• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
এখনো সরেনি পোস্টার বসেছে ক্যাম্প

আগাম প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও রাজধানীর মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটি মোড়ে চোখে পড়ে আলোকসজ্জিত সরকারদলীয় নির্বাচনী ক্যাম্প। ছবিটি গতকাল রাত ৮টায় তোলা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

নির্বাচন

এখনো সরেনি পোস্টার বসেছে ক্যাম্প

  • রানা হানিফ
  • প্রকাশিত ২৩ নভেম্বর ২০১৮

নির্বাচনের আগাম প্রচারণার সময় সীমা শেষ হয়েছে গত ১৪ নভেম্বর। এই সময়ের মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণসহ যাবতীয় প্রচারণা নিজ খরচে অপসারণেরও নির্দেশ ছিল নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। নির্বাচনী আচরণবিধির অংশ হিসেবে বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে এসব প্রচারণা অপসারণ না করা হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে জরিমানাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ ছিল ইসির।

আগাম প্রচারণার যাবতীয় সামগ্রী অপসারণ শতভাগ নিশ্চিত করা যায়নি। সংশ্লিষ্টদের কাউকে দেখা যায়নি। নির্দেশের ৪ দিন পর গত ১৯ নভেম্বর রাজধানীতে পোস্টার অপসারণে বিশেষ অভিযান শুরু করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। একই সঙ্গে বিভিন্ন পৌরসভা, জেলা ও উপজেলা পরিষদসহ ইউনিয়ন পরিষদের মতো স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ। তবে আগাম প্রচারণা চালানো ব্যক্তিদের ‘খুঁজে’ না পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। এ তথ্য জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

দুই সিটি করপোরেশন নিজেদের উদ্যোগে ৯০ শতাংশ পোস্টার ও প্রচারণা অপসারণের দাবি করলেও এখনো রাজধানীতে দেখা মিলছে আগাম প্রচারণা সামগ্রী ও রাস্তা দখল করে গড়ে ওঠা ক্যাম্প। দুই সিটি করপোরেশনের নিজেদের উদ্যোগে ৯০ শতাংশ পোস্টার ও প্রচারণা অপসারণের দাবি করলেও এখনো রাজধানীতে দেখা মিলছে আগাম প্রচারণা সামগ্রী ও রাস্তা দখল করে গড়ে ওঠা ক্যাম্প।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর ঢাকা উদ্যান বেড়িবাঁধ মোড়ে রাস্তা দখল করে বসানো হয়েছে রাজনৈতিক ক্যাম্প। বাঁশের খুঁটি পুঁতে, শামিয়ানা দিয়ে ঘিরে ও ছাউনী দেওয়া এই ক্যাম্পের ওপর শোভা পাচ্ছে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকাও। অনুরূপ আরেকটি ক্যাম্প গড়ে উঠেছে মোহাম্মদপুর হাউজিং সোসাইটির ৮ নম্বর রাস্তার মোড়ে। নেতাকর্মীদের উপস্থিতি না থাকলেও এসব ক্যাম্পের মধ্যে চেয়ার-টেবিল ফেলে রাখা হয়েছে।

এদিকে নির্বাচনী প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় ঢাকা সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন কাউন্সিলরের কার্যালয় ব্যবহূত হচ্ছে অঘোষিত নির্বাচনী ক্যাম্প হিসেবে। সারা দিনই কার্যালয়গুলোয় নেতাকর্মীদের ভিড় থাকলেও সন্ধ্যার পর তা হয়ে ওঠে আরো জমজমাট। পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড ও অঞ্চল ভিত্তিক কার্যালয়গুলোও শ্রমিক সংগঠনের নামে ব্যবহূত হচ্ছে সরকারদলীয় নির্বাচনী প্রচার ক্যাম্প হিসেবে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে সারা দিনই রয়েছে নেতাকর্মীদের সমাগম। একই চিত্র দেখা যায় ৩০, ৩৩ ও ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়েও। তবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এমন কর্মী সমাগম নয় বলে দাবি ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজিবের।

এদিকে মোহাম্মদপুর টাউনহল মার্কেটের ডিএনসিসির জবাইখানার  ভেটেরিনারি পরিদর্শকের কার্যালয়টিও দখল করে আছে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কর্মীরা। একই চিত্র আসাদগেটে ডিএনসিসির পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের নির্ধারিত কার্যালয়টিও। কার্যালয়ের ভেতরে আওয়ামী লীগের দলীয় পোস্টারসহ প্রচারপত্র সাঁটানো দেখা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তর সিটি করপোরেশনের এক ভেটেরিনারি পরিদর্শক বাংলাদেশের খবরকে বলেন, জবাইখানার পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও পরিদর্শকের জন্য নির্ধারিত কার্যালয়টি অনেকটাই জোর করে দখল করে নিয়েছে স্থানীয় যুবলীগের কর্মীরা। ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মী স্থানীয় ওয়ার্ড যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকায় তিনি কার্যালয়টি নির্বাচনী ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করছেন।

তবে এমন অভিযোগের ব্যাপারে ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. নুরুল ইসলাম রতনের মুঠো ফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সিটি করপোরেশনের কার্যালয় ও রাস্তা দখল করে ক্যাম্প গড়ে তোলার পাশাপাশি এখনো রাজধানীজুড়ে রয়েছে সরকারদলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী ও রাজনৈতিক নেতাদের পোস্টার। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে প্রচারণা দেখা যায়। রাজধানীর কাকরাইলে ‘আওয়ামী লীগকে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন’ এমন প্রচারণাসহ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের শীর্ষ নেতা ও কর্মীদের পোস্টার ও ব্যানার দেখা যায়। এখনো নির্বাচনী আগাম প্রচারণার পোস্টার রয়েছে ধানমন্ডিতে।

রাস্তা ও সিটি করপোরেশনের কার্যালয় দখল করে নির্বাচনী ক্যাম্প গড়ে তোলা প্রসঙ্গে ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাজিদ আনোয়ার বলেন, এমন অভিযোগ পেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো উচ্ছেদের ব্যবস্থা করব। পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেব।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খোন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, এখনো রাজধানীর কিছু কিছু দেয়ালে পোস্টার আছে। তবে আমরা ৯০ শতাংশ পোস্টার, ব্যানার অপসারণ করেছি।

সরকারদলীয় শীর্ষ নেতাদের পোস্টার এখনো অপসারণ না করায় তাদের বিরুদ্ধে কেন আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আসলে যাদের নামে পোস্টার আছে সেগুলো যে তাদেরই প্রচারণা এমন প্রমাণ আমাদের কাছে নেই। থাকলে ব্যবস্থা নিতাম।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads