• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
জাপার ১৪৬ প্রার্থীরই জামানত নেই

লোগো নির্বাচন কমিশন ও জাতীয় পার্টি

নির্বাচন

তালিকায় এরশাদ ও রওশন

জাপার ১৪৬ প্রার্থীরই জামানত নেই

  • কামাল মোশারেফ
  • প্রকাশিত ০৩ জানুয়ারি ২০১৯

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ১৪৭ উন্মুক্ত প্রার্থীর মধ্যে ১৪৬ জনই জামানত হারিয়েছেন। এদের মধ্যে বর্তমান বিরোধীদলীয় হুইপ ও সংসদ সদস্যসহ দলের প্রভাবশালী নেতারা রয়েছেন। ঢাকা ও ময়মনসিংহে দুই আসনে নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে এই তালিকায় পড়েছেন দলের চেয়ারম্যান ও সিনিয়র কো-চেয়ারম্যানও। 

এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে জাতীয় পার্টি ২৪টি আসনে প্রার্থী দিলেও সেখানেও মধ্যে দুজন প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে। একটি আসনে ফলাফল স্থগিত রয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি একটি উন্মুক্ত আসনে বরিশাল-৩ আসনে গোলাম কিবরিয়া টিপু জয়লাভ করেছেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল হিসেবে জাতীয় পার্টি প্রথম ২৯টি আসন পায়। তবে শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টিকে ২৪ আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। এই আসনগুলোয় জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক লাঙ্গল নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আসনগুলোয় আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থী দেয়নি। এই ২৪টি আসনের মধ্যে জাতীয় পার্টির দুটি আসনে ভরাডুবি হয়েছে। বগুড়া-৬ আসন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেড় লাখেরও বেশি ভোটে মহাজোটের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম ওমরকে হারিয়েছেন। মির্জা ফখরুল পেয়েছেন দুই লাখ পাঁচ হাজার ৯৮৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লাঙ্গল প্রতীকের নূরুল ইসলাম ওমর পেয়েছেন ৩৯ হাজার ৯৬১ ভোট। সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ইয়াহহিয়া চৌধুরী জামানত হারিয়েছেন। এই আসনে গণফোরামের মোকাব্বির খান (উদীয়মান সূর্য) ৬৯ হাজার ৪২০ ভোট নির্বাচিত হয়েছেন। নিকটতম স্বতন্ত্র মুহিবুর রহমান ৩০ হাজার ৪৪৯ ভোট। আর লাঙ্গল প্রতীকে মহাজোট প্রার্থী ইয়াহহিয়া চৌধুরী ১৮ হাজার ৩২ ভোট পেয়েছেন। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের তিনটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে এখানে জাতীয় পার্টির অবস্থান তিন নম্বরে।

অন্যদিকে জাতীয় পার্টি ১৪৭টি আসনে লাঙ্গল প্রতীকে উন্মুক্ত প্রার্থী দিয়েছিল। উন্মুক্ত ১৪৭ আসনের মধ্যে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ঢাকা-১৭ আসন এবং ময়মনসিংহ-৭ আসন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ রয়েছেন। তবে নির্বাচনের কয়েকদিন আগে এরশাদ ঢাকা-১৭ আসন এবং রওশন এরশাদ ময়মনসিংহ-৭ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে সরে দাঁড়ান। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির উন্মুক্ত বেশ কয়েকজন প্রার্থী আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ান। তবে প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী প্রার্থিতা প্র্যাহারের কোনো সুযোগ না থাকায় ব্যালটে তাদের নাম ছিল।

নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী, প্রদত্ত ভোটের এক-অষ্টমাংশের কম ভোট পাওয়ায় জাতীয় পার্টির উন্মুক্ত ১৪৬ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, ময়মনসিংহ-৭ আসন রওশন এরশাদ, সিলেট-৫ আসনে দশম জাতীয় সংসদ নিবাচনে বিনাভোটে নির্বাচিত বিরোধীদলীয় হুইপ ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা সেলিম উদ্দিন, বরিশাল-২ আসনে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য  মো. মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা, লালমনিরহাট-১ জাতীয় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য  মেজর (অব.) খালেদ আখতার, খুলনা-১ আসনে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, সিলেট-৪ আসনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আহমেদ তাজ উদ্দিন তাজ রহমান, কুমিল্লা-২ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মো. আমীর হোসেন ভূঁইয়া, সিলেট-১ আসনে মাহবুবুর রহমান, সিলেট-৩ আসনে উছমান আলী, বরিশাল-৫ আসনে অ্যাডভোকেট একেএম মুরতজা আবেদীন, খুলনা-৫ আসনে শহীদ আলম, খুলনা-৬ আসনে শফিকুল ইসলাম মধু, পটুয়াখালী-৩ আসনে মো. সাইফুল ইসলাম, পটুয়াখালী-৪ আসনে আনোয়ার হোসেন, নোয়াখালী-১ আসন আবু নাছের ওয়াহেদ ফারুক, নোয়াখালী-২ আসন মোহাম্মদ মমিন উল্যাহ, নোয়াখালী-৩ আসন ফজলে এলাহী সোহাগ, নোয়াখালী-৪ আসন মোবারক হোসেন আজাদ, নোয়াখালী-৫ আসন মো. সাইফুল ইসলাম, নোয়াখালী-৬  বায়েজীদ, কুড়িগ্রাম-৩ আসনে ডা. আক্কাছ আলী সরকার, কুড়িগ্রাম-৪ আসনে আশরাফ-উদ-দৌলা, রংপুর-২ আসনে আসাদুজ্জামান চৌধুরী সাবলু, রংপুর-৪ আসনে মোস্তফা সেলিম বেঙ্গল, রংপুর-৫ আসনে ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীরসহ ১৪৬ জন জামানত হারিয়েছেন।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, এই নির্বাচনে আমাদের যে আসন পাওয়ার কথা ছিল তা আমরা পাইনি। আমরা ২২টি আসনে জয় পেয়েছি।

তিনি বলেন, নির্বাচনে আমাদের ওপর অনেক নির্যাতন করা হয়েছে। অনেক জায়গায় এজেন্টও থাকতে দেওয়া হয়নি। তবুও বলব- নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। কেন পাইনি, তা নিয়ে আমরা প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করব।

মহাসচিবের মতে, বিভিন্ন সময়ে তাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক ভুল হয়ে গেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ভুল হয়েছে। তিনি বলেন, রাজনীতির একটা ভুলের পাঁচ বছর ধরে মাশুল দিতে হয়। তাই নির্বাচনে আমরা যে ভুলগুলো করলাম, তার মাশুল আমাদের আরো পাঁচ বছর দিতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads