• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
ব্যয় বাড়লেও বড় প্রভাব নেই সার্বিক প্রক্রিয়ায়

সংগৃহীত ছবি

নির্বাচন

ব্যয় বাড়লেও বড় প্রভাব নেই সার্বিক প্রক্রিয়ায়

  • এ এইচ এম ফারুক
  • প্রকাশিত ২১ জানুয়ারি ২০২০

ঢাকার দুই সিটির ভোট গ্রহণের নতুন দিন ধার্য হওয়ায় ব্যয় বাড়বে প্রার্থীদের এবং নির্বাচনী খরচে। তবে বড় ধরনের কোনো প্রভাব পড়ছে না নির্বাচন পরিচালনায়।   

প্রার্থীদের কিছুটা ব্যয় বাড়ার সম্ভাবনা থাকলেও ইসির এক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ার তেমন সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) কর্মকর্তারা। তবে নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থশালী প্রার্থীরা এই সুযোগকে কাজে লাগাবেন। আর যাদের টাকা সীমিত তারা নির্বাচনী ব্যয় সমন্বয়ে খাবি খাবে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

৩০ জানুয়ারি একই দিন সরস্বতী পূজা এবং ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ হওয়ায় বহু বিতর্কের পর শনিবার রাতে ২ দিন পিছিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। আন্দোলনের মুখে তারিখ পিছিয়ে দেওয়ার এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন দুই সিটির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকরা। তবে প্রার্থীদের ব্যয় বাড়ার সম্ভাবনায় প্রার্থীদের একটি অংশ ইসির তফসিল ঘোষণায় ভোট গ্রহণের তারিখকে ‘অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত’ বলে মনে করছেন।

নাম প্রকাশ না করে একাধিক প্রার্থী বাংলাদেশের খবরকে বলেছেন, পূজার বিষয়টি আগে থেকেই ইসির বিবেচনায় রাখা উচিত ছিল। তাদের এমন সিদ্ধান্তের পর ভোটের তারিখ পবির্তন অনিবার্য হয়ে পড়ে। তারিখ পরিবর্তনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও নির্বাচনী ব্যয় বাড়ার সম্ভাবনায় ক্ষোভ বিরাজ করছে প্রার্থী ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অনেকের মাঝে।

ব্যয় বৃদ্ধি করার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার না করলেও সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়নি কেউই। তবে অধিকাংশ প্রার্থী বলছেন তারা ব্যয়ের যে বাজেট ধরেছেন এটাকে বাকি দিনগুলোতে সমন্বয় করে নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।

বিএনপি মনোনীত ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়রপ্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, এটা নির্বাচন কমিশনের আগেই ভাবা উচিৎ ছিল। সনাতনধর্মাবলম্বীরা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদের ভোট এবং পূজা দুটোই পালনের অধিকার রয়েছে।

তিনি তারিখ পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, কিছু ক্ষেত্রে ব্যয় বাড়বে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের আর নতুন করে পোস্টার করা হচ্ছে না। যা করা হয়েছে তা দিয়েই চালানো হবে। নির্বাচনী গণসংযোগে আমাদের স্থানীয় নেতাকর্মীরাই স্বতঃস্ফুর্তভাবে অংশ নেন। এক্ষত্রেও আমাদের ব্যয় তেমন বাড়বে না।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ সমন্বয়ক তারেক সিকদার বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আমাদের পোস্টার-ব্যানার-ফেস্টুন কোথাও ৩০ তারিখ উল্লেখ করা হয়নি। শুধু কিছু লিফলেট পরীক্ষামূলক আনা হয়েছিল, যেখানে ৩০ তারিখ ছিল।

তিনি বলেন, তারিখ পরিবর্তন করায় প্রেসে গিয়ে বাকিগুলোর তারিখ ঠিক করে নিয়েছি। আর নির্বাচনী গান আমাদের নিজস্ব শিল্পীরা করেছেন। সেখানেও তারা সমন্বয় করছেন। নির্বাচন পরিচালনায় কিছুটা ব্যয় হয়তো বাড়বে, তবে সব মিলিয়ে আমাদের নির্বাচনী ব্যয়ে তেমন চাপ পড়বে না। কমিশন নির্ধারিত নির্বাচনী ব্যয়ের মধ্যেই থাকবো আমরা।

দক্ষিণের ৭২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী খায়রুজ্জামান খায়রুল বলেন, ২ দিন পেছানোয় কিছুটা ব্যয় বাড়বে। তবে সেটা কত হতে পারে তা নির্দিষ্ট করে বলেননি।

একই সিটির ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী আনিসুর রহমান সরকার বলেন, ব্যয় তেমন বাড়বে না। যেহেতু এটা সবাই জানে তাই নতুন করে পোস্টারও করা লাগবে না।

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ২ দিন পেছানোতে প্রচারেরও দুই দিন বেশি সুযোগ পাবেন প্রার্থীরা। এ দুদিন আর্থিকভাবে সবল প্রার্থীদের জন্য বাড়তি সুযোগ এনে দিবে অর্থ ব্যয়ের। অর্থশালী প্রার্থীরা এই সুযোগকে কাজে লাগবেন। আর অপরদিকে যাদের টাকা সীমিত তারা নির্বাচনী ব্যয় সমন্বয়ে হিমসীম খাবে।

এদিকে ভোটের তারিখ পরিবর্তনে ইসির ব্যয় তেমন বাড়বে না বলে জানিয়েছেন ইসির পরিচালক (জনসংযোগ) মোহা. ইসরাইল হোসন। তিনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ভোট হবে ইলেট্রনিক ভোটিং মেসিনে (ইভিএম)। সুতরাং এ সংক্রান্ত কোনো খরচও নেই। সব মিলিয়ে ইসির খরচে চাপ পড়বে না বলে মনে করেন তিনি।

তবে ভোটের তারিখ পেছানোর কারণে নির্বাচনী ব্যয় একটু বাড়বে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাশেম।

তিনি বলেন, আমাদের ১ হাজার ৩১৮টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। কেন্দ্রগুলোতে ২৫ হাজার প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা কাজ করবেন। এই ২৫ হাজার লোককে নতুন করে আবার নিয়োগপত্র দিতে হবে। এছাড়াও প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে চিঠি দিতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যয় কিছুটা বাড়বে।

প্রার্থীদের ব্যয় সম্পর্কে আবুল কাসেম বলেন, এক্ষেত্রে প্রার্থীদের ব্যয় বাড়ার কোনো সুযোগ নেই। সবাই জেনে গেছে ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন। সুতরাং প্রার্থীদের ব্যয় বাড়বে বলে আমি মনে করি না।

এদিকে দক্ষিণ সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেনের পক্ষে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মতিউর রহমান জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের ব্যয় বাড়বে না। তবে প্রার্থীদের কিছু ব্যয় বাড়তে পারে।

উল্লেখ্য, দুই সিটিতে মেয়র পদে প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা, ২ লাখ টাকা ব্যক্তিগত ব্যয়, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থীদের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের নির্বাচনী ব্যয় ৬ লাখ টাকা, ব্যক্তিগত ব্যয় ৫০ হাজার এবং সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের ক্ষেত্রে ১ লাখ থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত ভোটার অনুপাতে নির্বাচনী ব্যয় ধার্য করেছে কমিশন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads