• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
সড়কে শৃঙ্খলা আর কতদূর

ঘাতক চাকায় পিষ্ট হয়ে দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর বাস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সম্পাদকীয়

দুই বাসের অসুস্থ প্রতিযোগিতা

সড়কে শৃঙ্খলা আর কতদূর

  • প্রকাশিত ৩১ জুলাই ২০১৮

ঘাতক চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারাল দুই শিক্ষার্থী। স্বজনদের আশা-আকাঙ্ক্ষার শত স্বপ্নের সমাধি হচ্ছে এভাবে প্রতিদিন দেশের কোনো না কোনো সড়কে। চালকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় অকালে ঝরে যাচ্ছে একের পর এক প্রাণ। গত রোববার রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কেও এই অসুস্থ প্রতিযোগিতার নৃশংস মহড়ায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এই মর্মন্তুদ ঘটনা আবারো প্রমাণ করল, ঢাকা মহানগরীর সড়ক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলার অভাব অত্যন্ত প্রকট। একটি দেশের রাজধানীর ক্ষেত্রে এই অব্যবস্থাপনা দিনের পর দিন চলতে পারে না।

মা-বাবার তিলে তিলে গড়ে তোলা স্বপ্ন— দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানমকে হারিয়ে স্বজনদের মধ্যে চলছে এখন শোকের মাতম। শোকের এমন আর্তনাদ প্রতিদিন দেশের কোনো না কোনো পরিবারে হয়ে থাকে। এ যেন দেশের নৈমিত্তিক দুর্যোগ। এই দুর্যোগ মোকাবেলায় আইন আছে, কিন্তু প্রতিকার নেই। কোথাও যেন জিম্মি হয়ে আছি আমরা। এ দুর্যোগ প্রাকৃতিক নয়, মানবসৃষ্ট। চাইলে কম সময়েও এর প্রতিকার করা যায়। কিন্তু কোথায় যেন আটকে আছে আমাদের আইন প্রয়োগের শক্তি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এই অব্যবস্থাপনা গা-সওয়া হয়ে গেছে। তাদের বিবেক যেন হয়ে পড়েছে বোধহীন! সড়কে মৃত্যুর মিছিল অথচ প্রতিকারে আইন কঠোর হচ্ছে না কিছুতেই। একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য এসব ঘটনা লজ্জারও। সড়ক দুর্ঘটনায় আর কত প্রাণ গেলে আমাদের বিবেক সাড়া দেবে? এ প্রশ্নেরও নেই কোনো উত্তর।

প্রতিদিন গড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৪ জন নিহত হয়। আর এই সংখ্যা বিভিন্ন দুর্ঘটনায় নিহতদের সংখ্যার মধ্যে সর্বাধিক। তথ্যটি সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি)। তাদের জরিপে দেখা যায়, প্রতিবছর বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ হাজার ১৬৬ জন নিহত হয়। তাতে প্রতিদিন গড়ে নিহতের সংখ্যা ৬৪ জন। আরো এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, সড়ক দুর্ঘটনার ফলে বছরে জিডিপির শতকরা দেড় ভাগ নষ্ট হয়, যার পরিমাণ পাঁচ হাজার কোটি টাকা। গত ১৫ বছরে সড়কে প্রাণ হারিয়েছে ৫৫ হাজার মানুষ।

এসব কারণে সড়ক দুর্ঘটনা এখন অন্যতম জাতীয় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এই সমস্যা থেকে মানুষকে মুক্ত রাখার সার্বিক দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন— চালকদের অযোগ্যতা, সড়ক ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি, অপরাধ প্রতিরোধে আইনের শিথিলতা ছাড়াও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এখন সড়ক দুর্ঘটনার কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের বক্তব্য অত্যন্ত পরিষ্কার, আমরা মনে করি— একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র বিনির্মাণে সুস্থ ও সুন্দর জাতি গঠনে মানবসৃষ্ট এই দুর্যোগ থেকে সবাইকে রেহাই পেতে হবে। কারণ মহানগরবাসী চান নিরাপদ সড়ক। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণই এখন সময়ের অন্যতম দাবি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads