• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

নির্বাচন

তিন সিটি নির্বাচন

বিজয় চায় আ.লীগ

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে। গুরুত্বপূর্ণ এ তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে নানা চিন্তাভাবনা চলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। আসন্ন ওই নির্বাচন নিয়ে দলের শীর্ষ পর্যায়ে বিভিন্ন তৎপরতা শুরু হয়েছে। নানা দিক বিবেচনায় নিয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে আয়োজনের পক্ষে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকে। নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা ও কৌশল শিগগির অনুষ্ঠেয় দলীয় শীর্ষ বৈঠকে চূড়ান্ত করা হবে।

ডিসেম্বর মাসের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে, এমনটি ধরে নিয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রস্তুতি ও কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিসহ দলটির নেতৃত্বের জোট ও ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নেবে, ভোটের মাঠ ফাঁকা থাকবে না- এসব বিষয়ও বিবেচনায় রেখে এগিয়ে যাচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা। মেয়র পদে প্রার্থী বাছাইয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে জরিপ চলছে।

জরিপের ফলের ভিত্তিতে জনপ্রিয়দের চলতি মাসের শেষের দিকে ‘সবুজ সংকেত’ দেওয়া হতে পারে। মৌখিকভাবে একাধিকজন দলের পক্ষ থেকে ‘সবুজ সংকেত’ পেলেও ভোটের মাঠে দক্ষতা ও ভোটারদের আকৃষ্ট করার ক্ষমতা ইত্যাদি বিবেচনায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই চূড়ান্ত মেয়র প্রার্থীর নাম জানানো হবে বলে বাংলাদেশের খবরকে জানান দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র।

কেন্দ্রীয় পর্যায়ের কয়েক নেতা জানান, জাতির জনক ও সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষের আয়োজন আগামী বছরের মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে। বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগেভাগে চলতি বছরের ডিসেম্বরে দুই ঢাকা সিটির নির্বাচন শেষ করার পক্ষে আওয়ামী লীগের অনেকে। কোনো কারণে দলের আগামী কেন্দ্রীয় সম্মেলন অক্টোবর মাসে আয়োজন করা না গেলে ডিসেম্বরের নির্বাচনের কারণে দলীয় ব্যস্ততার কথা নেতাকর্মীদের কাছে তুলে ধরা যাবে। ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের সময় হলেও মেয়াদ শেষ না হওয়ার কারণে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের বিষয়টি ডিসেম্বরের মধ্যে করার বিষয়টি আওয়ামী লীগের বিবেচনায় খুব বেশি আসছে না।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটির নির্বাচন হতে পারে আগামী বছরের এপ্রিলে। তবে সেই লক্ষ্যে এখনই দলের প্রস্তুতি চলছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপন করার বছর নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হোক, এমনটা ক্ষমতাসীনরা চান না। রাষ্ট্রের স্থপতি ও বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপন হবে সার্বজনীনভাবে, সে লক্ষ্যেই প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অনেকে ডিসেম্বরে দুই ঢাকা সিটির নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে থাকলেও ওই সময়ে নির্বাচন নিয়ে দলের কারো কারো দ্বিমত বা ভিন্নমতও আছে। তারা মনে করেন, চলতি বছর দুই ঢাকা সিটিতে ডেঙ্গুর প্রকোপ, এতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতার বিষয়টি এবার খুব আলোচিত ও সমালোচিত। ডেঙ্গুর প্রকোপ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকতে পারে। এ অবস্থায় ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ভোটবাক্সে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে শীর্ষ নেতাদের আশঙ্কা।

নির্বাচন আয়োজনের সময় নিয়ে সরকার ও সরকারি দলে একাধিক মত থাকলেও দলীয় প্রস্তুতি ডিসেম্বর মাসকে লক্ষ্য করে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের কয়েক নেতার। তারা বলেন, নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে জনপ্রিয় মুখ ও সামাজিকভাবে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার পরিকল্পনা করছে দল। বিশেষ করে মেয়র প্রার্থী বাছাইয়ে জনপ্রিয়তা ও ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্যতাসহ বেশকিছু বিষয়কে বিবেচনার কথা ভাবছে আওয়ামী লীগ। তাই তিন সিটিতেই মেয়র পদে আসতে পারে নতুন মুখ। কাউন্সিলর পদেও বেশিরভাগ মনোনয়ন দেওয়া হবে নতুন ও জনপ্রিয়দের। সিটি করপোরেশনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে যারা দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে মূল্যায়ন করেননি, তাদেরকে এবার বা সামনের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে না।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে দলীয় ভাবনা প্রসঙ্গে বলেন, আমরা কিছুদিন পর ফরম বিক্রি শুরু করব। যারা ফরম কিনবেন, তাদের মধ্য থেকে মনোনয়নসংক্রান্ত কেন্দ্রীয়ভাবে যে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে, তারা সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচন করবেন।

দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই প্রার্থিতা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে। যে প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা দলের ও নেতাকর্মীদের কাছে থাকবে, যার বিরুদ্ধে কোনো অনৈতিক অভিযোগ থাকবে না, এমন প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

দলের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, মেয়রদের কাজ বেশি, কথা কম বলতে হবে। তারা বেশি কথা বলে বিভিন্নভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছেন। নানা সমস্যায় জর্জরিত ঢাকা মহানগরীর মানুষদের অনেক প্রশ্নই থাকতে পারে। তাই তাদের প্রশ্ন সামনে রেখেই আগামীতে মেয়র নির্বাচনের প্রার্থী বিবেচনা করা হবে।

সূত্রমতে, নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটির নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বরে একসঙ্গে করার পরিকল্পনা নেয়। এ প্রসঙ্গে ইসির কর্মকর্তারা বক্তব্যেও ইঙ্গিত দেন। তবে ডিসেম্বরে নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে ইসি এখনো কোনো সংকেত পায়নি। সরকারের সবুজ সংকেত পেলে যেকোনো সময় নির্বাচন আয়োজন করার প্রস্তুতি আছে বলে মনে করছে ইসি। ২০১৫ সালে ওই তিন সিটিতে একই দিনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রথম বৈঠক হয়েছিল ২০১৫ সালের ১৪ মে এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বৈঠক হয় একই বছরের ১৭ মে। মেয়াদ পূর্ণ না হওয়ায় চট্টগ্রাম সিটির নির্বাচিত মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের দায়িত্ব নিতে দেরি হয়। ফলে ওই সিটি করপোরেশনের প্রথম বৈঠকও দেরিতে অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছরের ৬ আগস্ট বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এ হিসাবে চলতি বছরের ১৭ নভেম্বর ঢাকা উত্তর ও ২০ নভেম্বর ঢাকা দক্ষিণ এবং আগামী বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের উপযোগী হবে। সিটি করপোরেশন আইনমতে, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads