• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
চার হাজার কোটি টাকার ইভিএম কিনবে ইসি

ছবি : সংগ‍ৃহীত

নির্বাচন

চার হাজার কোটি টাকার ইভিএম কিনবে ইসি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৮ জুলাই ২০১৯

আগামী দিনে সব নির্বাচনেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে চার হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এই অর্থে দেড় লাখ ভোটিং মেশিন কেনা হবে। প্রতিটি মেশিনের কিনতে ব্যয় হবে ২ লাখ টাকার বেশি।

জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ৮০ হাজার ইভিএম নিতে চেয়েছিল ইসি। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সে সময় এতসংখ্যক ইভিএম তৈরি করা সম্ভব হয়নি। ফলে ৩০ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে ৬টি আসনে ৫ হাজারের মতো ইভিএম দিয়ে ভোট নেওয়া হয়েছিল। এর আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও এই ভোটযন্ত্র ব্যবহার হয়েছে।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, ভোট কারচুপি, ব্যালট জালিয়াতি রোধে ভোট ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির সর্বোচ্চ প্রয়োগ করতে চায় ইসি। এ লক্ষ্যে ইভিএম কেনার জন্য চার হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি মেশিনের পেছনে ব্যয় হবে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা।

দেশে ভোট ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে ইভিএমের সূচনা করে এটিএম শামসুল ‍হুদার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন কমিশন। সে সময় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে এই ভোটযন্ত্র তৈরি করে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০১৫ সালের রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনের সময় একটি মেশিনে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। সেই মেশিনটির ত্রুটি সারাতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। ত্রুটি হওয়ার কারণও উদ্ধার করতে পারেনি। এরপর ২০১৬ সালে বুয়েটের তৈরি মেশিনগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নষ্ট করে ফেলে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশন। একই সঙ্গে নতুন এবং উন্নতমানের ইভিএম তৈরির নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান কে এম নূরুল হুদা কমিশন প্রায় ২০ গুণ বেশি দামে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে উন্নতমানের ইভিএম তৈরি করে নিচ্ছে।

এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, এই ইভিএম আগের চেয়ে উন্নতমানের। কোনোভাবেই এই ইভিএম হ্যাক করা সম্ভব নয়। এগুলো ব্যবহারের ফলে দ্রুত ফল প্রকাশ করা যাবে। একই সঙ্গে ভোটের আগের রাতে সিল মারাও বন্ধ হবে।

নতুন ইভিএম দিয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে প্রথম ভোট নিয়ে সফল হয় নির্বাচন কমিশন। এরপর অন্যান্য স্থানীয় নির্বাচন এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যবহারের পর ভবিষ্যতে সব নির্বাচনেই এই ভোটযন্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়।

এদিকে চার হাজার কোটি টাকার ইভিএম কেনার প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও এত দামি মেশিন কোথায় সংরক্ষণ করা হবে তার জন্য কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। ফলে এগুলো স্থান পাচ্ছে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে। যেখানে এই ভোটযন্ত্রগুলো সংরক্ষণের যথাযথ কোনো ব্যবস্থাই নেই।

কর্মকর্তারা বলছেন, যেকোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা, আর্দ্রতায় সংরক্ষণ করতে হয়। সেখানে ইভিএম একটি গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস। একটি ভোটিং মেশিনের দামও অনেক। সেখানে এগুলো সংরক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না করেই ক্রয় করা হচ্ছে। ফলে ভোট শেষে ইভিএমগুলো সংশ্লিষ্ট উপজেলা-জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়েই রাখা হয়েছে। সেখানে এগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ হচ্ছে না। ইভিএম সংরক্ষণের জন্য আলাদা কক্ষ দরকার। যেখানে দীর্ঘদিন রাখলেও এর কার্যক্ষমতা নষ্ট হবে না। ইভিএমের জন্য রাখা যে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে, সেখানে সংরক্ষণের বিষয়টি রাখলে ভালো হতো।

এ বিষয়ে ইসির তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শাখার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইভিএম প্রকল্প নেওয়ার সময় সংরক্ষণের বিষয়টি ভাবা হয়নি। কিন্তু দেড় লাখ ইভিএম কোথায় রাখা হবে, এই প্রশ্নটি এখন সামনে চলে এসেছে। তবে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়, এমন একটি কার্যকর উপায় খোঁজা হচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads