• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
প্রার্থীজটের সমাধান ভোটের আগের সপ্তাহে

প্রতীকী ছবি

নির্বাচন

প্রার্থীজটের সমাধান ভোটের আগের সপ্তাহে

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮

আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ভোটের আগের সপ্তাহে। মহাজোটের অন্যতম শরিক দল জাতীয় পার্টির (জাপা) উন্মুক্ত আসনের প্রার্থীদের বিষয়েও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ১৪ দলের শরিকদের যেসব প্রার্থী এখনো স্বতন্ত্র হিসেবে মাঠে আছেন, তাদের বিষয়েও সিদ্ধান্ত হবে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে।

সূত্র জানায়, মহাজোটের প্রার্থী নিয়ে অনেক সংসদীয় আসনে ‘জট’ সৃষ্টি হয়েছে। মহাজোটের বাইরে সারা দেশে জাপার প্রায় দেড়শ আসনে প্রার্থী আছেন। এসব আসনকে জাপা ‘উন্মুক্ত’ দাবি করলেও সেগুলোতে আওয়ামী লীগ, ১৪ দল ও মহাজোটের শরিক অন্য দলের প্রার্থী আছেন। প্রার্থী জটিলতা আছে ১৪-দলীয় জোট ও মহাজোটের শরিক যুক্তফ্রন্টেও। এ দুই জোটের শরিকদের ১৬টি আসনে এবার ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। শরিকরা সমঝোতার বাইরে আরো অনেক আসনে নিজ দলের প্রতীকে প্রার্থী রেখেছেন। এ নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র জানায়, বিভিন্ন আসনে জাপাসহ অন্যান্য দলের প্রার্থী রেখে দেওয়াটা এবারের নির্বাচনে বিশেষ কৌশল। গতবারের মতো এবার যাতে কোনো আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন না হয়, সেজন্যই এ কৌশল। বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্ট কোনো কারণে সরে দাঁড়ালে উন্মুক্ত থাকা আসনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে। বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকছে কি না, ৩০ ডিসেম্বরের আগের সপ্তাহে তা স্পষ্ট হবে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা। বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে থাকলে উন্মুক্ত আসনগুলোয় একজনকে রেখে বাকিদের নিষ্ক্রিয় করে রাখা হবে।

শরিকদের প্রার্থীর কারণে কোনো আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পরাজয়ের আশঙ্কা দেখা দিলে সমঝোতার ভিত্তিতে সেই প্রার্থীকে বসিয়ে দেওয়া হবে। সর্বশেষ পরিস্থিতি অনুযায়ী নির্বাচনের আগের সপ্তাহে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে। তবে যেসব আসনে আওয়ামী লীগ ও জাপার একাধিক প্রার্থী আছেন, সেখানে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চলছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই এর সমাধান চায় আওয়ামী লীগ।

এ প্রসঙ্গে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক গতকাল শনিবার বলেন, ‘আওয়ামী লীগে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। কিছু প্রার্থী আছেন, যাদেরকে ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। তাদেরকে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করতে হবে। না হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

দলীয় সূত্র জানায়, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের যে হুশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, এরও চূড়ান্ত বাস্তবায়ন দেখা যাবে ভোটের আগের সপ্তাহে। এ বিষয়ে দল কঠোর অবস্থানে আছে। এর অংশ হিসেবে গতকাল কুড়িগ্রামের উলিপুরের আওয়ামী লীগ সভাপতি মতি শিউলীকে সাময়িকভাবে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, কুড়িগ্রাম-৩ নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়া।

সূত্র মতে, এবারের নির্বাচনে এখনো আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন অন্তত ১৮ জন। সারা দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে দলটির অন্তত ৯৫ জনের মতো বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। এরপর নির্বাচন কমিশনের যাচাই-বাছাইয়ে বেশ কয়েকজন বাদ পড়েন। দলের নির্দেশ পেয়ে এদের অনেকে প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিল করেননি। এ ছাড়া কেউ কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারও করেন। এরপরও মাঠে দলটির অন্তত অর্ধশত বিদ্রোহী প্রার্থী রয়ে যান। তাদেরকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে শেখ হাসিনা একটি খোলা চিঠি দেন। ওই চিঠির পর অনেকেই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন।

জাপা এবার ২৯টি আসন পেয়েছে। এসব আসনে নৌকার আলাদা প্রার্থী নেই। এর বাইরে ১৩২টিতে ‘উন্মুক্ত’ হিসেবে জাপার প্রার্থী আছেন। এসব আসনে হয় আওয়ামী লীগের, না হয় ১৪ দল ও মহাজোটের শরিক অন্য দলের প্রার্থী আছেন। আওয়ামী লীগ ২৫৮ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। ৪২টি ছেড়েছে ১৪-দলীয় জোট, জাপা ও যুক্তফ্রন্টকে। এসব আসনে মহাজোটের একক প্রার্থী থাকার কথা। তবে অনেক আসনে মহাজোটের একক প্রার্থী নেই বিদ্রোহী, স্বতন্ত্র ও উন্মুক্ত প্রার্থীর কারণে।

তথ্য মতে, জাপাকে ছেড়ে দেওয়া আসনেও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন। ঠাকুরগাঁও-৩, কুষ্টিয়া-১, পিরোজপুর-৩, মুন্সীগঞ্জ-৩, নারায়ণগঞ্জ-৩, চট্টগ্রাম-২ ও কক্সবাজার-২ আসনে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ আছেন। একই আসনে মহাজোটেরও একাধিক প্রার্থী আছেন। কুড়িগ্রাম-৪, কুড়িগ্রাম-১ ও বরিশাল-৩ আসনে মহাজোটের একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী থাকলেও রয়ে গেছেন দলটিরই বিদ্রোহী প্রার্থী। এগুলোর মধ্যে আছে ময়মনসিংহ-৯, মাদারীপুর-২, মানিকগঞ্জ-১, মুন্সীগঞ্জ-৩, যশোর-৫, কুমিল্লা-৩, ফরিদপুর-৪ ও গাইবান্ধা-৩।

মহাজোট থেকে মনোনয়ন পাওয়া তিনজনের বাইরে দলীয় প্রতীক মশাল নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য চারজনকে এবার প্রার্থী রেখেছে ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। মশালে ভোট করবেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনে শাহ জিকরুল আহমেদ, গাইবান্ধা-৩ আসনে এসএম খাদিমুল ইসলাম খুদি, রংপুর-২ আসনে কমারেশ চন্দ্র রায় ও বরিশাল-৬ আসন থেকে মোহাম্মদ মোহসিন।

এছাড়া মহাজোটের বাইরে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারা দলীয় প্রতীক কুলা নিয়ে ২০টি আসনে, ওয়ার্কার্স পার্টি হাতুড়ি প্রতীকে ৫টি, জাতীয় পার্টি-জেপি বাইসাইকেল প্রতীকে ৭টি, গণতন্ত্রী পার্টি কবুতর প্রতীকে ৬টি ও সাম্যবাদী দল চাকা প্রতীকে দুটি আসনে নির্বাচন করছে। ভোটের আগের সপ্তাহে এসব আসনেও সমঝোতা হওয়ার কথা রয়েছে। 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads