• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
পুরোনোতেই ভরসা বিএনপির

লোগো বিএনপি

নির্বাচন

পুরোনোতেই ভরসা বিএনপির

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৭ নভেম্বর ২০১৮

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়নের চিঠি বিতরন শুরু করেছে বিএনপি। দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করায় নবম সংসদ নির্বাচনের প্রায় সব প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্যরাই এবারও দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন। দশ বছর পর জাতীয় নির্বাচনের ভোটযুদ্ধে লড়তে গতকাল সোমবার দলীয় প্রার্থীদের ধানের শীষ প্রতীকের মনোনয়ন দেওয়া শুরু করেছে বিএনপি। প্রথম দিনে রংপুর, রাজশাহী, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের (আংশিক) শতাধিক আসনে দেড় শতাধিক দলীয় প্রার্থীর প্রাথমিক মনোনয়নের চিঠি দিয়েছে দলটি। এরমধ্যে কিছু আসন পুরনো মিত্র ২০ দলীয় জোট এবং নতুন মিত্র জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জন্য খালি রাখা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বাকি সব বিভাগের দলীয় ও দুই জোটের শরিকদের মনোনয়নের চিঠিও দেওয়া হবে।

আজ দুপুর সোয়া ৩ টায় দলের কারারুদ্ধ চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জন্য মনোনয়নপত্র দিয়ে আনুষ্ঠানিতার সুচনা হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম জিয়ার (বগুড়া-৬ আসন) মনোনয়নের চিঠি তুলে দেন বগুড়া জেলার সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও (বগুড়া-৭) চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুর হাতে। অতঃপর বরিশাল, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের প্রার্থীদের মধ্যে চিঠি বিতরণ করা হয়।

গতকাল সোমবার ঢাকাসহ অন্য বিভাগগুলোর মনোনয়নের চিঠি বিতরণ সম্পন্ন হবে। তিনশটি নির্বাচনী আসনের মধ্যে অর্ধ শতাধিক আসন বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ও ড.কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জন্য ছাড় দিয়ে বাকিগুলোতে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। বিএনপির চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা বিশে­ষন করে দেখা গেছে গত ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির যেসব প্রার্থী মনোনয়ন পেয়েছিলেন আগামী ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তাদেরকেই প্রার্থী করা হয়েছে। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রাপ্ত বিএনপির বেশ কিছু সাবেক এমপি এবং নেতা মৃত্যুবরণ করেছেন। এমন প্রায় ২৫ জন নেতার আসনে এবার নতুন মুখকে মনোনয়ন দিচ্ছে বিএনপি। এরমধ্যে কিছু আসনে মৃত্যুবরণকারী নেতাদের স্ত্রী ও সন্তান, কিছু দলীয় নেতা এবং কিছু জোটের নেতাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এছাড়া কোন কোন নেতা বয়োবৃদ্ধ হয়ে চলৎশক্তিহীন হয়ে পড়েছেন বা মামলায় দণ্ডিত অথবা দুদকের জটিলতার কারণে মনোনয়ন পাননি। তাদের স্থানে নতুন মুখ রাখা হয়েছে। এসব অনিবার্য কারণে অন্তত অর্ধশত আসনে নতুন মুখ মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। গত নির্বাচনের প্রার্থীদেরকেই মনোনয়ন দেয়াই দলের তর“নদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। আজ রাতে গুলশান অফিসের সামনে বিক্ষোভও হয়েছে।

এই বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বলছেন, বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে তারা নবম সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদেরকে মনোনয়ন দিয়েছেন। তিনি জেলে যাওয়ার আগেই শতাধিক আসনে প্রার্থী চুড়ান্ত করে যান। তার নির্দেশেই সংস্কারপন্থিদের দলে ফিরিয়ে নিয়ে তাদেরকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। অনেক আসনে পুরানোদের চেয়ে যোগ্য জনপ্রিয় প্রার্থী থাকলেও তাদের মনোনয়ন না দিয়ে আগের ২০০৮ সালের তালিকা ধরে প্রার্থী করা হয়েছে।এমনকি অন্যের সাহায্য নিয়ে চলতে হয় এমন বয়স্ক বেশ কয়েকজন নেতাকেও মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। প্রায় প্রতি আসনেই একাধিক বিকল্প প্রার্থী প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যে নির্বাচন করছে বিএনপি। গ্রেফতার জেল জুলুম মামলা চলছে অব্যাহতভাবে। গ্রেফতার হচ্ছেন প্রার্থীরা। কয়েকজন প্রার্থী এখনো কারাগারে।

এই অবস্থায় বিএনপি সরকারী প্রশাসন, নির্বাচন কমিশনসহ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না। তারা মনে করছে তাদের প্রার্থীদের নানা অজুহাতে প্রার্থিতা বাতিল করে দেয়া হতে পারে। এজন্য সুরক্ষার ব্যবস্থা নিয়েছে বিএনপি। তারা প্রায় প্রতিটি আসনে একের অধিক প্রার্থী দিয়েছে। যাতে কোনও কারণে একজনের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে গেলে অন্যজন নির্বাচনে টিকে থাকতে পারে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, প্রায় প্রতিটি আসনেই একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হচ্ছে। দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ছাড়া প্রায় প্রতিটি সংসদীয় আসনে আমরা দুজনকে মনোনয়নের চিঠি দিচ্ছি। যাতে কোনও কারণে একজনের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে গেলে অন্যজন নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পান।

২০ দলকে ৪০ ঐক্যফ্রন্টকে ২০ বিএনপির পুরানো সঙ্গী ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের সর্বোচ্চ ৫৫-৬০টি আসনে ছাড় দেবে বিএনপি। এর মধ্যে ২০ দলীয় জোটের শরিকদের৩৮-৪২টি ও ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের ১৫-২০ টি আসন দেয়া হবে। এনিয়ে আজও বৈঠক হয়েছে। এখনো চলছে দরকষাকষি। ড.কামাল হোসেন আজ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, পিঠা ভাগ করতে গেলেও টানাটানি করতে হয়। এই কাজ একটা চ্যালেঞ্জ। আমি নিজেও ভাবতে পারিনি, আমাদের এই জোট এত দ্রুত গঠন করা যাবে। আপনারা অবশ্যই বোঝেন যে, যেকোনো জায়গায় যেকোনো সমাজে কিছু কাড়াকাড়ি হবে। ভাগ করা মানে কী? কেউ পাবে কেউ পাবে না। কাজগুলো কঠিন। কিন্তু কাজগুলো এগিয়ে নিতে হবে। বিএনপি নেতারা বলছেন, ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে আসন বন্টন চুড়ান্ত হবে। তাড়াহুড়োর কিছু নেই।

জানা গেছে, জামায়াত ইসলামীকে-২৮, এলডিপিকে-৪, বিজেপি-১, এনপিপি-১, কল্যাণ পার্টি-১, খেলাফত মজলিস-১, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম-২ এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ২০ আসনে ছাড় দেয়া হতে পারে। তবে আসন ভাগাভাগি এটাই চূড়ান্ত নয়। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পুর্ব পর্যন্ত এ নিয়ে ২০ দলীয় জোটের শরীক ও ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আরো আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির এক নেতা।

শুরুতেই বিদ্রোহ, সান্ট’র চিঠি প্রত্যাখ্যান একই আসনে একাধিক মনোনীত প্রার্থী থাকায় শুরুতেই বিদ্রোহ দেখা দিয়েছে বিএনপিতে। দলের মনোনীত প্রার্থী তালিকায় অধিকাংশ আসনেই বিকল্প হিসেবে একাধিক জনের নাম রেখেছে দলটি। মনোনয়ন বোর্ডের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কেউ কেউ। ফলে চিঠি বিতরণের শুরুতেই বিএনপিতে দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলা। এরইমধ্যে কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাখ্যান করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন। মনোনীত প্রার্থীরা গুলশান অফিসের ২য় তলা থেকে মনোনয়ন বোর্ডের কাছ থেকে মনোনয়নের চিঠি নিচ্ছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads