছু কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হবে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ১১৮টি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে আমরা নিবন্ধন দিয়েছি। প্রাথমিক পর্যায়ে আমাদের ১১৯টি পর্যবেক্ষক সংস্থা ছিল। তার মধ্যে একটি সংস্থার বিরুদ্ধে এনজিও ব্যুরো থেকে এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দফতর থেকে অভিযোগ আসায় নির্বাচন পর্যবেক্ষক নীতিমালা অনুসরণ করে সেটির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। একটি সেন্টারে অনেকগুলো সংস্থার লোক থাকবেন। পোলিং অফিসার, রিটার্নিং অফিসার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও গণমাধ্যম থাকবে। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে আপনাদের জন্য যে নীতিমালা, সেটি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবেন।

পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধিদের উদ্দেশে সচিব বলেন, প্রথমে কেন্দ্রে গিয়ে প্রিসাইডিং অফিসারকে তার পরিচয় দিতে হবে। কোনো ছবি তুলতে পারবেন না, কোনো কমেন্টস করতে পারবেন না, শুধু মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করবেন। সেই কেন্দ্রে যত সমস্যাই হোক তিনি পর্যবেক্ষণ করে একটি রিপোর্ট পেশ করবেন। পর্যবেক্ষণের সময় গোপন কক্ষে যাওয়া যাবে না, কাউকে নির্দেশনা দিতে পারবেন না, প্রিসাইডিং, পোলিং অফিসারকে কোনো পরামর্শ দিতে পারবেন না। অনেক সাংবাদিক সামনে ক্যামেরা ধরবেন, কিন্তু কথা বলতে পারবেন না। কোনো সংবাদপত্রে লাইভে কথা বলতে পারবেন না, কমেন্টস করতে পারবেন না।

উল্লেখ্য, আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৮ নভেম্বর। বাছাই ২ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ৯ ডিসেম্বর। আর প্রতীক বরাদ্দ ১০ ডিসেম্বর।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads