• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
পাঁচ ধাপের গড় ভোট ৩৯.৪২ শতাংশ

ছবি : সংগৃহীত

নির্বাচন

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

পাঁচ ধাপের গড় ভোট ৩৯.৪২ শতাংশ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২২ জুন ২০১৯

পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শেষ হয়েছে। এ নির্বাচনে ৪৬৯টি উপজেলায় ভোট হয়েছে। পাঁচ ধাপের নির্বাচনে গড়ে ভোট পড়েছে ৩৯ দশমিক ৪২ শতাংশ। বিপরীতে ৬০ দশমিক ৫৮ শতাংশ ভোটার নির্বাচনে ভোট দেননি। সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে চতুর্থ ধাপে। এ ধাপে ভোট পড়েছিল ৩৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। আর গত ১৮ জুন অনুষ্ঠিত শেষ ধাপের নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৩৮ দশমিক ৬২ শতাংশ।

২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৬০ দশমিক ৯৫ শতাংশ ভোটার নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন। এর আগে ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দেন ৬৮ দশমিক ৩২ শতাংশ ভোটার। নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, বিরোধী দলগুলো অংশ না নেওয়ায় এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন একতরফা ছিল। তিনি বলেন, একতরফা নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়। নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণের ক্ষেত্র তৈরিতে উপযুক্ত পরিবেশ অপরিহার্য, কিন্তু আমরা ক্রমাগত একতরফা নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি যা গণতন্ত্রের জন্য অনভিপ্রেত।

ইসি সূত্র জানায়, পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের শেষ ধাপে অর্থাৎ পঞ্চম ধাপের নির্বাচন গত ১৮ জুন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৩৮ দশমিক ৬২ শতাংশ। এর আগে গত ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৩৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। এর আগে গত ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপে ভোট পড়ে ৪৩ দশমিক ৩২ শতাংশ, গত ১৮ মার্চ অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপে ভোট পড়ে ৪১ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে ভোট পড়ে ৪১ দশমিক ৪১ শতাংশ।

উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল

পঞ্চম উপজেলা পরিষদের পাঁচ ধাপে ৪৬৯টি উপজেলার নির্বাচন হয়েছে। বিএনপিসহ প্রায় সব বিরোধী রাজনৈতিক দল এ নির্বাচন বর্জন করেছে। ফলে ৪৬৯টি উপজেলা নির্বাচনে ৩২০টি উপজেলায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। বাকি ১৪৫টি উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। এই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। বাকি তিনটি উপজেলায় জাতীয় পার্টি এবং একটিতে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জেপি প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পাঁচ ধাপে ৪৬৯টি উপজেলায় নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে ৩৩টি উপজেলায় তফসিল ঘোষণা করা হলেও কোনো ভোট নেওয়ার প্রয়োজন হয়নি। এসব উপজেলার চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান তিনটি পদে সব প্রার্থী-বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ভোট গ্রহণের প্রয়োজন হয়নি।

সূত্রে আরো জানা গেছে, পাঁচ ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ১১৫ জন চেয়ারম্যানসহ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২২৫ জন প্রার্থী বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। এদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ১১৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫০ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ৬০ জন প্রার্থী রয়েছেন। এসব প্রার্থী কোনো প্রকার ভোট ছাড়াই চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন।

প্রথম ধাপে গত ১০ মার্চ ৮১টি উপজেলায় নির্বাচন হয়। এর মধ্যে ৩টি উপজেলায় সব প্রার্থী বিনা ভোটে নির্বাচিত হন। ফলে এই উপজেলা তিনটিতে কোনো ভোটের প্রয়োজন হয়নি। উপজেলা তিনটি হলো-জামালপুর জেলার মেলান্দহ ও মাদারগঞ্জ এবং নাটোর জেলার নাটোর সদর উপজেলা। প্রথম ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ২৮ প্রার্থীর মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ১৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জন।

দ্বিতীয় ধাপে গত ১৮ মার্চ ১২২টি উপজেলায় নির্বাচন হয়। এর মধ্যে নওগাঁ সদর, পাবনা সদর, ফরিদপুর সদর, নোয়াখালীর হাতিয়া, চট্টগ্রামের মিরসরাই ও রাউজান এই ৬টি উপজেলায় সব প্রার্থী বিনা প্রতি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ফলে এসব উপজেলায় কোনো ভোট হয়নি। দ্বিতীয় ধাপে ৪৬ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ২৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১২ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১১ জন রয়েছেন।

তৃতীয় ধাপে গত ২৪ মার্চ ১২২টি উপজেলায় নির্বাচন হয়। এর মধ্যে ৬টি উপজেলায় সব প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। উপজেলা ৬টি বরিশালের গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, নরসিংদীর পলাশ, চট্টগ্রামের আনোয়ারা, মাদারীপুরের শিবচর, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ। তৃতীয় ধাপে ৫৫ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৩৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৯ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৩ জন।

চতুর্থ ধাপে গত ৩১ মার্চ ১২২ উপজেলায় নির্বাচন হয়। এর মধ্যে এই ধাপে রেকর্ড সংখ্যক ১৫টি উপজেলায় সব প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। উপজেলাগুলো হলো-ভোলা সদর, মনপুরা, চরফ্যাশন, ময়মনসিংহের গফরগাঁও, যশোরের শার্শা, কুমিল্লার লাকসাম, মনোহরগঞ্জ,  নাঙ্গলকোট, চৌদ্দগ্রাম, দেবীদ্বার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, সাভার, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ, ফেনীর পরশুরাম। চতুর্থ ধাপে মোট ৮৮ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৩৯ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২২ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৭ জন।

গত ১৮ জুন পঞ্চম উপজেলা পরিষদের পঞ্চম ও শেষ ধাপের ২২ উপজেলায় নির্বাচন হয়। এর মধ্যে ৩ উপজেলার সব প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এর মধ্যে ৫ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে, ১টি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে এবং ২টি উপজেলায় নারী ভাইস চেয়ারম্যান বিনা ভোটে নির্বাচিত হন।

বর্তমানে দেশে মোট ৪৯২টি উপজেলা রয়েছে। ১৯৮৫ সালে উপজেলা পরিষদ গঠিত হওয়ার সময় দেশে উপজেলার সংখ্যা ছিল ৪৬০টি। ১৯৮৫ ও ১৯৯০ সালে প্রথম দুই দফায় ৪৬০টি উপজেলা নির্বাচন হয়। পরর্তীতে দেশে উপজেলার সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২০০৯ সালে ৪৮১টি, ২০১৪ সালে ৪৮২টি উপজেলায় নির্বাচন হয়। চলতি বছর পাঁচ ধাপে ৪৬৯টি উপজেলার নির্বাচন হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে ১০ উপজেলায় নির্বাচন হবে। ১৩ উপজেলায় মেয়াদ শেষ না হওয়ায় পরবর্তীতে এগুলোর নির্বাচন হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads